সুইস ব্যাংকে ৩৩ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশি আমানত, অর্থ পাচারের নতুন সংকেত?

অনলাইন ডেস্ক
২০ জুন, ২০২৫, 12:58 AM

সুইস ব্যাংকে ৩৩ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশি আমানত, অর্থ পাচারের নতুন সংকেত?
বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিক ও ব্যাংকের আমানতের পরিমাণে ঘটেছে বিস্ময়কর উল্লম্ফন। ২০২৩ সালে যেখানে এই অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪ সালের শেষে তা লাফিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁতে— যা প্রায় ৩৩ গুণ বৃদ্ধি। টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯.৬৯ টাকা হিসেবে)।
এই হিসাব প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামে তাদের ব্যাংকে থাকা দায় ও সম্পদের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে রাখা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭৬.৬১ মিলিয়ন ফ্রাঁ, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৬৫ গুণ বেশি। যদিও ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত কিছুটা কমেছে, দাঁড়িয়েছে ১২.৬২ মিলিয়ন ফ্রাঁতে— যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক কোনো ব্যাংকিং লেনদেন নয়। বরং এতে অর্থ পাচার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরাপদ গন্তব্যে সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এর পেছনে বড় কারণ হতে পারে।
এসএনবি’র এই পরিসংখ্যানে কেবল টাকার অঙ্ক দেখানো হয়। কোন অর্থ বৈধ, আর কোনটা অবৈধ— সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না। এছাড়া, যদি কেউ নিজের নাগরিকত্ব গোপন রেখে বা অন্য দেশের পরিচয়ে অর্থ জমা রাখেন, তবে সে হিসাবও এই তালিকায় আসে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের শতকরা ৯৫ ভাগই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈধ পাওনা— মূলত আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেনের অর্থ। তবে ব্যক্তিগত ও অপ্রকাশ্য উৎস থেকে অর্থ জমা রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন (এইওআই)-এ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি বাংলাদেশ। অথচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান ২০১৮ সাল থেকেই এতে যুক্ত।
২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বের ১০৮টি দেশের সঙ্গে ৩৭ লাখ ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করলেও, বাংলাদেশ সেই তালিকায় ছিল না। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অনাগ্রহই বাংলাদেশিদের বিদেশে অর্থ লুকিয়ে রাখার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে ৬৭ জন বাংলাদেশির ব্যাংক তথ্য চেয়ে আবেদন করে। তবে সুইজারল্যান্ড মাত্র একজনের তথ্য দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছায়নি বলে তারা বাধ্য নয় তথ্য দিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা কমতে থাকায় অনেকেই এখন লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো বিকল্প ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’-এর দিকে ঝুঁকছেন।
এই বিস্ফোরক উল্লম্ফনের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদরা বলছেন— কেবল প্রতিবেদন প্রকাশ নয়, অর্থের উৎস খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণই এখন সবচেয়ে জরুরি। সুইস ব্যাংকে আমানতের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রশ্ন তো তোলে বটেই, দেশ থেকে সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার অভাবের পরোক্ষ প্রমাণও দেয়।
অনলাইন ডেস্ক
২০ জুন, ২০২৫, 12:58 AM

বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিক ও ব্যাংকের আমানতের পরিমাণে ঘটেছে বিস্ময়কর উল্লম্ফন। ২০২৩ সালে যেখানে এই অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪ সালের শেষে তা লাফিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁতে— যা প্রায় ৩৩ গুণ বৃদ্ধি। টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৪৯.৬৯ টাকা হিসেবে)।
এই হিসাব প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামে তাদের ব্যাংকে থাকা দায় ও সম্পদের বার্ষিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে রাখা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭৬.৬১ মিলিয়ন ফ্রাঁ, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৬৫ গুণ বেশি। যদিও ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত কিছুটা কমেছে, দাঁড়িয়েছে ১২.৬২ মিলিয়ন ফ্রাঁতে— যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক কোনো ব্যাংকিং লেনদেন নয়। বরং এতে অর্থ পাচার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরাপদ গন্তব্যে সম্পদ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এর পেছনে বড় কারণ হতে পারে।
এসএনবি’র এই পরিসংখ্যানে কেবল টাকার অঙ্ক দেখানো হয়। কোন অর্থ বৈধ, আর কোনটা অবৈধ— সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না। এছাড়া, যদি কেউ নিজের নাগরিকত্ব গোপন রেখে বা অন্য দেশের পরিচয়ে অর্থ জমা রাখেন, তবে সে হিসাবও এই তালিকায় আসে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের শতকরা ৯৫ ভাগই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বৈধ পাওনা— মূলত আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেনের অর্থ। তবে ব্যক্তিগত ও অপ্রকাশ্য উৎস থেকে অর্থ জমা রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন (এইওআই)-এ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি বাংলাদেশ। অথচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান ২০১৮ সাল থেকেই এতে যুক্ত।
২০২৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বের ১০৮টি দেশের সঙ্গে ৩৭ লাখ ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করলেও, বাংলাদেশ সেই তালিকায় ছিল না। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অনাগ্রহই বাংলাদেশিদের বিদেশে অর্থ লুকিয়ে রাখার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে ৬৭ জন বাংলাদেশির ব্যাংক তথ্য চেয়ে আবেদন করে। তবে সুইজারল্যান্ড মাত্র একজনের তথ্য দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছায়নি বলে তারা বাধ্য নয় তথ্য দিতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা কমতে থাকায় অনেকেই এখন লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো বিকল্প ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’-এর দিকে ঝুঁকছেন।
এই বিস্ফোরক উল্লম্ফনের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদরা বলছেন— কেবল প্রতিবেদন প্রকাশ নয়, অর্থের উৎস খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণই এখন সবচেয়ে জরুরি। সুইস ব্যাংকে আমানতের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রশ্ন তো তোলে বটেই, দেশ থেকে সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার অভাবের পরোক্ষ প্রমাণও দেয়।