ধান ও চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে খাদ্যের ৮ টিম মাঠে

#
news image

সারা দেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করা ও অবৈধ মুজদদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযানে নেমেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আটটি টিম। অভিযান পরিচালনার জন্য ডিসি ও ইউএনও এবং এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে দেওয়া চিঠি হচ্ছে। একইসঙ্গে অবৈধ মজুদের তথ্য জানাতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরদিনই গতকাল মঙ্গলবার এই অভিযান শুরু করেছে সরকার। 
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিমের অভিযানের খবর পেয়ে রাজধানীর বাবুবাজারে চালের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেয়। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান দোকানীরা। 
এদিকে ভরা মৌসুমে ধান-চালের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় বসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কেউ ধান ও চালের অবৈধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা এবং অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অভিযান চালানোর জন্য আটটি টিম গঠন করা এবং আজ (গতকাল) থেকেই অভিযান শুরু করা।  
পাশাপাশি অবৈধ মজুদদারি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) আধা-সরকারি চিঠি পাঠানো এবং এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও এ বিষয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
এছাড়া শিগগিরই কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত সভা আয়োজন করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। 
ধান-চালের অবৈধ মজুত ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি ও খাদ্য অধিদফতরের পাঁচটিট টিম অভিযানে নেমেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান চলবে জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ধান ও চালের অবৈধ মজুদের উৎস জেনেই অভিযান চালানো হবে। অবৈধ মজুদদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযানের সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। অবৈধ মজুতের তথ্য জানাতে কন্ট্রোল রুমের +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০-৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩-০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। 
কি আছে আইনে: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান বলেন, ধান-চালের অবৈধ মজুদের উৎস জেনেই সারা দেশে অভিযান হবে। বিপণন পর্যায়ে কোন দোকানে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে সেটা আইনে বলা আছে। যদি অবৈধ মজুদ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, ১৯৫৬ সালের অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে বলা আছে কোন পর্যায়ে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি আদেশ জারি করা হয়। সেই আলোকেই অভিযান চলবে।
২০১১ সালে জারি করা বিধিতে বলা হয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্য সামগ্রী তার অধিকারে রাখতে পারবে না।
অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ তিনশ টন ধান অথবা চাল ত্রিশ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৫ টন ধান অথবা চাল ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।
চালকল মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুদ রাখা যাবে। আর হাস্কিং মিল মালিকরা সর্বোচ্চ একশ টন ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।
চালবাজি: এখন বোরো ধান ওঠার ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে নতুন চাল নেই। সয়াবিন তেলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের তেলেসমাতি কারবারে মধ্যেই মে মাসের শুরু থেকে চালের বাজার চড়তে শুরু করে। ব্যবসয়ীরা ধান-চাল মজুদ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যে চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম এত বেশি কেন, অবৈধ মজুদ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগের দিন রোববার মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, বড় বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভালো মুনাফার আশায় ধানের মজুদ শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ‘মজুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও উৎপাদনে যাচ্ছে না। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যা করণীয় তার সবই করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী মজুদদারির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশে থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী। ওই সময় তিনি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভ না করে ভোক্তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বৈঠকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে নতুন ধান আসলেও দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় প্রতিমণ ধানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুণতে হচ্ছে।
অভিযানের খবরে পালিয়েছে দোকানীরা: খাদ্য মন্ত্রণালয়ে দুপুরে জরুরি সভার পরেই বিকালে রাজধানীর বাবু বাজার, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে অভিযানে নামে তিনটি টিম। 
মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিফতরেরর একটি টিম অভিযান চালালে দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। এ সময় টিম সদস্যদের বারবার অনুরোধের পরও দোকানে আসেননি দোকানিরা। তবে তার কিছুক্ষণ আগে মূল্য তালিকায় অসঙ্গতি থাকায় ওই বাজারের এসএম রাইস এজেন্সি ও আনোয়ার ট্রেডার্স নামের দুটি দোকানকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার বলেন, আমরা আজ এসেছি চালের দাম কেন বেড়েছে, সেটার খোঁজ নিতে। আমাদের আসার খবরে অনেক চাল ব্যবসায়ী দোকান থেকে পালিয়ে যান। পরে তাদের অনেক অনুরোধ করা হলেও তারা দোকানে ফিরে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, চাল যে দামে কেনেন, সেখান থেকে দোকান পর্যন্ত আসতে প্রতি কেজিতে তাদের আরও দুই টাকা খরচ পড়ে। পরে এক টাকা (প্রতি কেজি) লাভে সেই চাল বিক্রি করেন তারা। যদিও মূল্য তালিকায় প্রতি কেজিতে ১০-১২ টাকা বেশি দেখা গেছে।
ফাহমিনা আক্তার বলেন, দোকানিরা অভিযোগ করেন, তারা টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছেন না। মিল মালিকরা তাদের বলছেন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। তাছাড়া অনেক ব্যবসায়ী অগ্রিম টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছেন না। এজন্য পাইকারি বাজারেও চড়া দামে চাল বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
জরিমানা এড়াতে দোকানীরা এমন করেছেন বলে দাবি করেছেন কৃষি মার্কেটের পাইকারি চালবাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু।
বাবুবাজারে মঙ্গলবার বিকেলে চালের অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযানে নামে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল। তবে তারা ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পান চার-পাঁচশ দোকানের মধ্যে ৫-৬টি খোলা, বাকি দোকানগুলো বন্ধ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে অভিযানে আসা দলটি বাজারের হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে ফুড গ্রেড লাইসেন্স, মজুত, মজুতের সক্ষমতার বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পান। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এক ব্যবসায়ীর লাইসেন্স জব্দ করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক, এখানে আসার পর বেশিরভাগ দোকান বন্ধ পেয়েছি। খালা থাকা কয়েকটি দোকানে গেলেও সেখানে মালিকদের পাইনি। তাই তাদের লাইসেন্সটাও হাতে পাইনি। তাদের কিছুটা সময় দিয়েছি। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেরকমভাবে আমরা কিছু পাইনি। অভিযান চলবে।’
বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের চালের মার্কেট বন্ধ হয়ে যায় বিকাল ৪টায়। এর পরে আসলে তো পাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ জুন, ২০২২,  12:48 AM

