চালের বাজারে অস্থিরতা: কার স্বার্থে এই অনিয়ম?

নাগরিক সংবাদ
০৫ আগস্ট, ২০২৫, 10:19 PM

চালের বাজারে অস্থিরতা: কার স্বার্থে এই অনিয়ম?
দেশের চালের বাজার যেন এক অনিয়ন্ত্রিত পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ধান ও চালের সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও দাম যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তা শুধু উদ্বেগজনক নয়-বরং স্পষ্টভাবে অনৈতিক বাজার ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।
অথচ সরকারি হিসাবেই দেশে বর্তমানে চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ১৭.৬৪ লাখ টন মজুত রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি। উৎপাদন কমেছে বটে, তবে তা বিপর্যয়ের পর্যায়ে নয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়-এই অস্থিরতার মূল কারণ কী? বিশ্লেষণে উঠে আসছে, বাজারে একদিকে করপোরেট কোম্পানির অগ্রিম অর্থ প্রদান করে ধান কিনে নেওয়ার প্রবণতা, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি মূলত এই সংকটকে উসকে দিচ্ছে।
করপোরেটদের আগাম কেনাকাটায় মিল মালিকরা ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে; ফলে সরাসরি বাজারে চালের সরবরাহে প্রভাব পড়ছে। এ পরিস্থিতি অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে, যারা মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। অন্যদিকে, চালের বাজারে এই অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। এমনিতেই মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করছে। সবজি ও মাছের দাম কমে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল বাজারে।
কিন্তু হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধির ফলে আবারও চাপ বাড়ছে ভোক্তাদের ওপর। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন যারা প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে দুঃসহ। বাজারে এই অস্থিরতার কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ঘটনাও ঘটছে, যা স্পষ্টতই মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এখনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, খাদ্যশস্য সরবরাহ ও বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এই সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে।
যেখানে প্রতিবেশী অনেক দেশ চাল রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, সেখানে আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র। শুধু আমদানি নির্ভরতা নয়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে নৈরাজ্য। যদি যথাসময়ে কার্যকর নজরদারি ও নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এ অস্থিরতা শুধু চালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না-পুরো খাদ্য ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই প্রয়োজন বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক মনিটরিং জোরদার করতে হবে মাঠপর্যায়ে।
করপোরেটদের অনিয়ন্ত্রিত আধিপত্য রোধে নীতিগত হস্তক্ষেপ জরুরি। একই সঙ্গে চালের বাজারে সুনির্দিষ্ট দামের সীমা নির্ধারণ ও প্রয়োগে কঠোরতা দেখাতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে দেয়, বাজারের লাগামহীনতা কখনোই সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে না। তাই এখনই সময়, কঠোর সিদ্ধান্ত ও দ্রুত পদক্ষেপের-নইলে চালের দামে এই অস্থিরতা হয়ে উঠবে আরেকটি নিত্যদিনের ট্র্যাজেডি।
নাগরিক সংবাদ
০৫ আগস্ট, ২০২৫, 10:19 PM

দেশের চালের বাজার যেন এক অনিয়ন্ত্রিত পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ধান ও চালের সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও দাম যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তা শুধু উদ্বেগজনক নয়-বরং স্পষ্টভাবে অনৈতিক বাজার ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দেয়।
অথচ সরকারি হিসাবেই দেশে বর্তমানে চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ১৭.৬৪ লাখ টন মজুত রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি। উৎপাদন কমেছে বটে, তবে তা বিপর্যয়ের পর্যায়ে নয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়-এই অস্থিরতার মূল কারণ কী? বিশ্লেষণে উঠে আসছে, বাজারে একদিকে করপোরেট কোম্পানির অগ্রিম অর্থ প্রদান করে ধান কিনে নেওয়ার প্রবণতা, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক নজরদারির ঘাটতি মূলত এই সংকটকে উসকে দিচ্ছে।
করপোরেটদের আগাম কেনাকাটায় মিল মালিকরা ধান সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে; ফলে সরাসরি বাজারে চালের সরবরাহে প্রভাব পড়ছে। এ পরিস্থিতি অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে, যারা মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। অন্যদিকে, চালের বাজারে এই অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। এমনিতেই মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করছে। সবজি ও মাছের দাম কমে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল বাজারে।
কিন্তু হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধির ফলে আবারও চাপ বাড়ছে ভোক্তাদের ওপর। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন যারা প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে দুঃসহ। বাজারে এই অস্থিরতার কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ঘটনাও ঘটছে, যা স্পষ্টতই মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এখনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, খাদ্যশস্য সরবরাহ ও বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এই সংকটকে দীর্ঘায়িত করছে।
যেখানে প্রতিবেশী অনেক দেশ চাল রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, সেখানে আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র। শুধু আমদানি নির্ভরতা নয়, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে নৈরাজ্য। যদি যথাসময়ে কার্যকর নজরদারি ও নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এ অস্থিরতা শুধু চালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না-পুরো খাদ্য ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই প্রয়োজন বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক মনিটরিং জোরদার করতে হবে মাঠপর্যায়ে।
করপোরেটদের অনিয়ন্ত্রিত আধিপত্য রোধে নীতিগত হস্তক্ষেপ জরুরি। একই সঙ্গে চালের বাজারে সুনির্দিষ্ট দামের সীমা নির্ধারণ ও প্রয়োগে কঠোরতা দেখাতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে দেয়, বাজারের লাগামহীনতা কখনোই সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে না। তাই এখনই সময়, কঠোর সিদ্ধান্ত ও দ্রুত পদক্ষেপের-নইলে চালের দামে এই অস্থিরতা হয়ে উঠবে আরেকটি নিত্যদিনের ট্র্যাজেডি।