নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ইসি কতটা প্রস্তুত?

#
news image

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর একটা নির্বাচন আবহওয়া তৈরি হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতেই যে নির্বাচন হবে সোট এখন স্পস্ট নয় অনেক রাজনীতিবিদ ও সিভিল সোসাইটির লোকদের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলো তারা নিজেদের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছন। প্রার্থী বাছাই করছেন। অনেক রাজনৈতিকদল সম্ভাব্য  প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। অনেকে গণসংযোগ করছে এলাকায়। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ইসি কতটা প্রস্তুত? এটা দিনে জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের আশ্বাস দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোয় আস্থার সংকট রয়েই গেছে।

প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীতে কোনো দলের অধিকতর প্রভাব থাকলে নির্বাচনের মাঠ সমতল হওয়া নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। তরুণদের দল এনসিপি এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচন কমিশন একটি দলের হয়ে কাজ করছে। জামায়াতও কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

বহুল প্রত্যাশিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনি সময়সীমার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই মোটামুটি একমত।  ভোটের তারিখের ৪৫ থেকে ৬০ দিন আগে এ তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন করবেন। ওই নির্বাচন করতে বর্তমান কমিশন কতটা প্রস্তুত, সে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

দায়িত্ব নেয়ার সাত মাসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন নানা কারণে আস্থার সংকটে পড়েছেন। নিজেদের কিছু অতিকথন থেকে সৃষ্ট বিতর্ক এবং কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এনসিপি এই কমিশনের প্রতি এক ধরনের অনাস্থার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। 

জামায়াত ইসলামীও কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যা দিয়েছে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে গেজেট শপথ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।

তবে কমিশন মনে করছে তারা আস্থার সংকটে নেই। তাদের দাবি, সংবিধান এবং শপথের সঙ্গে তাদের কথা ও কাজ সাংঘর্ষিক হয়, এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে তারা যেসব কাজ করেছে বা করছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেই করছে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত পুরো কমিশন একমত হয়ে নিচ্ছে বলে সম্প্রতি আমার দেশকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন নিশ্চিত করেন।

ইসির প্রতি আস্থা সংকটের পেছনে অন্তত ছয়টি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত আইনের অধীনে কমিশন গঠন, সরকারের অবস্থানকে গুরুত্ব না দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির ঘোষণা, সংস্কারের আগে সংসদ নির্বাচন করাতে আগ বাড়িয়ে কথা বলা এবং সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির দাবির সঙ্গে ইসির বক্তব্যের সাদৃশ্য মিলে যাওয়া, সরকারের পরামর্শ না নিয়েই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন না করার ঘোষণা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ এবং সর্বশেষ বিএনপি নেতা ইশরাক ইস্যুতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েও তার জন্য অপেক্ষা না করে গেজেট প্রকাশ করা।

গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করলে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর পুরোনো সার্চ কমিটির মাধ্যমে এএমএম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠিত হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন ইসি গঠিত হলেও হাসিনার তৈরি সার্চ কমিটির আদলে গঠন হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে বর্তমান কমিশন।

তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শুরু থেকেই নতুন আইন করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সংলাপে অংশ নিয়ে এনসিপির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্গঠনের দাবি তোলেন। এর আগে দলটি অভিযোগ করেছিলে, কমিশন শুরু থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তারা এই আচরণ মেনে নেবে না।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা মুখে বললেও এখনো সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নতুন ভোটারদের ভোটদানের ব্যবস্থা করতে দৃশ্যমান কিছু দেখাতে পারেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় নির্বাচনী আসন বিন্যাস নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। অবশ্য, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নীতিমালা প্রস্তুত, সাবেক সরকারের আমলে তৈরি করা বিতর্কিত ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত নীতিমালা বাতিলসহ নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো হলেও লন্ডন বৈঠকের প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোটগ্রহন হবে এমনটা ধরে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে।

