চট্টগ্রামে রমরমা কোচিং বাণিজ্য;কলেজিয়েট স্কুলে মনিং শাখার সুশান্ত স্যার একাই পড়ান বিভিন্ন ব্যাচে তিনশোর উপরে ছাত্র-ছাত্রী।

মোঃ হাসানুর জামান বাবু, চট্টগ্রাম।
২১ জানুয়ারি, ২০২৪, 3:47 PM

চট্টগ্রামে রমরমা কোচিং বাণিজ্য;কলেজিয়েট স্কুলে মনিং শাখার সুশান্ত স্যার একাই পড়ান বিভিন্ন ব্যাচে তিনশোর উপরে ছাত্র-ছাত্রী।
সরকারের নানাবিধ নিষেধের পরও চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে কিংবা কোচিং সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকটা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করেই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে- নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষকদের নামে শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভোগ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখ হয়ে পড়ছে।
সরেজমিন নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের পিছনে উত্তর নাড়া পাড়া শরীফ মসজিদের সামনে মাসে ১৮০০০ টাকা ভাড়ায় একটি হল রুমে নিজে একাই পড়ান বিভিন্ন স্কুলের তিনশোর উপরে ছাত্র-ছাত্রী। সপ্তাহে তিনদিন করে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে রুটিন করে সারাদিন এবং রাত আটটা পর্যন্ত পড়ান।এই সুশান্ত স্যার কলেজিয়েট স্কুলের গণিত বিষয়ে মনিং সিপ্টের শিক্ষক হলেও প্রায় সময় উনাকে সাড়ে নয়টা দশটা থেকেই কোচিং বাণিজ্যে দেখা যায়। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই শিপ্ট স্কুলে মনিং শিপ্ট শেষ হয় সাড়ে এগারোটায়।এব্যাপারে উনাকে একাধিকবার জানতে চাওয়া হলে উনি একবারে স্বাভাবিক ভাবেই বলেন আমার ক্লাশ নেই তাই চলে এসেছি।
প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে মাসে নেন ২০০০ টাকা যা পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই পরিশোধ করতে এবং ঠিকমত আদায় করতে রেখেছেন একজন কেরানী।স্কুলের সরকারি বেতন ছাড়া উনার প্রতিমাসে কোচিং থেকে আনুুমানিক আয় ২০০০*৩০০=৬০০০০০ টাকা। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এর পাশেই আরেকটি বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে সুশান্ত স্যারের মতো সিস্টেম করে প্রায় ২৫০ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করান কলেজিয়েট স্কুলের দিবা শাখার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক শাহেদ স্যার। উনির একই কৌশল অবলম্বন করেন।ক্লাশ না থাকলেই চলে আসেন স্কুল সময়ের আগেই কোচিং বাণিজ্যে। নগরীর উত্তর নালাপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামের বেশির ভাগ নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্হিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনে রুম ভাড়া নিয়ে এসব কোচিং সেন্টার চলছে।কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়।
ঐ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জনাব জাহেদ স্যার থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি স্যারের রয়েছেন স্কুলের পিছনে উত্তর নালাপাড়া এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কোচিং সেন্টার যা চকবাজারের চেয়ে বেশি কোচিং বাণিজ্য হয় এখানে।চকবাজার একবারে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়াতে এটা সকলের নজরে আসলেও উত্তর নালাপাড়া ভিতরে হওয়ার কারনে প্রশাসন মিডিয়া সচেতন নাগরিক কারোই নজরে আসেনা বিধায় বছরের পর বছর এখানে একেবারে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য।স্কুল গুলোর পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ইসলামিয়া বিশ্বাবিদ্যালয় কলেজও কয়েকটি প্রাইভেট কলেজ। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর সমাগম কলেজ শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারগুলোতে।
একেক বিষয়ে একেক শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। বিষয়ভিত্তিক এমন শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন রসায়ন বিষয়ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের স্যার, চট্টগ্রাম কলেজের স্যার’ ও সিটি কলেজের । গণিত বিষয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের । পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সিটি কলেজের একজন স্যার’। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি আইসিটি বিষয়েও পড়াতে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করেন বলে অভিযোগ আছে। জীববিজ্ঞানে বাকলিয়া সরকারি কলেজের বেশ কয়েকজন নামকরা স্যার । আইসিটি বিষয়ে সিটি সরকারি কলেজের একজন স্যার । তিনি তার কোচিংয়ে মাসিক বেতনের পাশাপাশি নিজের লেখা বই কিনতে শিক্ষার্থীদের জোর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ব্যাচে বা কোচিংয়ে পড়িয়ে অনেক অভিভাবক গর্ববোধ করেন। সন্তান একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছে- এটা প্রচার করে বেড়ান তারা।
