বুয়েটের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে

নাগরিক প্রতিবেদন
০৫ এপ্রিল, ২০২৪, 9:55 PM

বুয়েটের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের (ইন্টারভাল-১৮) শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের মাইক্রোসফট টিমস ফরমের মাধ্যমে তারা এ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। শুধু বর্তমান বুয়েট শিক্ষার্থীরা ফরমটি পূরণ করতে পেরেছেন এবং এক আইডি দিয়ে একবারের বেশি তা পূরণের সুযোগ রাখা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ ব্যাচের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, বুয়েটে বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ হাজার ৮৩২ জন। কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এতে ৫ হাজার ৭৩৯ শিক্ষার্থী অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ ফরর্ম পূরণ করে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান। তারা একটি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস দেখতে চান, যেখানে অবাধে তারা তাদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবেন।
এর আগে গত বুধবার গণভোট কর্মসূচিতে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মতামত জানিয়েছিলেন বুয়েটির ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরজি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা অনুরোধ জানান, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে যাতে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেন তাদের পাশে থাকেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতিচর্চার অধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছয় শিক্ষার্থী। বুয়েটের শহীদ মিনারে গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা আবেদনটি পড়ে শোনান। এ ছয় শিক্ষার্থী হলেন আশিকুল আলম, অর্ঘ্য দাস, অরিত্র ঘোষ, তানভীর মাহমুদ, সাগর বিশ্বাস ও মিশু দত্ত।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জীবনের হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। ছাত্রশিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লার পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নাম, সেলফোন নম্বর, শিক্ষার্থী নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মেসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করে। আমরা ২১ জন এ ধরনের হুমকির সম্মুখীন। এর প্রমাণ এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে ও সৎসাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।’
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতারা প্রবেশ করলে এ নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাবেশের আয়োজক হিসেবে আলোচিত ইমতিয়াজ রাব্বিকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন রাব্বি। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন।
তবে হাইকোর্টের রায়ের পরও ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
নাগরিক প্রতিবেদন
০৫ এপ্রিল, ২০২৪, 9:55 PM

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের (ইন্টারভাল-১৮) শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের মাইক্রোসফট টিমস ফরমের মাধ্যমে তারা এ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। শুধু বর্তমান বুয়েট শিক্ষার্থীরা ফরমটি পূরণ করতে পেরেছেন এবং এক আইডি দিয়ে একবারের বেশি তা পূরণের সুযোগ রাখা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ ব্যাচের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, বুয়েটে বর্তমান শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ হাজার ৮৩২ জন। কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এতে ৫ হাজার ৭৩৯ শিক্ষার্থী অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ ফরর্ম পূরণ করে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান। তারা একটি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস দেখতে চান, যেখানে অবাধে তারা তাদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবেন।
এর আগে গত বুধবার গণভোট কর্মসূচিতে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মতামত জানিয়েছিলেন বুয়েটির ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরজি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা অনুরোধ জানান, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে যাতে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেন তাদের পাশে থাকেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতিচর্চার অধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছয় শিক্ষার্থী। বুয়েটের শহীদ মিনারে গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা আবেদনটি পড়ে শোনান। এ ছয় শিক্ষার্থী হলেন আশিকুল আলম, অর্ঘ্য দাস, অরিত্র ঘোষ, তানভীর মাহমুদ, সাগর বিশ্বাস ও মিশু দত্ত।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জীবনের হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। ছাত্রশিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লার পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নাম, সেলফোন নম্বর, শিক্ষার্থী নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মেসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করে। আমরা ২১ জন এ ধরনের হুমকির সম্মুখীন। এর প্রমাণ এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে ও সৎসাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।’
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতারা প্রবেশ করলে এ নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাবেশের আয়োজক হিসেবে আলোচিত ইমতিয়াজ রাব্বিকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন রাব্বি। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করেন।
তবে হাইকোর্টের রায়ের পরও ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অনড় অবস্থানে রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।