শিরোনামঃ
শাহবাগ অবরোধ: পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ, ৩২ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল-আটা চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না কমিউনিটি ক্লিনিক সংকট: গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ছে কেন? সেমিফাইনালও বয়কট করলো ভারত, ফাইনালে পাকিস্তান কিডনি সুস্থ রাখতে খেতে পারেন এই দুই খাবার মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিজেই নিজেকে ট্রল করলেন উর্বশী গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য: তারেক রহমান আগামী কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে : আইন উপদেষ্টা সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে

কমিউনিটি ক্লিনিক সংকট: গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ছে কেন?

#
news image

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর সেই অধিকার নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ছিল এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। দৈনিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবার স্তম্ভগুলো এখন ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

জেলার ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। নেই প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও। কোনো কোনো ক্লিনিকে গত ডিসেম্বরের পর আর কোনো ওষুধই আসেনি। ফলে রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন-এবং নিকটবর্তী জেলা বা সদর হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি করছেন। এই সংকট কেবল ওষুধেই সীমাবদ্ধ নয়। কোথাও কোথাও জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি এতই প্রকট যে রোগী আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

সেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে গেলে শুধু একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, সমগ্র জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরই আস্থাহীনতা তৈরি হয়। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ পুনরায় ঝুঁকে পড়ে ওঝা, কবিরাজ কিংবা অদক্ষ হাতুড়ে চিকিৎসকের দিকে-যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝা যায় মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের ভাষ্যে। কেউ কেউ বলছেন, এখন দিনে ৫০-৬০ জনের বদলে ১০-১২ জন রোগী আসেন। শুধু রক্তচাপ বা ওজন মেপে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।

কাউকে বলা হচ্ছে, ‘ওষুধ নেই, প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাইরে থেকে কিনে নিন।’ প্রশ্ন হলো-যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, তারা যাবে কোথায়? আরো উদ্বেগজনক হলো, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট। এতে প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, বেড়ে যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর আশঙ্কাও। একটি সময় এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই গ্রামীণ জনপদের নারীদের কাছে স্বাস্থ্যসেবার সহজ পথ ছিল। আজ তা রুদ্ধপ্রায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য যথেষ্ট আশ্বস্তকর নয়। জেলা সিভিল সার্জন স্বীকার করছেন, ওষুধের জোগান কম।

আবার বলছেন, কবে নাগাদ সমস্যা কাটবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে-ব্যবস্থাপনার এই দুর্বলতা কাদের দায়িত্বে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে দ্রুত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। জেলা পর্যায়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও তদারকি থাকতে হবে, যাতে এমন সংকট আর না ঘটে।

পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে সঠিক বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার। কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জাতীয় অর্জন, যা বিশ্বমঞ্চেও প্রশংসিত হয়েছে। এটি কেবল একটি ভবন নয়-এটি হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে রাষ্ট্রের উপস্থিতির প্রতীক। সেই প্রতীকের ভিত যখন নড়ে যায়, তখন রাষ্ট্রের দায়িত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাই দেরি না করে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে আবারও কার্যকর করার এখনই সময়।

নাগরিক সংবাদ অনলাইন

৩১ জুলাই, ২০২৫,  10:28 PM

news image
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর সেই অধিকার নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ছিল এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। দৈনিক প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবার স্তম্ভগুলো এখন ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

জেলার ২৩২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। নেই প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও। কোনো কোনো ক্লিনিকে গত ডিসেম্বরের পর আর কোনো ওষুধই আসেনি। ফলে রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন-এবং নিকটবর্তী জেলা বা সদর হাসপাতালে গিয়ে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি করছেন। এই সংকট কেবল ওষুধেই সীমাবদ্ধ নয়। কোথাও কোথাও জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি এতই প্রকট যে রোগী আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

সেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে গেলে শুধু একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, সমগ্র জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরই আস্থাহীনতা তৈরি হয়। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ পুনরায় ঝুঁকে পড়ে ওঝা, কবিরাজ কিংবা অদক্ষ হাতুড়ে চিকিৎসকের দিকে-যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝা যায় মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের ভাষ্যে। কেউ কেউ বলছেন, এখন দিনে ৫০-৬০ জনের বদলে ১০-১২ জন রোগী আসেন। শুধু রক্তচাপ বা ওজন মেপে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে।

কাউকে বলা হচ্ছে, ‘ওষুধ নেই, প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাইরে থেকে কিনে নিন।’ প্রশ্ন হলো-যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, তারা যাবে কোথায়? আরো উদ্বেগজনক হলো, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট। এতে প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, বেড়ে যাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর আশঙ্কাও। একটি সময় এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই গ্রামীণ জনপদের নারীদের কাছে স্বাস্থ্যসেবার সহজ পথ ছিল। আজ তা রুদ্ধপ্রায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য যথেষ্ট আশ্বস্তকর নয়। জেলা সিভিল সার্জন স্বীকার করছেন, ওষুধের জোগান কম।

আবার বলছেন, কবে নাগাদ সমস্যা কাটবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে-ব্যবস্থাপনার এই দুর্বলতা কাদের দায়িত্বে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে দ্রুত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। জেলা পর্যায়ে যথাযথ পরিকল্পনা ও তদারকি থাকতে হবে, যাতে এমন সংকট আর না ঘটে।

পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে সঠিক বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার। কমিউনিটি ক্লিনিক একটি জাতীয় অর্জন, যা বিশ্বমঞ্চেও প্রশংসিত হয়েছে। এটি কেবল একটি ভবন নয়-এটি হলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে রাষ্ট্রের উপস্থিতির প্রতীক। সেই প্রতীকের ভিত যখন নড়ে যায়, তখন রাষ্ট্রের দায়িত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাই দেরি না করে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে আবারও কার্যকর করার এখনই সময়।