তবে, কিছু প্রস্তুতি সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় সেক্ষেত্রে কাঙ্খিত অগ্রগতি হচ্ছে না। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর আগেই নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে খোদ কমিশন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত ২১ মে কমিশন নির্বাচনী আচরণ বিধির সংশোধনীর খসড়া নিয়ে বিস্তরিত আলোচনা করেছে। আজকের কমিশন সভায়ও বিষয়টি তোলার কথা রয়েছে। তবে, আরপিও’র সংশোধনীর বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার আগে আচরণ বিধি সংশোধন চূড়ান্ত করাটা কতটা সমীচীন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগে নির্বাচনী আচরণ বিধি চূড়ান্ত করলে আরপিওতে বড় ধরনের সংশোধনী এলে তার আলোকে আবারোও আচরণ বিধি সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে।

সংবিধান ও ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশনের এমন দেড় ডজন সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ঐকমত্য কমিশনের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগেও সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে চিঠি দিয়েছিল। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, সংবিধান ও ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, এমন প্রস্তাবে আমরা একমত হইনি। পরে অবশ্য ইসি থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এসব সংস্কারে ইসির পক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। এসব বক্তব্যও তাদের প্রতি অনাস্থার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

লন্ডন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সমঝোতা হলেও সরকারের আনুষ্ঠানিক বার্তার অপেক্ষায় ইসি। নির্বাচন কবে বা কখন এবং কবে তফশিল ঘোষণা করা যায়, সে সম্পর্কে সরকারের পরামর্শের দিকে তাকিয়ে আছে সংস্থাটি। তবে নির্বাচন যখনই হোক, তার আগে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে রাখবে কমিশন।

লন্ডন বৈঠকের প্রেক্ষাপটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটের তারিখ নির্ধারণে সরকারের কাছ থেকে তারা কোনো ক্লিয়ারেন্স পাননি। কখন ভোট হবে, সেটা সরকারের বিষয়। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক তারা নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম গণমাধ্যমকে বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্য ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এটাকে বড় করে দেখতে চাই না। কমিশন একটি ভালো ভোট করতে চান সেটা তাদের কিছু কার্যক্রম কথাবার্তায় মনে হয়। বাস্তবতা হলো তাদের এখনো কোন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নেই। তারা কোন পর্যায়ের একটি নির্বাচনও এখনো করেনি। আমাদেরসময়.কম

অনলাইন ডেস্ক

২০ জুন, ২০২৫,  4:25 PM

news image

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর একটা নির্বাচন আবহওয়া তৈরি হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারিতেই যে নির্বাচন হবে সোট এখন স্পস্ট নয় অনেক রাজনীতিবিদ ও সিভিল সোসাইটির লোকদের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলো তারা নিজেদের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছন। প্রার্থী বাছাই করছেন। অনেক রাজনৈতিকদল সম্ভাব্য  প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। অনেকে গণসংযোগ করছে এলাকায়। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ইসি কতটা প্রস্তুত? এটা দিনে জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের আশ্বাস দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোয় আস্থার সংকট রয়েই গেছে।

প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীতে কোনো দলের অধিকতর প্রভাব থাকলে নির্বাচনের মাঠ সমতল হওয়া নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। তরুণদের দল এনসিপি এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে, নির্বাচন কমিশন একটি দলের হয়ে কাজ করছে। জামায়াতও কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

বহুল প্রত্যাশিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনি সময়সীমার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলই মোটামুটি একমত।  ভোটের তারিখের ৪৫ থেকে ৬০ দিন আগে এ তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল হবে। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন করবেন। ওই নির্বাচন করতে বর্তমান কমিশন কতটা প্রস্তুত, সে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

দায়িত্ব নেয়ার সাত মাসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন নানা কারণে আস্থার সংকটে পড়েছেন। নিজেদের কিছু অতিকথন থেকে সৃষ্ট বিতর্ক এবং কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এনসিপি এই কমিশনের প্রতি এক ধরনের অনাস্থার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। 

জামায়াত ইসলামীও কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যা দিয়েছে। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে গেজেট শপথ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।

তবে কমিশন মনে করছে তারা আস্থার সংকটে নেই। তাদের দাবি, সংবিধান এবং শপথের সঙ্গে তাদের কথা ও কাজ সাংঘর্ষিক হয়, এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। ইতোমধ্যে তারা যেসব কাজ করেছে বা করছে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকেই করছে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত পুরো কমিশন একমত হয়ে নিচ্ছে বলে সম্প্রতি আমার দেশকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন নিশ্চিত করেন।

