শিরোনামঃ
শাহবাগ অবরোধ: পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ, ৩২ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল-আটা চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না কমিউনিটি ক্লিনিক সংকট: গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ছে কেন? সেমিফাইনালও বয়কট করলো ভারত, ফাইনালে পাকিস্তান কিডনি সুস্থ রাখতে খেতে পারেন এই দুই খাবার মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিজেই নিজেকে ট্রল করলেন উর্বশী গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য: তারেক রহমান আগামী কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে : আইন উপদেষ্টা সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হুন্ডি নির্ভর মাদক অর্থনীতি: রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় নীরব বিস্ফোরণ

#
news image

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় সেই জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এখন অপরাধচক্রের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নানা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক ভয়ঙ্কর মাদক বাণিজ্য, যার অর্থ লেনদেন হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরের মাটিতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে। এই পদ্ধতি শুধু অভিনব নয়, বরং নিরাপত্তার দিক থেকে তা অতি আশঙ্কাজনক।

 দেশের ভেতরে ইয়াবা, আইসসহ নানা মাদক বেচাকেনা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, কিন্তু সেই মাদকের দাম পরিশোধ হচ্ছে বিদেশে-হুন্ডির মাধ্যমে। এই অপরাধ কাঠামো এতটাই সুসংগঠিত যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বজনদের পাঠানো রেমিট্যান্স অজান্তেই ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাস, অস্ত্র ও মাদকের উৎসে পরিণত হচ্ছে। এতে করে একটি পুরো জনগোষ্ঠী নিজের অজান্তেই অপরাধের অর্থনীতির জ্বালানি সরবরাহ করে চলেছে।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের অপব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়া রোহিঙ্গারা সেখানে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি পরিবার-পরিজনের জন্য দেশে অর্থ পাঠান। কিন্তু বৈধ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুযোগ না থাকায় এই অর্থ পাঠানো হয় হুন্ডির মাধ্যমে। ক্যাম্পের ভেতরে হুন্ডি সিন্ডিকেটের এমন বিস্তার যে, সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলে এসে টাকা পৌঁছে দিয়ে ফের চলে যায় লোকজন-এমন চিত্র এখন নিয়মিত ঘটনা।

এই অর্থপ্রবাহের সুযোগ নিচ্ছে মাদক চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেশে সরাসরি লেনদেন করা মাদক কারবারিরা এখন বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। তারা মাদক ক্যাম্পে বিক্রি করলেও অর্থ গ্রহণ করছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে। বিদেশে থাকা রোহিঙ্গারা সেই অর্থ প্রদান করছেন হুন্ডির মাধ্যমে। এই অর্থ আবার দেশে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক সিন্ডিকেটের হাতে। এভাবেই গড়ে উঠেছে এক অন্তর্জালের মতো ছড়ানো বৈশ্বিক মাদক অর্থনীতি, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।

এমন পরিস্থিতি শুধু একটি সীমান্তীয় এলাকার সমস্যা নয়; এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। ক্যাম্পে নিরাপত্তাহীনতা, সন্ত্রাস, অস্ত্র ব্যবসা ও মাদকের বিস্তার এখন প্রকাশ্য। পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সীমান্তরক্ষীদের সীমিত সক্ষমতায় এই জটিল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

 রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নয়, বরং তাদের ব্যবস্থাপনাকে নিরাপদ, ন্যায়সংগত ও অপরাধমুক্ত রাখা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অদৃশ্য অপরাধজগত গড়ে উঠেছে, তার বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তা হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের জন্য এক অনিয়ন্ত্রিত দুর্যোগ।

নাগরিক সংবাদ সম্পাদকীয়

২৬ জুলাই, ২০২৫,  9:03 PM

news image

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় সেই জনগোষ্ঠীর একটি অংশ এখন অপরাধচক্রের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নানা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক ভয়ঙ্কর মাদক বাণিজ্য, যার অর্থ লেনদেন হচ্ছে বাংলাদেশের বাইরের মাটিতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে। এই পদ্ধতি শুধু অভিনব নয়, বরং নিরাপত্তার দিক থেকে তা অতি আশঙ্কাজনক।

 দেশের ভেতরে ইয়াবা, আইসসহ নানা মাদক বেচাকেনা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, কিন্তু সেই মাদকের দাম পরিশোধ হচ্ছে বিদেশে-হুন্ডির মাধ্যমে। এই অপরাধ কাঠামো এতটাই সুসংগঠিত যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বজনদের পাঠানো রেমিট্যান্স অজান্তেই ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাস, অস্ত্র ও মাদকের উৎসে পরিণত হচ্ছে। এতে করে একটি পুরো জনগোষ্ঠী নিজের অজান্তেই অপরাধের অর্থনীতির জ্বালানি সরবরাহ করে চলেছে।

বাংলাদেশি পাসপোর্টের অপব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেওয়া রোহিঙ্গারা সেখানে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি পরিবার-পরিজনের জন্য দেশে অর্থ পাঠান। কিন্তু বৈধ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুযোগ না থাকায় এই অর্থ পাঠানো হয় হুন্ডির মাধ্যমে। ক্যাম্পের ভেতরে হুন্ডি সিন্ডিকেটের এমন বিস্তার যে, সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলে এসে টাকা পৌঁছে দিয়ে ফের চলে যায় লোকজন-এমন চিত্র এখন নিয়মিত ঘটনা।

এই অর্থপ্রবাহের সুযোগ নিচ্ছে মাদক চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় দেশে সরাসরি লেনদেন করা মাদক কারবারিরা এখন বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। তারা মাদক ক্যাম্পে বিক্রি করলেও অর্থ গ্রহণ করছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে। বিদেশে থাকা রোহিঙ্গারা সেই অর্থ প্রদান করছেন হুন্ডির মাধ্যমে। এই অর্থ আবার দেশে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক সিন্ডিকেটের হাতে। এভাবেই গড়ে উঠেছে এক অন্তর্জালের মতো ছড়ানো বৈশ্বিক মাদক অর্থনীতি, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।

এমন পরিস্থিতি শুধু একটি সীমান্তীয় এলাকার সমস্যা নয়; এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। ক্যাম্পে নিরাপত্তাহীনতা, সন্ত্রাস, অস্ত্র ব্যবসা ও মাদকের বিস্তার এখন প্রকাশ্য। পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সীমান্তরক্ষীদের সীমিত সক্ষমতায় এই জটিল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

 রাষ্ট্রের দায়িত্ব শুধু শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নয়, বরং তাদের ব্যবস্থাপনাকে নিরাপদ, ন্যায়সংগত ও অপরাধমুক্ত রাখা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অদৃশ্য অপরাধজগত গড়ে উঠেছে, তার বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তা হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের জন্য এক অনিয়ন্ত্রিত দুর্যোগ।