এর ফলে অন্য অভিভাবকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। তারা ভাবেন তাদের সন্তান বুঝি পিছিয়ে পড়ল। এভাবেই বাড়ছে কোচিং প্রতিযোগিতা। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে সন্তানকে কোচিং বা ব্যাচে দিচ্ছেন। নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানরা বিভিন্ন কলেজ শিক্ষকের কাছে জিম্মি। যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের অনেক বেশি নম্বর দেন শিক্ষকরা। আর যারা ওইসব স্যারের কাছে পড়ে না তাদের কম নম্বর দেয়া হয়।’আরেকজন অভিভাবক উল্টো আমার কাছে জানতে চান- সুশান্ত স্যার তো একজন মানুষ!উনি বা আরো যারা আছেন টাকার জন্য সকাল থেকে টানা রাত আটটা পর্যন্ত শুধুই কোচিং করান উনাদের মাথা শরীর এগুলো কি কম্পিউটার!? এতোক্ষণ কিভাবে টানা একজন মানুষের পক্ষে প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব?সরকারি নিয়ম বা ডাক্তারি মতে একজন মানুষ কতোক্ষণ পড়াতে পাড়েন?এইগুলো শুধুই আমাদের অভিভাবকদের ধোঁকা দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
এইরকম কয়েকজন অভিভাবকের কথাশুনে আমি উত্তর নালাপাড়া কয়েকটি কোচিং সেন্টারে এই প্রতিবেদন তৈরীর জন্য ঘুরাঘুরি করে দেখলাম আসলেই সচেতন অভিভাবকদের কথাই সত্য!কোচিং সেন্টার স্যাররা কিছুই বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সুযোগ পরিবেশ কোনটি নাই এখানে।এক ব্যাচে ৬০/৭০ জন শিক্ষার্থী স্কুলের ক্লাশের মতো। এখানে কিভাবে কাকে কে বুঝিয়ে দিবেন?স্যার শুধুই বোর্ডে লিখে যাচ্ছেন, আর ছাত্ররা এইগুলো দেখে দেখে খাতায় লিখেই নিয়ে যাচ্ছে। এখানেই শান্তিও আনন্দ কারন স্যারের প্রাইভেট খাতায় নাম থাকলে পরীক্ষায় ভালো নাম্বারতো অন্ততপক্ষে পাবে। আর কেউ কেউ ধারণা করছেন এখানে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত স্যাররাও একটি সিন্ডিকেট আছেন।
উনারা পারস্পরিক কথাবার্তা বলে একজনের ছাত্র-ছাত্রীকে আরেকজ নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার একটি কৌশল এখানে কাজ করেন। এব্যাপারে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উনি জানান-গত বছর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও উপ-শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে প্রায় প্রতিদিন রাতে উনাদের ঝোম মিটিং হতো সেই মিটিং এর আলোকে উনাদের নির্দেশনা মোতাবেন একাধিকবার আমি শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে মিটিং করেছি কোচিং থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি,বলেছি সরকারি চাকুরী করলেই সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।তারপরও যখন আমি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি কয়েকজন শিক্ষককে কোচিং বাণিজ্য থেকে ফেরানো যাচ্ছেনা, তখন আমি দুই শিপ্টের সকল শিক্ষক শিক্ষিকাকে ডেকে সরকারি নিয়মনীতির বাহিরে গিয়ে কোচিং বাণিজ্য করবেননা নিজের জ্ঞান পবিত্র দায়িত্ব মনেকরে স্কুলের ক্লাশেই ছাত্রদের ভালো করে বুঝিয়ে দেবেন।
এইমর্মে প্রত্যেক টিচার্স থেকে মুচলেকা নিয়েছি। সবগুলো আমার স্কুলে ফাইলে আছে।আপনি চাইলেও দিতে পাড়বো।তারপরও যদি উনারা সরকারি আইন অমান্যতা করেন তাহলে উনারা ব্যক্তিগত ভাবেই দায়ি থাকবেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কোচিংনির্ভর পড়ালেখা থেকে বের হওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। স্কুলগুলোতে ঠিকমতো শিক্ষকরা পাঠদান করছেন কিনা সে ব্যাপারে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের তদারকি করতে হবে। এগুলোর অভাবে নগরীর অলিতে-গলিতে অসংখ্য কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব কোচিং সেন্টারের তালিকা বোর্ডের কাছে নেই।আপনার মিডিয়াতে তুলে দরুন বা ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের জানান,আমরা সরকারী বিধিমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করবো।
