শিরোনামঃ
ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার মত ক্ষমতা কারও নেই: সমাবেশে সভাপতি রাকিবুল শাহবাগ অবরোধ: পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ, ৩২ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল-আটা চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না কমিউনিটি ক্লিনিক সংকট: গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ছে কেন? সেমিফাইনালও বয়কট করলো ভারত, ফাইনালে পাকিস্তান কিডনি সুস্থ রাখতে খেতে পারেন এই দুই খাবার মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিজেই নিজেকে ট্রল করলেন উর্বশী গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ অপরিহার্য: তারেক রহমান আগামী কিছুদিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে : আইন উপদেষ্টা

নেত্রকোনায় ধান কাটা শুরু, ব্রি-২৮ ধান চাষে বিপাকে চাষিরা

#
news image

নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে বইছে সবুজের সমারোহ। হাওয়ায় দুলছে সবুজ পাতায় মোড়ানো কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল। চৈত্রের দিপ্তরোদে জমির বাড়তি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। এবার সেই সোনালী ধান গোলায় তোলার পালা। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনায় শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব।

কিন্তু নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা শুরু হলেও ব্রি-২৮ ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। হাওড়াঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়েছে। আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলার হাওড়াঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিল কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর ব্লাস্ট নামক ভাইরাসের আক্রমণে বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হয়েছে এবং অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টির কারণে কপাল পুড়েছে তাদের। ফলে এখন তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে কৃষকরা তাদের সারা বছরের খোরাকি এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। গতবছরও কৃষকরা একই জাতের ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের অসচেতনতা এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে হাওড়াঞ্চলের ধান উৎপাদন।

খালিয়াজুরী উপজেলার লক্ষ্মীর কৃষক গ্রামের সাধন সরকার বলেন, আমি প্রায় ২০ কাটা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমির ধান ছিটা হয়েছে। এখন আমার পরিবার কিভাবে চলবে? সংসারের ভরণপোষণ করব কিভাবে। আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

বারহাট্টা উপজেলার গড়মা গ্রামের কৃষক তপন সরকার বলেন, এবার ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলাম কিন্তু ধান ছিটা হওয়ার আমি যে খরচ এবারের চাষাবাদে করেছি তা উঠবে না। আগামী এক বছর কিভাবে চলবো তা নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।

মদন উপজেলার কৃষক আল-আমিন মিয়ার কাছে চিটা হওয়ার পরও কেন ধান কাটছেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, গরুর খাবার সংগ্রহ করতেই ধান কাটছি। আমি আমার জমির ধান, ধান কাটার শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছি। শুধু দাবি করছি খড় যেন আমাকে দিয়ে দেয়। একই উপজেলার রাজবল্লভপুর গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, আমার ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই মিলারদের কাছে কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

এবারের ধানের এরকম ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, এবার যেহেতু দীর্ঘমেয়াদে হট টেম্পারেচার ছিল, ৪ঠা এপ্রিল দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একটা হিট ওয়েব ছিল তাতে এটা পুড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ধানের রেণু শুকিয়ে গেছে, পাতা শুকিয়ে গেছে। যার জন্য ওই সময়ে যেগুলো ফ্লাওয়ারিং অবস্থায় ছিল সেগুলোতে ক্ষতি হয়েছে। ব্রি-২৮ ধান আবাদ না করতে যে রকম প্রচার প্রচারণা করার দরকার ছিল তা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফলে কৃষকরা বার বার একই ভুল করে লোকসানের মুখে পড়েছে।

ধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোরো মৌসুম শীতে নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে শুরু হয়। আর শেষটা হয় চরম গরমের এপ্রিল-মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে। ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ধানের ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধানে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নেত্রকোনায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। জেলায় বোরো ফসল থেকে সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন। হাওড়ে বোরোর আবাদ ৪০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এসব জমি থেকে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭৪৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর সারা জেলায় প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। হাওড়ে ব্রি-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। মওসুমের শুরুতেই বালাইনাশক প্রয়োগ কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ধানের চাষাবাদ না করতেও কৃষকদের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

উপজেলা সংবাদদাতা

১৭ এপ্রিল, ২০২৩,  10:40 PM

news image

নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে বইছে সবুজের সমারোহ। হাওয়ায় দুলছে সবুজ পাতায় মোড়ানো কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল। চৈত্রের দিপ্তরোদে জমির বাড়তি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। এবার সেই সোনালী ধান গোলায় তোলার পালা। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনায় শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব।

কিন্তু নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা শুরু হলেও ব্রি-২৮ ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। হাওড়াঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়েছে। আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে জেলার হাওড়াঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিল কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর ব্লাস্ট নামক ভাইরাসের আক্রমণে বেশিরভাগ জমির ধান চিটা হয়েছে এবং অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টির কারণে কপাল পুড়েছে তাদের। ফলে এখন তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এতে কৃষকরা তাদের সারা বছরের খোরাকি এবং ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। গতবছরও কৃষকরা একই জাতের ধান চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের অসচেতনতা এবং কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ফের ক্ষতির মুখে পড়েছে হাওড়াঞ্চলের ধান উৎপাদন।

খালিয়াজুরী উপজেলার লক্ষ্মীর কৃষক গ্রামের সাধন সরকার বলেন, আমি প্রায় ২০ কাটা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। আমার বেশিরভাগ জমির ধান ছিটা হয়েছে। এখন আমার পরিবার কিভাবে চলবে? সংসারের ভরণপোষণ করব কিভাবে। আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

বারহাট্টা উপজেলার গড়মা গ্রামের কৃষক তপন সরকার বলেন, এবার ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলাম কিন্তু ধান ছিটা হওয়ার আমি যে খরচ এবারের চাষাবাদে করেছি তা উঠবে না। আগামী এক বছর কিভাবে চলবো তা নিয়ে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।

মদন উপজেলার কৃষক আল-আমিন মিয়ার কাছে চিটা হওয়ার পরও কেন ধান কাটছেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, গরুর খাবার সংগ্রহ করতেই ধান কাটছি। আমি আমার জমির ধান, ধান কাটার শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছি। শুধু দাবি করছি খড় যেন আমাকে দিয়ে দেয়। একই উপজেলার রাজবল্লভপুর গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, আমার ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই মিলারদের কাছে কাঁচা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

এবারের ধানের এরকম ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, এবার যেহেতু দীর্ঘমেয়াদে হট টেম্পারেচার ছিল, ৪ঠা এপ্রিল দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একটা হিট ওয়েব ছিল তাতে এটা পুড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ধানের রেণু শুকিয়ে গেছে, পাতা শুকিয়ে গেছে। যার জন্য ওই সময়ে যেগুলো ফ্লাওয়ারিং অবস্থায় ছিল সেগুলোতে ক্ষতি হয়েছে। ব্রি-২৮ ধান আবাদ না করতে যে রকম প্রচার প্রচারণা করার দরকার ছিল তা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফলে কৃষকরা বার বার একই ভুল করে লোকসানের মুখে পড়েছে।

ধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোরো মৌসুম শীতে নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে শুরু হয়। আর শেষটা হয় চরম গরমের এপ্রিল-মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে। ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ধানের ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে ধানে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নেত্রকোনায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ২৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। জেলায় বোরো ফসল থেকে সম্ভাব্য ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন। হাওড়ে বোরোর আবাদ ৪০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এসব জমি থেকে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭৪৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর সারা জেলায় প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে আগাম জাতের ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। হাওড়ে ব্রি-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। মওসুমের শুরুতেই বালাইনাশক প্রয়োগ কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ধানের চাষাবাদ না করতেও কৃষকদের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষাবাদ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।