পর্যটকের পদচারণায় মুখর কক্সবাজার-কুয়াকাটা

জাফর আলম কক্সবাজার ও পটুয়াখালি
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, 6:04 PM
পর্যটকের পদচারণায় মুখর কক্সবাজার-কুয়াকাটা
শীতের শেষ আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল-মোটেলের সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন পর্যটকরা। অপরদিকে, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সৈকতের তিন নদীর মোহানা, ঝাউবন শুঁটকি মার্কেট, লেম্বুর বনসহ সবখানেই পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ২১, ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়াকাটার অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও কটেজ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর তেমন পর্যটক আসেনি। ভরা মৌসুমে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিজুড়ে কিছুটা পর্যটক আসছেন। রোজার আগে ধারাবাহিকভাবে এমন চাপ থাকবে বলে মনে করেন তারা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে সব হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি আমার জানা নেই। কিছু অসাধু ব্যবয়াসী সুযোগ নিচ্ছে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত কেউ এসব কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ঢাকার আশুলিয়া থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘সকাল থেকে কোথাও রুম নেই। হোটেলে রুম না পেয়ে সমুদ্রপাড়ের কিটকটে ৩০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে বসে আছি। কয়েকটা রুম পাওয়া গেলেও একেকটা রুম ৭-৮ হাজার টাকা চাচ্ছে। অথচ এসব রুম স্বাভাবিকভাবে ১-২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘রুম ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগটি আমরা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পর্যটক হয়রানি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘পর্যটন নগরীতে কেউ হয়রানি হলে ছাড় দেয়া হবে না। শীতের শেষ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক আসছে। এটা বজায় থাকবে রমজান পর্যন্ত।’ এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও বেড়েছে পর্যটকের ভিড়। সকাল থেকেই সৈকতের তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন শুঁটকি মার্কেট, লেম্বুর বনসহ সবখানেই পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণত সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘গতকালই (১৫ ফেব্রুয়ারি) আমাদের শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। এখন নতুন করে পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত রুম দেয়ার সুযোগ নেই।’ সরজমিন দেখা গেছে, একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক এসেছে। দেশী পর্যটকের বাইরেও বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। সামনে রমজানের বন্ধ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে হাজার হাজার পর্যটক এসেছে কুয়াকাটায়। দীর্ঘ সৈকতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। পাখির কলকাকলি। সৈকতে বিছানো সারি সারি ঝিনুকের সৌন্দর্য উপভোগ করছে পর্যটকরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য ছিল কুয়াকাটা। তবে গতকাল সকাল থেকে দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার সৈকত পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। সকাল বেলার শীতের রেশ কাটতে না কাটতেই সৈকতের পানিতে গোসল ও উল্লাসে মেতে ওঠে হাজারো পর্যটক। রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আগমনে অনেকটা উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরাও। পর্যটকের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশও। খুলনা থেকে আসা হারিস দম্পতি বলেন, ‘অল্প সময়ে মধ্যে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। এখানকার পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে।’ তবে সৈকতটির পরিবেশ আরো সুন্দর হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এত বেশি পর্যটক দেখে ব্যবসায়ীরাও অনেকটা উচ্ছ্বসিত। এভাবে প্রতিনিয়ত সৈকতে পর্যটক থাকলে ব্যবসায়ীরা পেছনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এরই মধ্যে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক মো. মনিরুল হক বলেন, ‘পর্যটকের চাপ একটু বেশি রয়েছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় বিভিন্ন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে টহল টিম কাজ করছে। কুয়াকাটার প্রতিটি পর্যটন স্পটে আমাদের টিম রয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি।’
জাফর আলম কক্সবাজার ও পটুয়াখালি
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, 6:04 PM
শীতের শেষ আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল-মোটেলের সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন পর্যটকরা। অপরদিকে, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সৈকতের তিন নদীর মোহানা, ঝাউবন শুঁটকি মার্কেট, লেম্বুর বনসহ সবখানেই পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ২১, ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুয়াকাটার অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও কটেজ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর তেমন পর্যটক আসেনি। ভরা মৌসুমে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিজুড়ে কিছুটা পর্যটক আসছেন। রোজার আগে ধারাবাহিকভাবে এমন চাপ থাকবে বলে মনে করেন তারা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে সব হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটি আমার জানা নেই। কিছু অসাধু ব্যবয়াসী সুযোগ নিচ্ছে। সমিতির অন্তর্ভুক্ত কেউ এসব কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ঢাকার আশুলিয়া থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘সকাল থেকে কোথাও রুম নেই। হোটেলে রুম না পেয়ে সমুদ্রপাড়ের কিটকটে ৩০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে বসে আছি। কয়েকটা রুম পাওয়া গেলেও একেকটা রুম ৭-৮ হাজার টাকা চাচ্ছে। অথচ এসব রুম স্বাভাবিকভাবে ১-২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘রুম ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগটি আমরা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পর্যটক হয়রানি হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘পর্যটন নগরীতে কেউ হয়রানি হলে ছাড় দেয়া হবে না। শীতের শেষ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক আসছে। এটা বজায় থাকবে রমজান পর্যন্ত।’ এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও বেড়েছে পর্যটকের ভিড়। সকাল থেকেই সৈকতের তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন শুঁটকি মার্কেট, লেম্বুর বনসহ সবখানেই পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণত সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, ‘গতকালই (১৫ ফেব্রুয়ারি) আমাদের শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। এখন নতুন করে পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত রুম দেয়ার সুযোগ নেই।’ সরজমিন দেখা গেছে, একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক এসেছে। দেশী পর্যটকের বাইরেও বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। সামনে রমজানের বন্ধ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে হাজার হাজার পর্যটক এসেছে কুয়াকাটায়। দীর্ঘ সৈকতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। পাখির কলকাকলি। সৈকতে বিছানো সারি সারি ঝিনুকের সৌন্দর্য উপভোগ করছে পর্যটকরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন পর্যটকশূন্য ছিল কুয়াকাটা। তবে গতকাল সকাল থেকে দীর্ঘ ৩২ কিলোমিটার সৈকত পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। সকাল বেলার শীতের রেশ কাটতে না কাটতেই সৈকতের পানিতে গোসল ও উল্লাসে মেতে ওঠে হাজারো পর্যটক। রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আগমনে অনেকটা উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ীরাও। পর্যটকের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশও। খুলনা থেকে আসা হারিস দম্পতি বলেন, ‘অল্প সময়ে মধ্যে কুয়াকাটায় এসে পৌঁছেছি। এখানকার পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে।’ তবে সৈকতটির পরিবেশ আরো সুন্দর হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এত বেশি পর্যটক দেখে ব্যবসায়ীরাও অনেকটা উচ্ছ্বসিত। এভাবে প্রতিনিয়ত সৈকতে পর্যটক থাকলে ব্যবসায়ীরা পেছনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এরই মধ্যে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক মো. মনিরুল হক বলেন, ‘পর্যটকের চাপ একটু বেশি রয়েছে। পর্যটকের নিরাপত্তায় বিভিন্ন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে টহল টিম কাজ করছে। কুয়াকাটার প্রতিটি পর্যটন স্পটে আমাদের টিম রয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি।’