মোঃ হাসানুর জামান বাবু, চট্টগ্রাম।
২১ জানুয়ারি, ২০২৪, 3:47 PM

সরকারের নানাবিধ নিষেধের পরও চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে না কোচিং বাণিজ্য। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে কিংবা কোচিং সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকটা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জিম্মি করেই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে- নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছেন। চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষকদের নামে শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভোগ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও প্রাইভেট কিংবা কোচিংয়ের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখ হয়ে পড়ছে।
সরেজমিন নগরীর কলেজিয়েট স্কুলের পিছনে উত্তর নাড়া পাড়া শরীফ মসজিদের সামনে মাসে ১৮০০০ টাকা ভাড়ায় একটি হল রুমে নিজে একাই পড়ান বিভিন্ন স্কুলের তিনশোর উপরে ছাত্র-ছাত্রী। সপ্তাহে তিনদিন করে ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে রুটিন করে সারাদিন এবং রাত আটটা পর্যন্ত পড়ান।এই সুশান্ত স্যার কলেজিয়েট স্কুলের গণিত বিষয়ে মনিং সিপ্টের শিক্ষক হলেও প্রায় সময় উনাকে সাড়ে নয়টা দশটা থেকেই কোচিং বাণিজ্যে দেখা যায়। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই শিপ্ট স্কুলে মনিং শিপ্ট শেষ হয় সাড়ে এগারোটায়।এব্যাপারে উনাকে একাধিকবার জানতে চাওয়া হলে উনি একবারে স্বাভাবিক ভাবেই বলেন আমার ক্লাশ নেই তাই চলে এসেছি।
প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে মাসে নেন ২০০০ টাকা যা পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই পরিশোধ করতে এবং ঠিকমত আদায় করতে রেখেছেন একজন কেরানী।স্কুলের সরকারি বেতন ছাড়া উনার প্রতিমাসে কোচিং থেকে আনুুমানিক আয় ২০০০*৩০০=৬০০০০০ টাকা। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এর পাশেই আরেকটি বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে সুশান্ত স্যারের মতো সিস্টেম করে প্রায় ২৫০ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী কোচিং করান কলেজিয়েট স্কুলের দিবা শাখার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক শাহেদ স্যার। উনির একই কৌশল অবলম্বন করেন।ক্লাশ না থাকলেই চলে আসেন স্কুল সময়ের আগেই কোচিং বাণিজ্যে। নগরীর উত্তর নালাপাড়া এলাকায় চট্টগ্রামের বেশির ভাগ নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্হিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে বেশিরভাগ কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার বিভিন্ন ভবনে রুম ভাড়া নিয়ে এসব কোচিং সেন্টার চলছে।কলেজিয়েট স্কুলের পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয়।
ঐ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জনাব জাহেদ স্যার থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি স্যারের রয়েছেন স্কুলের পিছনে উত্তর নালাপাড়া এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কোচিং সেন্টার যা চকবাজারের চেয়ে বেশি কোচিং বাণিজ্য হয় এখানে।চকবাজার একবারে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়াতে এটা সকলের নজরে আসলেও উত্তর নালাপাড়া ভিতরে হওয়ার কারনে প্রশাসন মিডিয়া সচেতন নাগরিক কারোই নজরে আসেনা বিধায় বছরের পর বছর এখানে একেবারে প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য।স্কুল গুলোর পাশেই রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ইসলামিয়া বিশ্বাবিদ্যালয় কলেজও কয়েকটি প্রাইভেট কলেজ। তবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর সমাগম কলেজ শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারগুলোতে।
একেক বিষয়ে একেক শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। বিষয়ভিত্তিক এমন শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন রসায়ন বিষয়ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের স্যার, চট্টগ্রাম কলেজের স্যার’ ও সিটি কলেজের । গণিত বিষয়ে বাকলিয়া সরকারি কলেজের ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের । পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সিটি কলেজের একজন স্যার’। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি আইসিটি বিষয়েও পড়াতে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করেন বলে অভিযোগ আছে। জীববিজ্ঞানে বাকলিয়া সরকারি কলেজের বেশ কয়েকজন নামকরা স্যার । আইসিটি বিষয়ে সিটি সরকারি কলেজের একজন স্যার । তিনি তার কোচিংয়ে মাসিক বেতনের পাশাপাশি নিজের লেখা বই কিনতে শিক্ষার্থীদের জোর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ব্যাচে বা কোচিংয়ে পড়িয়ে অনেক অভিভাবক গর্ববোধ করেন। সন্তান একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছে- এটা প্রচার করে বেড়ান তারা।
