নেত্রকোনায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের শীষ চরম হতাশায় কৃষক

মেহেদী হাসান, নেত্রকোনা
১০ এপ্রিল, ২০২৩, 7:27 PM

নেত্রকোনায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের শীষ চরম হতাশায় কৃষক
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, গাছে ধান পেকে গেছে। শীষ হয়ে গেছে সাদা। কিন্তু শীষে আসলে ধান নেই। সাদা ধানের শীষে চালের পরিবর্তে মিলছে চিটা,ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে। মাত্রা অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় ধান গাছের থোড় ও সদ্য বের হওয়া বোরো ধানের শীষে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে সাদা ছত্রাক তারপর লাল হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নেত্রকোনা জেলার কৃষকরা জমির ধান নিয়ে ভুগছেন চরম হতাশায়। দিগন্ত জোড়া ধান খেত সবে শীষ গজিয়ে উঠেছে। গজিয়ে ওঠা সেই শীষে ‘ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে’ চিটা হয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ ধান খেত। তা দেখে জেলার কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগে (২ এপ্রিলের) ঝড়ের পর থেকে এমন অবস্থা হয়েছে। কৃষি বিভাগও এর প্রতিকার দিতে পারছে না।
জেলার ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, অনেক পরিচর্যার পর খেত জুড়ে ধানের গাছে থোর এসেছে। কোথাও কোথাও শীষও গজিয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার পর থেকে ধানের শীষ কালো, সাদা ও লাল বর্ণের আকার ধারন করে। উঠতি ধানের শীষ চিটা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। কষ্টের ফসল গুলো মাঠেই শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে।
কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দিনে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারনে ঝড়ো বাতাসের কারনে ধানের গাছ থেকে প্রসেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে চিটায় পরিণত হয়। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন এবছর উপজেলায় ২০ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান করে প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে (আংশিক) কৃষকের এমন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) জেলার ডেঙ্গাপুতা হাওর অধ্যুষিত এলাকায় মাঠে গিয়ে দেখা গেছে ধানের শীষগুলো খেতের মাঝে মাঝে কালো, সাদা ও হলুদ বর্ণ ধারন করেছে। আবার কোথাও কোথাও শীষ গুলো পরিপক্ত হয়ে সোনালী আকার ধারন করেছে।
মাইনশ্রী গ্রামের কৃষক মো. রতন আলী বলেন, ধারদেনা করে ১০ বিঘা জমিতে মিনিকেট ধানের আবাদ করেছিলেন। পরিচর্যার পর বুকটা ভরে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন আগের ঝড়ের পর থেকে তার খেতের অর্ধেক অংশ জুড়ে শীষের কালার বদলে চিটা হয়ে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। একই মাঠের আরেক কৃষক আবু তাহের ১৪ বিঘা ও আব্দুল হামিদ ২২ বিঘা জমিতে একই চিত্র। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার নূরপুর এলাকার পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. আব্দুস সালাম মোল্লা ও মহসীন আলী একই ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক মো. রবিউল বলেন, গেল ১০ বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি তিনি। এবার ফলন ভালো হওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা থাকলেও হঠাৎ রোগের কারনে আমি সহ এই এলাকার কৃষকের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তাঁদের ভাষ্যমতে, জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও কম বেশি একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত কৃষি বিভাগের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আরও বিপর্যায়ে পড়বে নেত্রকোনা জেলার কৃষি ও কৃষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, দিনে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারনে ঝড়ো বাতাসের কারনে ধানের গাছ থেকে প্রসেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন এবছর উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান করে প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছিল, তার মধ্যে ৬ হেক্টর জমি নিয়ন্ত্রণে চলে আসেছে। (আংশিক) কৃষকের এমন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নূরুজ্জামান বলেন,ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। পুরো জেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৯১ হেক্টর বোরো জমির ধান,এর প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, আমরা বারবার কৃষকদেরকে বলছি (ব্রি আর ২৮) ধানের চাষ না করতে, এবছর নেত্রকোনায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪ শত ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
মেহেদী হাসান, নেত্রকোনা
১০ এপ্রিল, ২০২৩, 7:27 PM

আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, গাছে ধান পেকে গেছে। শীষ হয়ে গেছে সাদা। কিন্তু শীষে আসলে ধান নেই। সাদা ধানের শীষে চালের পরিবর্তে মিলছে চিটা,ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে। মাত্রা অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় ধান গাছের থোড় ও সদ্য বের হওয়া বোরো ধানের শীষে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে সাদা ছত্রাক তারপর লাল হয়ে ধান চিটা হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নেত্রকোনা জেলার কৃষকরা জমির ধান নিয়ে ভুগছেন চরম হতাশায়। দিগন্ত জোড়া ধান খেত সবে শীষ গজিয়ে উঠেছে। গজিয়ে ওঠা সেই শীষে ‘ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে’ চিটা হয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ ধান খেত। তা দেখে জেলার কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগে (২ এপ্রিলের) ঝড়ের পর থেকে এমন অবস্থা হয়েছে। কৃষি বিভাগও এর প্রতিকার দিতে পারছে না।
জেলার ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, অনেক পরিচর্যার পর খেত জুড়ে ধানের গাছে থোর এসেছে। কোথাও কোথাও শীষও গজিয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ার পর থেকে ধানের শীষ কালো, সাদা ও লাল বর্ণের আকার ধারন করে। উঠতি ধানের শীষ চিটা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। কষ্টের ফসল গুলো মাঠেই শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে।
কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দিনে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারনে ঝড়ো বাতাসের কারনে ধানের গাছ থেকে প্রসেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে চিটায় পরিণত হয়। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন এবছর উপজেলায় ২০ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান করে প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে (আংশিক) কৃষকের এমন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) জেলার ডেঙ্গাপুতা হাওর অধ্যুষিত এলাকায় মাঠে গিয়ে দেখা গেছে ধানের শীষগুলো খেতের মাঝে মাঝে কালো, সাদা ও হলুদ বর্ণ ধারন করেছে। আবার কোথাও কোথাও শীষ গুলো পরিপক্ত হয়ে সোনালী আকার ধারন করেছে।
মাইনশ্রী গ্রামের কৃষক মো. রতন আলী বলেন, ধারদেনা করে ১০ বিঘা জমিতে মিনিকেট ধানের আবাদ করেছিলেন। পরিচর্যার পর বুকটা ভরে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন আগের ঝড়ের পর থেকে তার খেতের অর্ধেক অংশ জুড়ে শীষের কালার বদলে চিটা হয়ে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। একই মাঠের আরেক কৃষক আবু তাহের ১৪ বিঘা ও আব্দুল হামিদ ২২ বিঘা জমিতে একই চিত্র। সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার নূরপুর এলাকার পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. আব্দুস সালাম মোল্লা ও মহসীন আলী একই ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক মো. রবিউল বলেন, গেল ১০ বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি তিনি। এবার ফলন ভালো হওয়ার উজ্জল সম্ভাবনা থাকলেও হঠাৎ রোগের কারনে আমি সহ এই এলাকার কৃষকের উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তাঁদের ভাষ্যমতে, জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও কম বেশি একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত কৃষি বিভাগের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আরও বিপর্যায়ে পড়বে নেত্রকোনা জেলার কৃষি ও কৃষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারহাট্টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, দিনে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারনে ঝড়ো বাতাসের কারনে ধানের গাছ থেকে প্রসেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়। তাছাড়া পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন এবছর উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান করে প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছিল, তার মধ্যে ৬ হেক্টর জমি নিয়ন্ত্রণে চলে আসেছে। (আংশিক) কৃষকের এমন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ নূরুজ্জামান বলেন,ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পরাগায়ন, গর্ভধারন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। একারনে ধানের থোর বা শীষের কালার বদলে গিয়ে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। পুরো জেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৯১ হেক্টর বোরো জমির ধান,এর প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, আমরা বারবার কৃষকদেরকে বলছি (ব্রি আর ২৮) ধানের চাষ না করতে, এবছর নেত্রকোনায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪ শত ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।