বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার ঘর-বা‌ড়িতে ফাটল আতংকে গ্রামবাসী

#
news image

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার একটি গ্রামের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। ফলে ওই গ্রামবাসীরা আত‌ঙ্কে বসবাস করছে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ একাধিক বার আবেদন করেও খনি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাড়ি নির্মাণের ত্রুটির কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামবাসীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (৯মে) দেখা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মূল গেটের তিনশ গজ দ‌ক্ষি‌ণে মৌপুকুর গ্রামে বেশিরভাগ বা‌ড়ির ঘরের দেয়ালেই ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, এই ফাটল আগে স্বল্প থাকলেও সম্প্র‌তিকালে এগুলো বড় আকার ধারণ করছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে তারা ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছেন। তাদের অভিযোগ প্রায় রাতেই খনির ভূগর্ভে ডিনামাইট ব্লাস্টের কারণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এই কম্পনের ফলে ঘরবাড়িগুলো ফেটে যাচ্ছে এবং পুরোনো ফাটলগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। খনির কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল গুলো থেকে পানি উঠছে না। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। 

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি ২০০৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরুর পর ২০০৬ সাল থেকেই খনি সংলগ্ন গ্রামগুলোতে শুরু হয় ভূমি অবনমন  (ভুমি দেবে যাওয়া)। ওই সময় খনি কর্তৃপক্ষ ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৬৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে মৌপুকুর গ্রামটি দেবে গিয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই স্থানের বাসিন্দারা ওখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে নতুন করে বসতি স্থাপন করে মৌপুকুর (গোপালপাড়া) নামে একটি গ্রাম প্র‌তিষ্ঠা ক‌রে। সেখানেও নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রথমে তারা কিছুই মনে না করলেও বর্তমানে ধীরে ধীরে সেই ফাটল বৃদ্ধি পেয়ে বড় আকার ধারণ করায় তারা আতংকিত হয়ে পড়েছে। 

বিষয়টি নিয়ে মৌপুকুর (গোপালপাড়া) গ্রামের শহিদুল, সিরাজুল ইসলাম, অহিদুল হক, বিলকিস বেগমসহ অনেকেই বলেন, ২০১০ সালে এখানে আমরা নতুন করে বসতি গড়ে তুলি। সেই সময় খনি কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার বাঁধা নিষেধ ক‌রেনি। এই গ্রামে বর্তমানে ২০/২২টি পরিবারের বসতি। গত দুই বছর পূর্বে হঠাৎ করেই গ্রামের কিছু বাড়িতে আংশিক ফাটল দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে বাড়তে এখন বড় আকার ধারণ করেছে। এই গ্রামের মাটির নিচে প্রতিরাতে কয়লা উত্তোলনের সময় বোমা ব্লাস্ট করে, তখন ঘরবাড়িতে প্রচন্ড ঝাঁকুনি ও কম্পনের সৃষ্টি হয়। ঝাঁকুনির ফলে অনেক সময় ঘরের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ পড়ে যায়।  ওই গ্রামের লায়লা বেগম বলেন, একদিন রাতে তো ঘুমের ঘরে প্রচন্ড ঝাঁকুনির কারণে উঠে ঘর থেকে দৌঁড় দেই। তখন মনে হচ্ছিল ভূমিকম্পে এই বুঝি ঘর বাড়ি ভেংগে পড়ছে।

বিলকিছ বেগম বলেন, খনির বোমা ব্লাস্টের জন্য ঝাঁকুনিতে ফেটে যাওয়া বাড়িতেই ছোট ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ বাবা-মা কে নিয়ে নিঘুর্ম রাত কাটাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খনি কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে।

মৌপুকুর (গোপালপাড়া) গ্রামের সিনিয়র প্রভাষক সাদেকুল ইসলাম জানান, আমাদের আদি নিবাস ছিল বতর্মান নিবাস থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে। ওই জায়গা খনি কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করলে এখানে এসে বাড়ি নির্মাণ করি। আমাদের বাড়ি-ঘরে ফাটলের বিষয় চলতি বছর জানুয়ারী মাসে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করি কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় পুনরায় ৯ এপ্রিল খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আরও একটি আবেদন করি। এসময় বিষয়টি নিয়ে মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরী এর সাথে দেখা করতে বলেন। তার সাথে দেখা করলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জরিপ করে দেখে পেট্রোবাংলাকে জানাবো। এরপর কী হয় বুঝা যাবে। তারপর থেকে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি খনি কর্তৃপক্ষ। 

বিষয়টি নিয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড এর  ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরী মনিটরিং করছেন। তবে তিনি বিষয়টি অবগত আছেন।  তাছাড়া বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির কারণেও ফাটল ধরতে পারে। বোম্ব ব্লাস্ট ঝাঁকুনি ও কম্পনের বিষয়টি মাইনিং এ একটি স্বাভাবিক বিষয়।

মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী ওই সমস্ত বিষয় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সপ্তাহ খানেক আগে চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোকাররম হো‌সেন, ফুলবাড়ী (‌দিনাজপুর)

