ক্যাপাসিটি পেমেন্টে দাম বাড়ছে বিদ্যুতের

নাগরিক প্রতিবেদন
১৪ মার্চ, ২০২৪, 12:27 PM

ক্যাপাসিটি পেমেন্টে দাম বাড়ছে বিদ্যুতের
ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অযৌক্তিক এই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট যথাযথভাবে সমন্বয় করা সম্ভব হলে এভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির দরকার হতো না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ভুলনীতি, উৎপাদনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ নানা কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি ভর্তুকিও বাড়ছে। এর দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করছে সরকার। এ কারণে মূল্যস্ফীতির চাপে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে গেছে। অথচ মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও অনেক বিকল্প ছিল- গতকাল বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘সাম্প্রতিক বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ভর্তুকি সমন্বয়ে অন্য বিকল্প আছে কী’ শীর্ষক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, এর প্রভাব, বিকল্প উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, বেশি ব্যবহারে দাম বৃদ্ধির হার বেশি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে কৃষি খাতের সেচ ও শিল্প উৎপাদনে বড় অঙ্কের খরচ বাড়বে।
এই গবেষক বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বলছে ‘মূল্য সমন্বয়’। বাস্তবতা হলো- এটি মূল্যবৃদ্ধি। ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে এই মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর ফলে ভোক্তার ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে এভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অযৌক্তিক ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সমন্বয় করা গেলে বিদ্যুতের এমন মূল্যবৃদ্ধির দরকার হতো না। এটা সরকারের প্রথম অগ্রাধিকারে থাকা দরকার। কিন্তু সরকার ধাপে ধাপে আরও মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছে। সেটি ভোক্তার আরও বড় নাভিশ্বাস তৈরি করবে।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধির অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা, এলএনজি ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝোঁকা এবং বিদ্যুৎ কেনায় প্রতিযোগিতার অভাব। বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণেও দাম বাড়ছে।
সিপিডির এই গবেষক আরও বলেন, সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি পরিবারে মাসিক ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্পে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ব্যবসা ও অফিসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পে ১০ শতাংশ এবং সেচে ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য সরকারের হাতে চারটি বিকল্প রয়েছে। এগুলো হলো- সময়মতো বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎ কিনতে নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট শর্তে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রয়োজনে খুবই সামান্য পরিমাণে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা। এগুলো বাস্তবায়ন করলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ খাতে আর ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে না।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে- নির্বাহী আদেশ নয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে গ্যাস বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই গণশুনানির মাধ্যমে দাম বাড়ানো বা কমানোর দাবি করেছে সংস্থাটি। বলছে, যে হারে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তা ভোক্তার সহ্যক্ষমতার বাইরে। যদিও সরকার বলেছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে না।
কোন প্রেক্ষাপটে সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল? সম্মেলনে এ প্রশ্নও রেখেছে সিপিডি। আইএমএফের পরামর্শে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে এটার প্রয়োজনই পড়বে না যদি সরকার যদি বিদ্যুৎ খাতে ৪টি পদক্ষেপ নেয় তাহলে ২০২৯ সাল থেকে আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না। সিপিডি আরও জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়ালেই আর ভর্তুকি দিতে হবে না সরকারকে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি, মাশফিক আহসান হৃদয়, প্রোগ্রাম সহযোগী ফয়সাল কাইয়ুম প্রমুখ।
নাগরিক প্রতিবেদন
১৪ মার্চ, ২০২৪, 12:27 PM

ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অযৌক্তিক এই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট যথাযথভাবে সমন্বয় করা সম্ভব হলে এভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির দরকার হতো না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ভুলনীতি, উৎপাদনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ নানা কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পাশাপাশি ভর্তুকিও বাড়ছে। এর দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করছে সরকার। এ কারণে মূল্যস্ফীতির চাপে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে গেছে। অথচ মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও অনেক বিকল্প ছিল- গতকাল বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘সাম্প্রতিক বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ভর্তুকি সমন্বয়ে অন্য বিকল্প আছে কী’ শীর্ষক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, এর প্রভাব, বিকল্প উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, বেশি ব্যবহারে দাম বৃদ্ধির হার বেশি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে কৃষি খাতের সেচ ও শিল্প উৎপাদনে বড় অঙ্কের খরচ বাড়বে।
এই গবেষক বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বলছে ‘মূল্য সমন্বয়’। বাস্তবতা হলো- এটি মূল্যবৃদ্ধি। ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে এই মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর ফলে ভোক্তার ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে এভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। অযৌক্তিক ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সমন্বয় করা গেলে বিদ্যুতের এমন মূল্যবৃদ্ধির দরকার হতো না। এটা সরকারের প্রথম অগ্রাধিকারে থাকা দরকার। কিন্তু সরকার ধাপে ধাপে আরও মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছে। সেটি ভোক্তার আরও বড় নাভিশ্বাস তৈরি করবে।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধির অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা, এলএনজি ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝোঁকা এবং বিদ্যুৎ কেনায় প্রতিযোগিতার অভাব। বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণেও দাম বাড়ছে।
সিপিডির এই গবেষক আরও বলেন, সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতি পরিবারে মাসিক ব্যয় গড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্পে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, ব্যবসা ও অফিসে ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, শিল্পে ১০ শতাংশ এবং সেচে ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য সরকারের হাতে চারটি বিকল্প রয়েছে। এগুলো হলো- সময়মতো বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা, বেসরকারি খাতে নতুন বিদ্যুৎ কিনতে নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট শর্তে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো এবং প্রয়োজনে খুবই সামান্য পরিমাণে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা। এগুলো বাস্তবায়ন করলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এ খাতে আর ভর্তুকির প্রয়োজন পড়বে না।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে- নির্বাহী আদেশ নয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে গ্যাস বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই গণশুনানির মাধ্যমে দাম বাড়ানো বা কমানোর দাবি করেছে সংস্থাটি। বলছে, যে হারে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তা ভোক্তার সহ্যক্ষমতার বাইরে। যদিও সরকার বলেছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর চাপ পড়বে না।
কোন প্রেক্ষাপটে সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল? সম্মেলনে এ প্রশ্নও রেখেছে সিপিডি। আইএমএফের পরামর্শে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে সরকার যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে এটার প্রয়োজনই পড়বে না যদি সরকার যদি বিদ্যুৎ খাতে ৪টি পদক্ষেপ নেয় তাহলে ২০২৯ সাল থেকে আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে না। সিপিডি আরও জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়ালেই আর ভর্তুকি দিতে হবে না সরকারকে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি, মাশফিক আহসান হৃদয়, প্রোগ্রাম সহযোগী ফয়সাল কাইয়ুম প্রমুখ।