আগামী সপ্তাহে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান

নাগরিক প্রতিবেদন
০৯ মার্চ, ২০২৪, 4:19 PM
আগামী সপ্তাহে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে আগামী সপ্তাহে। এরই মধ্যে এ দরপত্র আহ্বানের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, নতুন এ দরপত্র আহ্বানের সম্ভাব্য দিন ১০ মার্চ। এ দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে দেশের সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানিগুলোর পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুদ আবিষ্কার করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেড (ওএনজিসি)। খনিটি থেকে দৈনিক ৪৫ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল এবং ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। খনিটি থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হলে দেশটির শুধু জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি রুপির মতো।
আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারও এরই মধ্যে গভীর সাগরে অনুসন্ধান চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে দেশটি। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ গ্যাস তারা এখন চীনেও রফতানি করছে। দেশের জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দুই দেশ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও মনোযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম তেমন একটা এগোয়নি। নতুন এ দরপত্রের মধ্য দিয়ে সে অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরের ব্লক বরাদ্দসহ দরপত্র আহ্বানে নানা বিষয় নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। এ রোডম্যাপের আওতায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর দরপত্রে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া, এ নিয়ে দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, রোড শোসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, ‘সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান (বিডিং রাউন্ড) মার্চের প্রথম সপ্তাহে না হলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে যাবে। সেখানেই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।’ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে বিরাট এলাকাজুড়ে টুডি সিসমিক সার্ভে করা হয়েছে। জার্মানির কোম্পানি স্লামবার্জার দুই বছর আগে এ জরিপকাজ করেছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে স্লামবার্জারের করা এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন কিনে নিয়েছে। এরই মধ্যে শেভরন এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ফেলেছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তারাও সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে ব্লক বরাদ্দ নিতে দরপত্রে অংশ নেবে।
এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, ১০ মার্চ দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি এক প্রকার চূড়ান্ত হয়ে আছে। বিদেশী ৫৫টি কোম্পানিকে এ দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এবার বিডিং রাউন্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান শুরুর পর জমা দেয়ার জন্য ছয় মাস সময় রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে গতকাল জানিয়েছেন, ‘দেশে গ্যাসের স্থানীয় উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। বঙ্গোপসাগরের ২৪ ব্লকে (অফশোর ব্লক) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা থাকবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর এসব দরপত্র মূল্যায়ন করতে সময় লেগে যেতে পারে চলতি বছর।’বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গভীর সমুদ্রে বিনা দরপত্রে ১৫টি ব্লকে কাজ চেয়েছিল মার্কিন জ্বালানি খাতের জায়ান্ট এক্সনমোবিল। গত বছরের মার্চে কোম্পানিটি এ বিষয়ে দুই দফায় প্রস্তাব দিয়েছিল। পেট্রোবাংলাকে এ নিয়ে কোম্পানিটির পক্ষে চিঠিও দেয়া হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই দেয়া চিঠিতে কোম্পানিটি গভীর সমুদ্রে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগেরও কথা জানায়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গেও এক্সনমোবিলের আলোচনা হয়।
সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেতে ঢাকায় আসে এক্সনমোবিলের এক প্রতিনিধি দল। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তারা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এক্সনমোবিলের সে প্রস্তাব নাকচ করে কোম্পানিটিকে আসন্ন দরপত্রে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে মার্কিন কোম্পানিটি দরপত্রে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।
নাগরিক প্রতিবেদন
০৯ মার্চ, ২০২৪, 4:19 PM
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে আগামী সপ্তাহে। এরই মধ্যে এ দরপত্র আহ্বানের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, নতুন এ দরপত্র আহ্বানের সম্ভাব্য দিন ১০ মার্চ। এ দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে দেশের সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানিগুলোর পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। চলতি বছরের শুরুতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সাগরে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুদ আবিষ্কার করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেড (ওএনজিসি)। খনিটি থেকে দৈনিক ৪৫ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল এবং ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। খনিটি থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হলে দেশটির শুধু জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি রুপির মতো।
আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারও এরই মধ্যে গভীর সাগরে অনুসন্ধান চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে কয়েক ট্রিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করে ফেলেছে দেশটি। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ গ্যাস তারা এখন চীনেও রফতানি করছে। দেশের জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দুই দেশ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও মনোযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম তেমন একটা এগোয়নি। নতুন এ দরপত্রের মধ্য দিয়ে সে অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরের ব্লক বরাদ্দসহ দরপত্র আহ্বানে নানা বিষয় নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। এ রোডম্যাপের আওতায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর দরপত্রে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া, এ নিয়ে দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, রোড শোসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, ‘সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান (বিডিং রাউন্ড) মার্চের প্রথম সপ্তাহে না হলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে যাবে। সেখানেই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।’ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে বিরাট এলাকাজুড়ে টুডি সিসমিক সার্ভে করা হয়েছে। জার্মানির কোম্পানি স্লামবার্জার দুই বছর আগে এ জরিপকাজ করেছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে স্লামবার্জারের করা এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন কিনে নিয়েছে। এরই মধ্যে শেভরন এসব ডাটা বিশ্লেষণ করে ফেলেছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তারাও সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে ব্লক বরাদ্দ নিতে দরপত্রে অংশ নেবে।
এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, ১০ মার্চ দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি এক প্রকার চূড়ান্ত হয়ে আছে। বিদেশী ৫৫টি কোম্পানিকে এ দরপত্রে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এবার বিডিং রাউন্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকভাগে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান শুরুর পর জমা দেয়ার জন্য ছয় মাস সময় রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে গতকাল জানিয়েছেন, ‘দেশে গ্যাসের স্থানীয় উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। বঙ্গোপসাগরের ২৪ ব্লকে (অফশোর ব্লক) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা থাকবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর এসব দরপত্র মূল্যায়ন করতে সময় লেগে যেতে পারে চলতি বছর।’বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গভীর সমুদ্রে বিনা দরপত্রে ১৫টি ব্লকে কাজ চেয়েছিল মার্কিন জ্বালানি খাতের জায়ান্ট এক্সনমোবিল। গত বছরের মার্চে কোম্পানিটি এ বিষয়ে দুই দফায় প্রস্তাব দিয়েছিল। পেট্রোবাংলাকে এ নিয়ে কোম্পানিটির পক্ষে চিঠিও দেয়া হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই দেয়া চিঠিতে কোম্পানিটি গভীর সমুদ্রে ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগেরও কথা জানায়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গেও এক্সনমোবিলের আলোচনা হয়।
সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেতে ঢাকায় আসে এক্সনমোবিলের এক প্রতিনিধি দল। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তারা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এক্সনমোবিলের সে প্রস্তাব নাকচ করে কোম্পানিটিকে আসন্ন দরপত্রে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে মার্কিন কোম্পানিটি দরপত্রে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।