মোটা-চিকন ধানের আলাদা দাম: ঠকছেন কৃষকরা

মোঃ ছাইফুল ইসলাম শাহীন, রাণীনগর (নওগাঁ)
০৪ মে, ২০২৩, 3:48 PM

মোটা-চিকন ধানের আলাদা দাম: ঠকছেন কৃষকরা
নওগাঁর রাণীনগরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এবার ধানের ভাল ফলন হলেও বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ঠকছেন কৃষকরা।সরকার মোটা এবং চিকন ধানের একদর নির্ধারণ করায় চিকন ধান উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম পচ্ছেননা অভিযোগ কৃষকদের। ফলে অনেকটাই লোকসানের কবলে পরেছেন।
কৃষকরা বলছেন,বাজারে যেখানে মোটা-চিকন চাল আলাদা দরে বিক্রি হচ্ছে,সেখানে ধান কেন আলাদা দরে বিক্রি হবেনা। তাই সরকারীভাবে চিকন ধানের আলাদা দর নির্ধারনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন,চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় মোট ১৯হাজার ৮০০হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে।এর মধ্যে জিরাশাইল,ব্রি-ধান ৯০,কাটারীভোগসহ চিকন জাতের ধান রোপন করা হয়েছে ১৬হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া মাঝারি ধরনের মোটা জাতের ধান রোপন করা হয়েছে ৩হাজার৮০০হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের ফলন ভাল হচ্ছে। ইতি মধ্যে প্রায় ৮০শতাংশ জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। দপ্তরের সুত্র মতে,এমৌসুমে ধানের গড় উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১লক্ষ ৪৮হাজার ৫০০মেট্রিকটন। তবে এলক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আসা করছেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলার জলকৈ গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম,ভেটি গ্রামের আজাদুল হক,মিরাটের ফরিদুল করিম, করজগ্রামের ছামছুর রহমান,কালীগ্রামের মকবুল হোসেনসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কুষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,বোরো ধান আবাদে এমৌসুমে দফায় দফায় জালানিতেল,রাসায়নিক সার,কিটনাশক ওষুধসহ ধান উৎপাদনে উৎপাদিত সবগুলো পন্যের দাম এবং শ্রমীকের মুজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।
জমির আইল কাটা থেকে শুরু করে হাল চাষ,ধান রোপন,সার,কিটনাশক প্রয়োগ এবং ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) অঞ্চল ভেদে ২১হাজার থেকে প্রায় ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। ধান কেটে প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৩মন পর্যন্ত ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে।বাজারে বিক্রি করতে গেলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী বিঘা প্রতি কোন কোন ক্ষেত্রে দেড়/দুই হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। কৃষকরা জানান,আমাদের এলাকা চিকন ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
আমরা চিকন ধান উৎপাদন করে মোটা ধানের দরেও বিক্রি করতে পারছিনা। সরকার সজ জাতের ধানের একদর বেধে দিয়েছেন ১২শ’টাকা মন। কিন্তু চিকন ধানের আলাদা কোন দর নির্ধারণ করেননি। অথচ বাজারে মোটা চাল এবং চিকন চাল অনেক কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং চিকন ধানের দর আলাদাভাবে নির্ধারনের দাবি জানান কৃষকরা। তারা বলছেন,কিছু দিন আগেও বাজারে ধান যে দামে বিক্রি হয়েছে, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতিমন ধান ৪শ’-৫শ’টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজারে চালের উচ্চ দাম থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আসায় কৃষকদের ঠকাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তারা। ধানের মোকাম খ্যাত উপজেলার আবাদপুকুর হাটের ধান-চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দীন হেলু মন্ডল বলেন,রোববার(৩০এপ্রিল) হাটে প্রতিমন জিরাশাইল ধান (রকম ভেদে) ১১শ’ থেকে ১১শ’ ৮০টাকা,ব্রি-ধান ৯০, ১হাজার ৫০০টাকা,কাটারী ধান ১হাজার ৫০টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। মোকামের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দামে ধান ক্রয়করছেন বলে জানা তিনি। তবে আবহাওয়া ভাল থাকলে ধানের দাম রাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,গত আমন মৌসুমে জিরাশাইল ধান সর্বোচ্চ ১৪শ’ টাকা,কাটারী ধান ১৪শ’ টাকা এবং ব্রি-ধান- ৯০,দুই হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমন ক্রয়/বিক্রয় হয়েছে।রাণীনগর উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন,উৎপাদিত মোটা এবং চিকন ধানের আলাদা দর নিয়ে ক্রয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এমপি মহোদয় এবং জেলা প্রশাসক স্যারকে কৃষকদের দাবির বিষয়টি জানানো হবে।
মোঃ ছাইফুল ইসলাম শাহীন, রাণীনগর (নওগাঁ)
০৪ মে, ২০২৩, 3:48 PM