ইসির প্রতি আস্থা সংকটের পেছনে অন্তত ছয়টি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে প্রণীত আইনের অধীনে কমিশন গঠন, সরকারের অবস্থানকে গুরুত্ব না দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির ঘোষণা, সংস্কারের আগে সংসদ নির্বাচন করাতে আগ বাড়িয়ে কথা বলা এবং সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির দাবির সঙ্গে ইসির বক্তব্যের সাদৃশ্য মিলে যাওয়া, সরকারের পরামর্শ না নিয়েই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন না করার ঘোষণা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ এবং সর্বশেষ বিএনপি নেতা ইশরাক ইস্যুতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েও তার জন্য অপেক্ষা না করে গেজেট প্রকাশ করা।

গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করলে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর পুরোনো সার্চ কমিটির মাধ্যমে এএমএম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠিত হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন ইসি গঠিত হলেও হাসিনার তৈরি সার্চ কমিটির আদলে গঠন হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে বর্তমান কমিশন।

তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি বলে ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শুরু থেকেই নতুন আইন করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে সংলাপে অংশ নিয়ে এনসিপির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্গঠনের দাবি তোলেন। এর আগে দলটি অভিযোগ করেছিলে, কমিশন শুরু থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তারা এই আচরণ মেনে নেবে না।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা মুখে বললেও এখনো সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নতুন ভোটারদের ভোটদানের ব্যবস্থা করতে দৃশ্যমান কিছু দেখাতে পারেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় নির্বাচনী আসন বিন্যাস নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। অবশ্য, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নীতিমালা প্রস্তুত, সাবেক সরকারের আমলে তৈরি করা বিতর্কিত ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত নীতিমালা বাতিলসহ নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো হলেও লন্ডন বৈঠকের প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোটগ্রহন হবে এমনটা ধরে নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে।

তবে, কিছু প্রস্তুতি সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় সেক্ষেত্রে কাঙ্খিত অগ্রগতি হচ্ছে না। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর আগেই নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়ে খোদ কমিশন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত ২১ মে কমিশন নির্বাচনী আচরণ বিধির সংশোধনীর খসড়া নিয়ে বিস্তরিত আলোচনা করেছে। আজকের কমিশন সভায়ও বিষয়টি তোলার কথা রয়েছে। তবে, আরপিও’র সংশোধনীর বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ার আগে আচরণ বিধি সংশোধন চূড়ান্ত করাটা কতটা সমীচীন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগে নির্বাচনী আচরণ বিধি চূড়ান্ত করলে আরপিওতে বড় ধরনের সংশোধনী এলে তার আলোকে আবারোও আচরণ বিধি সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে।

সংবিধান ও ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশনের এমন দেড় ডজন সুপারিশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ঐকমত্য কমিশনের কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগেও সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে চিঠি দিয়েছিল। সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছিলেন, সংবিধান ও ইসির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, এমন প্রস্তাবে আমরা একমত হইনি। পরে অবশ্য ইসি থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এসব সংস্কারে ইসির পক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। এসব বক্তব্যও তাদের প্রতি অনাস্থার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

লন্ডন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সমঝোতা হলেও সরকারের আনুষ্ঠানিক বার্তার অপেক্ষায় ইসি। নির্বাচন কবে বা কখন এবং কবে তফশিল ঘোষণা করা যায়, সে সম্পর্কে সরকারের পরামর্শের দিকে তাকিয়ে আছে সংস্থাটি। তবে নির্বাচন যখনই হোক, তার আগে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এগিয়ে রাখবে কমিশন।

লন্ডন বৈঠকের প্রেক্ষাপটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটের তারিখ নির্ধারণে সরকারের কাছ থেকে তারা কোনো ক্লিয়ারেন্স পাননি। কখন ভোট হবে, সেটা সরকারের বিষয়। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক তারা নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম গণমাধ্যমকে বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্য ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এটাকে বড় করে দেখতে চাই না। কমিশন একটি ভালো ভোট করতে চান সেটা তাদের কিছু কার্যক্রম কথাবার্তায় মনে হয়। বাস্তবতা হলো তাদের এখনো কোন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নেই। তারা কোন পর্যায়ের একটি নির্বাচনও এখনো করেনি। আমাদেরসময়.কম