০৯ মে, ২০২৩,  3:07 PM

news image

দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এলাকার একটি গ্রামের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। ফলে ওই গ্রামবাসীরা আত‌ঙ্কে বসবাস করছে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ একাধিক বার আবেদন করেও খনি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাড়ি নির্মাণের ত্রুটির কারণে ফাটল দেখা দিতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামবাসীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (৯মে) দেখা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মূল গেটের তিনশ গজ দ‌ক্ষি‌ণে মৌপুকুর গ্রামে বেশিরভাগ বা‌ড়ির ঘরের দেয়ালেই ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, এই ফাটল আগে স্বল্প থাকলেও সম্প্র‌তিকালে এগুলো বড় আকার ধারণ করছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে তারা ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছেন। তাদের অভিযোগ প্রায় রাতেই খনির ভূগর্ভে ডিনামাইট ব্লাস্টের কারণে ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এই কম্পনের ফলে ঘরবাড়িগুলো ফেটে যাচ্ছে এবং পুরোনো ফাটলগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। খনির কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল গুলো থেকে পানি উঠছে না। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। 

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিটি ২০০৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরুর পর ২০০৬ সাল থেকেই খনি সংলগ্ন গ্রামগুলোতে শুরু হয় ভূমি অবনমন  (ভুমি দেবে যাওয়া)। ওই সময় খনি কর্তৃপক্ষ ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৬৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে মৌপুকুর গ্রামটি দেবে গিয়ে জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই স্থানের বাসিন্দারা ওখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে নতুন করে বসতি স্থাপন করে মৌপুকুর (গোপালপাড়া) নামে একটি গ্রাম প্র‌তিষ্ঠা ক‌রে। সেখানেও নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রথমে তারা কিছুই মনে না করলেও বর্তমানে ধীরে ধীরে সেই ফাটল বৃদ্ধি পেয়ে বড় আকার ধারণ করায় তারা আতংকিত হয়ে পড়েছে। 

বিষয়টি নিয়ে মৌপুকুর (গোপালপাড়া) গ্রামের শহিদুল, সিরাজুল ইসলাম, অহিদুল হক, বিলকিস বেগমসহ অনেকেই বলেন, ২০১০ সালে এখানে আমরা নতুন করে বসতি গড়ে তুলি। সেই সময় খনি কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার বাঁধা নিষেধ ক‌রেনি। এই গ্রামে বর্তমানে ২০/২২টি পরিবারের বসতি। গত দুই বছর পূর্বে হঠাৎ করেই গ্রামের কিছু বাড়িতে আংশিক ফাটল দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে বাড়তে এখন বড় আকার ধারণ করেছে। এই গ্রামের মাটির নিচে প্রতিরাতে কয়লা উত্তোলনের সময় বোমা ব্লাস্ট করে, তখন ঘরবাড়িতে প্রচন্ড ঝাঁকুনি ও কম্পনের সৃষ্টি হয়। ঝাঁকুনির ফলে অনেক সময় ঘরের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ পড়ে যায়।  ওই গ্রামের লায়লা বেগম বলেন, একদিন রাতে তো ঘুমের ঘরে প্রচন্ড ঝাঁকুনির কারণে উঠে ঘর থেকে দৌঁড় দেই। তখন মনে হচ্ছিল ভূমিকম্পে এই বুঝি ঘর বাড়ি ভেংগে পড়ছে।

বিলকিছ বেগম বলেন, খনির বোমা ব্লাস্টের জন্য ঝাঁকুনিতে ফেটে যাওয়া বাড়িতেই ছোট ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ বাবা-মা কে নিয়ে নিঘুর্ম রাত কাটাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খনি কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে।

মৌপুকুর (গোপালপাড়া) গ্রামের সিনিয়র প্রভাষক সাদেকুল ইসলাম জানান, আমাদের আদি নিবাস ছিল বতর্মান নিবাস থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে। ওই জায়গা খনি কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করলে এখানে এসে বাড়ি নির্মাণ করি। আমাদের বাড়ি-ঘরে ফাটলের বিষয় চলতি বছর জানুয়ারী মাসে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করি কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় পুনরায় ৯ এপ্রিল খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আরও একটি আবেদন করি। এসময় বিষয়টি নিয়ে মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরী এর সাথে দেখা করতে বলেন। তার সাথে দেখা করলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জরিপ করে দেখে পেট্রোবাংলাকে জানাবো। এরপর কী হয় বুঝা যাবে। তারপর থেকে আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি খনি কর্তৃপক্ষ। 

বিষয়টি নিয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড এর  ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরী মনিটরিং করছেন। তবে তিনি বিষয়টি অবগত আছেন।  তাছাড়া বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির কারণেও ফাটল ধরতে পারে। বোম্ব ব্লাস্ট ঝাঁকুনি ও কম্পনের বিষয়টি মাইনিং এ একটি স্বাভাবিক বিষয়।

মহাব্যবস্থাপক প্লানিং এন্ড এক্সপ্লোরেশন ও সারফেস অপারেশন, অতিরিক্ত দায়িত্ব আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী ওই সমস্ত বিষয় চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখভাল করেন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সপ্তাহ খানেক আগে চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।