মিয়ানমারের সঙ্গে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

নাগরিক সংবাদ অনলাইন
৩০ জুলাই, ২০২৫, 9:59 PM

মিয়ানমারের সঙ্গে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য তিন মাসের বেশি ধরে বন্ধ থাকায় দেশের শতাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে চলত দুই দেশের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদান, যা এখন পুরোপুরি স্থবির। শ্রমিক, ট্রাকচালক, খালাসিসহ সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্য থেকে ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও, চলতি তিন মাসে কোনো আয় হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে ঝুঁকছেন, যদিও তা সময় ও খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, শুঁটকি, নারকেলসহ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়, যা এখন বন্ধ। রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পণ্যও বন্দরে পড়ে আছে, যার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, আলু ও প্লাস্টিক সামগ্রী। বন্দরের পরিবেশ এখন ফাঁকা, জেটিতে নেই কোনো ট্রলার বা কর্মব্যস্ততা। বাণিজ্য স্থবিরতায় সীমান্ত এলাকার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য পুনরায় চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সংঘাতের অবসান না হলে স্থবিরতা কাটবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলমান অচলাবস্থায় সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই সংকট শুধু ব্যবসায় নয়, জাতীয় রাজস্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমদানি-রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে তিন মাসের বেশি সময় ধরে। বলা যায় সীমান্ত বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এতে স্থলবন্দরে থাকা আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দরের শতাধিক ব্যবসায়ী। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠের বোট আসে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ।
এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার অংশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে চারটি পণ্যবাহী নৌযান আটক করে কমিশন দাবি করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে ছয় মাস ধরে ইয়াঙ্গুন দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে দুই হাজার ৭০০ বস্তা আলু, ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, এক হাজার ৯০ বস্তা কোমলপানীয় রয়েছে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত আছে। এর মধ্যে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক হাজার বস্তা সিমেন্টও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে।
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। বাণিজ্য বন্ধ থাকায় রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য। স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, স্থলবন্দরে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য বন্ধ আছে। যদিও বন্দরকে সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আশা করছেন, শিগগিরই বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হবে। তবে আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসের বেশি সময় ধরে বন্দর অচল।
এতে মিয়ানমারে রপ্তানির জন্য বন্দরে মজুত করা বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এতে মোটা অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখানের জনবলও অন্য খানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সবাই মিলে বাণিজ্য চালুর জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাগরিক সংবাদ অনলাইন
৩০ জুলাই, ২০২৫, 9:59 PM

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য তিন মাসের বেশি ধরে বন্ধ থাকায় দেশের শতাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে চলত দুই দেশের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদান, যা এখন পুরোপুরি স্থবির। শ্রমিক, ট্রাকচালক, খালাসিসহ সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্য থেকে ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও, চলতি তিন মাসে কোনো আয় হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে ঝুঁকছেন, যদিও তা সময় ও খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে সাধারণত ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, শুঁটকি, নারকেলসহ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়, যা এখন বন্ধ। রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পণ্যও বন্দরে পড়ে আছে, যার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, আলু ও প্লাস্টিক সামগ্রী। বন্দরের পরিবেশ এখন ফাঁকা, জেটিতে নেই কোনো ট্রলার বা কর্মব্যস্ততা। বাণিজ্য স্থবিরতায় সীমান্ত এলাকার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য পুনরায় চালুর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সংঘাতের অবসান না হলে স্থবিরতা কাটবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলমান অচলাবস্থায় সীমান্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এই সংকট শুধু ব্যবসায় নয়, জাতীয় রাজস্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমদানি-রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে তিন মাসের বেশি সময় ধরে। বলা যায় সীমান্ত বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এতে স্থলবন্দরে থাকা আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দরের শতাধিক ব্যবসায়ী। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠের বোট আসে। এরপর থেকে টেকনাফ-মংডু পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ।
এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার অংশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে চারটি পণ্যবাহী নৌযান আটক করে কমিশন দাবি করে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে ছয় মাস ধরে ইয়াঙ্গুন দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে দুই হাজার ৭০০ বস্তা আলু, ২২ হাজার ৮৫০ বস্তা সিমেন্ট, এক হাজার ৯০ বস্তা কোমলপানীয় রয়েছে। এ ছাড়া চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত আছে। এর মধ্যে সব আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক হাজার বস্তা সিমেন্টও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে।
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। এতে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। বাণিজ্য বন্ধ থাকায় রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে ২৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানির বিপরীতে ৯১ কোটি টাকার রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে সংঘাতের কারণে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল দুই কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন পণ্য। স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, স্থলবন্দরে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাণিজ্য বন্ধ আছে। যদিও বন্দরকে সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আশা করছেন, শিগগিরই বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হবে। তবে আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসের বেশি সময় ধরে বন্দর অচল।
এতে মিয়ানমারে রপ্তানির জন্য বন্দরে মজুত করা বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এতে মোটা অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখানের জনবলও অন্য খানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি তল্লাশির নামে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে দেয়। এতে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সবাই মিলে বাণিজ্য চালুর জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।