নওগাঁর রাণীনগরে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। এবার ধানের ভাল ফলন হলেও বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ঠকছেন কৃষকরা।সরকার মোটা এবং চিকন ধানের একদর নির্ধারণ করায় চিকন ধান উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম পচ্ছেননা অভিযোগ কৃষকদের। ফলে অনেকটাই লোকসানের কবলে পরেছেন।
কৃষকরা বলছেন,বাজারে যেখানে মোটা-চিকন চাল আলাদা দরে বিক্রি হচ্ছে,সেখানে ধান কেন আলাদা দরে বিক্রি হবেনা। তাই সরকারীভাবে চিকন ধানের আলাদা দর নির্ধারনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন,চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় মোট ১৯হাজার ৮০০হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে।এর মধ্যে জিরাশাইল,ব্রি-ধান ৯০,কাটারীভোগসহ চিকন জাতের ধান রোপন করা হয়েছে ১৬হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া মাঝারি ধরনের মোটা জাতের ধান রোপন করা হয়েছে ৩হাজার৮০০হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের ফলন ভাল হচ্ছে। ইতি মধ্যে প্রায় ৮০শতাংশ জমির ধান কর্তন শেষ হয়েছে। দপ্তরের সুত্র মতে,এমৌসুমে ধানের গড় উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১লক্ষ ৪৮হাজার ৫০০মেট্রিকটন। তবে এলক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আসা করছেন এই কর্মকর্তা।
উপজেলার জলকৈ গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম,ভেটি গ্রামের আজাদুল হক,মিরাটের ফরিদুল করিম, করজগ্রামের ছামছুর রহমান,কালীগ্রামের মকবুল হোসেনসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কুষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,বোরো ধান আবাদে এমৌসুমে দফায় দফায় জালানিতেল,রাসায়নিক সার,কিটনাশক ওষুধসহ ধান উৎপাদনে উৎপাদিত সবগুলো পন্যের দাম এবং শ্রমীকের মুজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।
জমির আইল কাটা থেকে শুরু করে হাল চাষ,ধান রোপন,সার,কিটনাশক প্রয়োগ এবং ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) অঞ্চল ভেদে ২১হাজার থেকে প্রায় ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। ধান কেটে প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৩মন পর্যন্ত ধানের ফলন পাওয়া যাচ্ছে।বাজারে বিক্রি করতে গেলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী বিঘা প্রতি কোন কোন ক্ষেত্রে দেড়/দুই হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। কৃষকরা জানান,আমাদের এলাকা চিকন ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
আমরা চিকন ধান উৎপাদন করে মোটা ধানের দরেও বিক্রি করতে পারছিনা। সরকার সজ জাতের ধানের একদর বেধে দিয়েছেন ১২শ’টাকা মন। কিন্তু চিকন ধানের আলাদা কোন দর নির্ধারণ করেননি। অথচ বাজারে মোটা চাল এবং চিকন চাল অনেক কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং চিকন ধানের দর আলাদাভাবে নির্ধারনের দাবি জানান কৃষকরা। তারা বলছেন,কিছু দিন আগেও বাজারে ধান যে দামে বিক্রি হয়েছে, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতিমন ধান ৪শ’-৫শ’টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজারে চালের উচ্চ দাম থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আসায় কৃষকদের ঠকাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তারা। ধানের মোকাম খ্যাত উপজেলার আবাদপুকুর হাটের ধান-চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দীন হেলু মন্ডল বলেন,রোববার(৩০এপ্রিল) হাটে প্রতিমন জিরাশাইল ধান (রকম ভেদে) ১১শ’ থেকে ১১শ’ ৮০টাকা,ব্রি-ধান ৯০, ১হাজার ৫০০টাকা,কাটারী ধান ১হাজার ৫০টাকা দরে ক্রয় করা হয়েছে। মোকামের নির্দেশনা অনুযায়ী এই দামে ধান ক্রয়করছেন বলে জানা তিনি। তবে আবহাওয়া ভাল থাকলে ধানের দাম রাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,গত আমন মৌসুমে জিরাশাইল ধান সর্বোচ্চ ১৪শ’ টাকা,কাটারী ধান ১৪শ’ টাকা এবং ব্রি-ধান- ৯০,দুই হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমন ক্রয়/বিক্রয় হয়েছে।রাণীনগর উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন,উৎপাদিত মোটা এবং চিকন ধানের আলাদা দর নিয়ে ক্রয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এমপি মহোদয় এবং জেলা প্রশাসক স্যারকে কৃষকদের দাবির বিষয়টি জানানো হবে।