দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে ২৫শতাংশ পোশাক শ্রমিক

নাগরিক প্রতিবেদন
০৭ মার্চ, ২০২৪, 1:18 PM
দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে ২৫শতাংশ পোশাক শ্রমিক
তৈরি পোশাক কারখানার ২৫ ভাগ শ্রমিক শ্বাসকষ্টে ভোগেন। কোনো না কোনো রোগে ভুগছেন শতভাগ শ্রমিক। পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পোশাক শ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয় নির্ধারণ নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। বিল্সের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে চালানো এ গবেষণায় সরকার, মালিকপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন ও তৈরি পোশাক শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন। টঙ্গী ও গাজীপুরের ১৬০টি কারখানার ৪০২ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগের তুলনায় পানি ও বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় মাথাব্যথা, মাথাঘোরার মতো নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা বেড়েছে শ্রমিকদের। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ২১ ভাগের মাথাব্যথা, ১৪ ভাগের মাথাঘোরা, ২০ ভাগের ক্লান্তি এবং ২৫ ভাগের শ্বাসকষ্ট আগের চেয়ে বেড়েছে। পোশাক শ্রমিকদের ৯৯ ভাগই দেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৩৬ ভাগ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল উৎপাদন না হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাসের মতো কারণে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে হয়েছে তাদের। নদীভাঙনের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের ছুটি বা অনুপস্থিতি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে এবং আয় হ্রাস ও চাকরির নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে। ৬০ শতাংশ শ্রমিকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে তাপমাত্রা বেড়েছে। এ কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সমস্যা, নতুন রোগ, ছুটি বা অনুপস্থিতি, কম উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা এবং আয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলো সামনে আসছে। ৬০ শতাংশ শ্রমিক কারখানায় পানি দূষণ, ৪১ শতাংশ বায়ুদূষণ এবং প্রায় ৪৩ শতাংশ শব্দদূষণের কথা জানিয়েছেন। ৬৫ শতাংশ শ্রমিক উল্লেখ করেছেন, কারখানার তরল আবর্জনা স্থানীয় ড্রেনে ফেলা হয়, ৮ শতাংশ বলেছেন, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও নদী-নালা-পুকুরে ফেলা হয়। ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের আবাসিক এলাকায় পরিবেশগত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত থাকে। ২২ শতাংশের মতে, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সমস্যার সমাধান হয়। ৫৪ শতাংশ বলেছেন, পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় ট্রেড ইউনিয়নের নীতিগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
এসব কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থ বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্রেতাদের কাছ থেকে ড্যামেজ লস নেয়া উচিত। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা করা দরকার। এ বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে ক্রেতাদের। আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।’ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, ‘আমরা একদিকে বৃক্ষরোপণ করছি। অন্যদিকে গাছপালা কেটে কারখানা নির্মাণ করছি। এভাবে কি আসলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে? এ জায়গাটা সরকারের দেখা উচিত।
বিল্সের উপপরিচালক ও প্রধান গবেষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে রোগ দেখা দিচ্ছে। উৎপাদনশীলতায় এর প্রভাব পড়ছে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্যের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রাসায়নিক দ্রব্য কোনোভাবেই ড্রেনে ফেলা যাবে না। একই সঙ্গে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সুপেয় পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
নাগরিক প্রতিবেদন
০৭ মার্চ, ২০২৪, 1:18 PM
তৈরি পোশাক কারখানার ২৫ ভাগ শ্রমিক শ্বাসকষ্টে ভোগেন। কোনো না কোনো রোগে ভুগছেন শতভাগ শ্রমিক। পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পোশাক শ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয় নির্ধারণ নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। বিল্সের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে চালানো এ গবেষণায় সরকার, মালিকপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন ও তৈরি পোশাক শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন। টঙ্গী ও গাজীপুরের ১৬০টি কারখানার ৪০২ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগের তুলনায় পানি ও বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় মাথাব্যথা, মাথাঘোরার মতো নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা বেড়েছে শ্রমিকদের। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ২১ ভাগের মাথাব্যথা, ১৪ ভাগের মাথাঘোরা, ২০ ভাগের ক্লান্তি এবং ২৫ ভাগের শ্বাসকষ্ট আগের চেয়ে বেড়েছে। পোশাক শ্রমিকদের ৯৯ ভাগই দেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৩৬ ভাগ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল উৎপাদন না হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাসের মতো কারণে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে হয়েছে তাদের। নদীভাঙনের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন ৭ শতাংশ পোশাক শ্রমিক।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের ছুটি বা অনুপস্থিতি বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে এবং আয় হ্রাস ও চাকরির নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ১৩ শতাংশের ক্ষেত্রে। ৬০ শতাংশ শ্রমিকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে তাপমাত্রা বেড়েছে। এ কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সমস্যা, নতুন রোগ, ছুটি বা অনুপস্থিতি, কম উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা এবং আয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলো সামনে আসছে। ৬০ শতাংশ শ্রমিক কারখানায় পানি দূষণ, ৪১ শতাংশ বায়ুদূষণ এবং প্রায় ৪৩ শতাংশ শব্দদূষণের কথা জানিয়েছেন। ৬৫ শতাংশ শ্রমিক উল্লেখ করেছেন, কারখানার তরল আবর্জনা স্থানীয় ড্রেনে ফেলা হয়, ৮ শতাংশ বলেছেন, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও নদী-নালা-পুকুরে ফেলা হয়। ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের আবাসিক এলাকায় পরিবেশগত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত থাকে। ২২ শতাংশের মতে, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সমস্যার সমাধান হয়। ৫৪ শতাংশ বলেছেন, পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় ট্রেড ইউনিয়নের নীতিগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।
এসব কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থ বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসাইন খান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্রেতাদের কাছ থেকে ড্যামেজ লস নেয়া উচিত। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা করা দরকার। এ বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে ক্রেতাদের। আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।’ শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, ‘আমরা একদিকে বৃক্ষরোপণ করছি। অন্যদিকে গাছপালা কেটে কারখানা নির্মাণ করছি। এভাবে কি আসলেই পরিবেশ রক্ষা করা যাবে? এ জায়গাটা সরকারের দেখা উচিত।
বিল্সের উপপরিচালক ও প্রধান গবেষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে রোগ দেখা দিচ্ছে। উৎপাদনশীলতায় এর প্রভাব পড়ছে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি রাসায়নিক দ্রব্যের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রাসায়নিক দ্রব্য কোনোভাবেই ড্রেনে ফেলা যাবে না। একই সঙ্গে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সুপেয় পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’