এর ফলে অন্য অভিভাবকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। তারা ভাবেন তাদের সন্তান বুঝি পিছিয়ে পড়ল। এভাবেই বাড়ছে কোচিং প্রতিযোগিতা। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে সন্তানকে কোচিং বা ব্যাচে দিচ্ছেন। নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘সন্তানরা বিভিন্ন কলেজ শিক্ষকের কাছে জিম্মি। যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের অনেক বেশি নম্বর দেন শিক্ষকরা। আর যারা ওইসব স্যারের কাছে পড়ে না তাদের কম নম্বর দেয়া হয়।’আরেকজন অভিভাবক উল্টো আমার কাছে জানতে চান- সুশান্ত স্যার তো একজন মানুষ!উনি বা আরো যারা আছেন টাকার জন্য সকাল থেকে টানা রাত আটটা পর্যন্ত শুধুই কোচিং করান উনাদের মাথা শরীর এগুলো কি কম্পিউটার!? এতোক্ষণ কিভাবে টানা একজন মানুষের পক্ষে প্রাইভেট পড়ানো সম্ভব?সরকারি নিয়ম বা ডাক্তারি মতে একজন মানুষ কতোক্ষণ পড়াতে পাড়েন?এইগুলো শুধুই আমাদের অভিভাবকদের ধোঁকা দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
এইরকম কয়েকজন অভিভাবকের কথাশুনে আমি উত্তর নালাপাড়া কয়েকটি কোচিং সেন্টারে এই প্রতিবেদন তৈরীর জন্য ঘুরাঘুরি করে দেখলাম আসলেই সচেতন অভিভাবকদের কথাই সত্য!কোচিং সেন্টার স্যাররা কিছুই বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সুযোগ পরিবেশ কোনটি নাই এখানে।এক ব্যাচে ৬০/৭০ জন শিক্ষার্থী স্কুলের ক্লাশের মতো। এখানে কিভাবে কাকে কে বুঝিয়ে দিবেন?স্যার শুধুই বোর্ডে লিখে যাচ্ছেন, আর ছাত্ররা এইগুলো দেখে দেখে খাতায় লিখেই নিয়ে যাচ্ছে। এখানেই শান্তিও আনন্দ কারন স্যারের প্রাইভেট খাতায় নাম থাকলে পরীক্ষায় ভালো নাম্বারতো অন্ততপক্ষে পাবে। আর কেউ কেউ ধারণা করছেন এখানে কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত স্যাররাও একটি সিন্ডিকেট আছেন।
উনারা পারস্পরিক কথাবার্তা বলে একজনের ছাত্র-ছাত্রীকে আরেকজ নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার একটি কৌশল এখানে কাজ করেন। এব্যাপারে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উনি জানান-গত বছর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও উপ-শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সাথে প্রায় প্রতিদিন রাতে উনাদের ঝোম মিটিং হতো সেই মিটিং এর আলোকে উনাদের নির্দেশনা মোতাবেন একাধিকবার আমি শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে মিটিং করেছি কোচিং থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি,বলেছি সরকারি চাকুরী করলেই সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।তারপরও যখন আমি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি কয়েকজন শিক্ষককে কোচিং বাণিজ্য থেকে ফেরানো যাচ্ছেনা, তখন আমি দুই শিপ্টের সকল শিক্ষক শিক্ষিকাকে ডেকে সরকারি নিয়মনীতির বাহিরে গিয়ে কোচিং বাণিজ্য করবেননা নিজের জ্ঞান পবিত্র দায়িত্ব মনেকরে স্কুলের ক্লাশেই ছাত্রদের ভালো করে বুঝিয়ে দেবেন।
এইমর্মে প্রত্যেক টিচার্স থেকে মুচলেকা নিয়েছি। সবগুলো আমার স্কুলে ফাইলে আছে।আপনি চাইলেও দিতে পাড়বো।তারপরও যদি উনারা সরকারি আইন অমান্যতা করেন তাহলে উনারা ব্যক্তিগত ভাবেই দায়ি থাকবেন। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কোচিংনির্ভর পড়ালেখা থেকে বের হওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। স্কুলগুলোতে ঠিকমতো শিক্ষকরা পাঠদান করছেন কিনা সে ব্যাপারে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের তদারকি করতে হবে। এগুলোর অভাবে নগরীর অলিতে-গলিতে অসংখ্য কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব কোচিং সেন্টারের তালিকা বোর্ডের কাছে নেই।আপনার মিডিয়াতে তুলে দরুন বা ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের জানান,আমরা সরকারী বিধিমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করবো।