ডিসেম্বরে আসছে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল, প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত: নির্বাচন কমিশন

নাগরিক সংবাদ অনলাইন
০৮ আগস্ট, ২০২৫, 1:07 AM

ডিসেম্বরে আসছে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল, প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত: নির্বাচন কমিশন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সরকার থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নবম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই। সে অনুযায়ী ভোটের আনুমানিক ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করার সময় নির্ধারণ করেছে কমিশন।
সানাউল্লাহ বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের আগেই বলেছেন, নির্বাচনের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই হিসেবে ডিসেম্বরের প্রথমভাগে এই ঘোষণা আসবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।”
এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারপ্রধানের অবস্থানও পরিষ্কার। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে, এখন থেকে মূল লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
এর অংশ হিসেবে বুধবার (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রবাসী ভোটারদের ওপর। কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, সেপ্টেম্বর থেকেই প্রবাসীদের জন্য ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে তারা যেসব পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন, তাতে কেবল প্রতীক থাকবে, প্রার্থীর নাম থাকবে না।
তিনি বলেন, “প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর অনলাইনে প্রার্থীর তালিকা দেখে তারা ব্যালটে থাকা প্রতীকে ভোট দিতে পারবেন। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন প্রবাসে থাকা নাগরিকেরা, কারাগারে বন্দিরা এবং ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।”
এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ব্যয় সম্পর্কে জানিয়ে কমিশনার বলেন, প্রতিটি ব্যালট আনা-নেওয়ার জন্য গড়ে ৫০০ টাকা খরচ হবে। আবার আলাদা প্রকল্পে নিবন্ধনের জন্য ৪৮ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। প্রত্যেক এক লাখ ভোটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত।
নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তিতেও এবার রাখা হচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছরে পা দেবে, তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হবে। এতে ১৮ থেকে ২০ লাখ নতুন তরুণ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে ইসির ধারণা।
তফসিল ও ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি আচরণবিধি নিয়েও কমিশন কঠোর হয়েছে। সানাউল্লাহ জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে নির্বাচন কমিশন। এআই ব্যবহার করে অপপ্রচার চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
ড্রোন নিয়েও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী, পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মী ভোটের সময় ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে না। কমিশনের প্রয়োজনে কেবল ইসি নিজেই ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি বিবেচনা করবে।
তবে ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে বলে জানান সানাউল্লাহ।
সবমিলিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়াতেই আচরণবিধি, প্রবাসী ভোটার অংশগ্রহণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আইনি কাঠামো—সবদিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিক সংবাদ অনলাইন
০৮ আগস্ট, ২০২৫, 1:07 AM

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সরকার থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নবম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
নির্বাচন কমিশনার জানান, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই। সে অনুযায়ী ভোটের আনুমানিক ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করার সময় নির্ধারণ করেছে কমিশন।
সানাউল্লাহ বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের আগেই বলেছেন, নির্বাচনের তারিখের প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই হিসেবে ডিসেম্বরের প্রথমভাগে এই ঘোষণা আসবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।”
এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারপ্রধানের অবস্থানও পরিষ্কার। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ আগস্ট সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে, এখন থেকে মূল লক্ষ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
এর অংশ হিসেবে বুধবার (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রবাসী ভোটারদের ওপর। কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, সেপ্টেম্বর থেকেই প্রবাসীদের জন্য ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে তারা যেসব পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন, তাতে কেবল প্রতীক থাকবে, প্রার্থীর নাম থাকবে না।
তিনি বলেন, “প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর অনলাইনে প্রার্থীর তালিকা দেখে তারা ব্যালটে থাকা প্রতীকে ভোট দিতে পারবেন। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন প্রবাসে থাকা নাগরিকেরা, কারাগারে বন্দিরা এবং ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।”
এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ব্যয় সম্পর্কে জানিয়ে কমিশনার বলেন, প্রতিটি ব্যালট আনা-নেওয়ার জন্য গড়ে ৫০০ টাকা খরচ হবে। আবার আলাদা প্রকল্পে নিবন্ধনের জন্য ৪৮ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। প্রত্যেক এক লাখ ভোটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত।
নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তিতেও এবার রাখা হচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ১৮ বছরে পা দেবে, তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হবে। এতে ১৮ থেকে ২০ লাখ নতুন তরুণ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে ইসির ধারণা।
তফসিল ও ভোটের প্রস্তুতির পাশাপাশি আচরণবিধি নিয়েও কমিশন কঠোর হয়েছে। সানাউল্লাহ জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে নির্বাচন কমিশন। এআই ব্যবহার করে অপপ্রচার চালালে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
ড্রোন নিয়েও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী, পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মী ভোটের সময় ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে না। কমিশনের প্রয়োজনে কেবল ইসি নিজেই ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি বিবেচনা করবে।
তবে ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে বলে জানান সানাউল্লাহ।
সবমিলিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী এবং ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়াতেই আচরণবিধি, প্রবাসী ভোটার অংশগ্রহণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আইনি কাঠামো—সবদিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।