news image

সারা দেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করা ও অবৈধ মুজদদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযানে নেমেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আটটি টিম। অভিযান পরিচালনার জন্য ডিসি ও ইউএনও এবং এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে দেওয়া চিঠি হচ্ছে। একইসঙ্গে অবৈধ মজুদের তথ্য জানাতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরদিনই গতকাল মঙ্গলবার এই অভিযান শুরু করেছে সরকার। 
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিমের অভিযানের খবর পেয়ে রাজধানীর বাবুবাজারে চালের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেয়। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান দোকানীরা। 
এদিকে ভরা মৌসুমে ধান-চালের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় বসেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কেউ ধান ও চালের অবৈধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কিনা এবং অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অভিযান চালানোর জন্য আটটি টিম গঠন করা এবং আজ (গতকাল) থেকেই অভিযান শুরু করা।  
পাশাপাশি অবৈধ মজুদদারি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) আধা-সরকারি চিঠি পাঠানো এবং এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও এ বিষয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
এছাড়া শিগগিরই কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত সভা আয়োজন করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। 
ধান-চালের অবৈধ মজুত ঠেকাতে মঙ্গলবার থেকেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি ও খাদ্য অধিদফতরের পাঁচটিট টিম অভিযানে নেমেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অভিযান চলবে জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ধান ও চালের অবৈধ মজুদের উৎস জেনেই অভিযান চালানো হবে। অবৈধ মজুদদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযানের সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। অবৈধ মজুতের তথ্য জানাতে কন্ট্রোল রুমের +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০-৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩-০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। 
কি আছে আইনে: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান বলেন, ধান-চালের অবৈধ মজুদের উৎস জেনেই সারা দেশে অভিযান হবে। বিপণন পর্যায়ে কোন দোকানে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে সেটা আইনে বলা আছে। যদি অবৈধ মজুদ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, ১৯৫৬ সালের অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে বলা আছে কোন পর্যায়ে কতটুকু মজুদ রাখা যাবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি আদেশ জারি করা হয়। সেই আলোকেই অভিযান চলবে।
২০১১ সালে জারি করা বিধিতে বলা হয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্য সামগ্রী তার অধিকারে রাখতে পারবে না।
অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ তিনশ টন ধান অথবা চাল ত্রিশ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৫ টন ধান অথবা চাল ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।
চালকল মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুদ রাখা যাবে। আর হাস্কিং মিল মালিকরা সর্বোচ্চ একশ টন ১৫ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।
চালবাজি: এখন বোরো ধান ওঠার ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে নতুন চাল নেই। সয়াবিন তেলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের তেলেসমাতি কারবারে মধ্যেই মে মাসের শুরু থেকে চালের বাজার চড়তে শুরু করে। ব্যবসয়ীরা ধান-চাল মজুদ করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যে চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম এত বেশি কেন, অবৈধ মজুদ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগের দিন রোববার মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, বড় বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভালো মুনাফার আশায় ধানের মজুদ শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ‘মজুদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও উৎপাদনে যাচ্ছে না। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যা করণীয় তার সবই করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী মজুদদারির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশে থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী। ওই সময় তিনি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাভ না করে ভোক্তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বৈঠকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে নতুন ধান আসলেও দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় প্রতিমণ ধানে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি গুণতে হচ্ছে।
অভিযানের খবরে পালিয়েছে দোকানীরা: খাদ্য মন্ত্রণালয়ে দুপুরে জরুরি সভার পরেই বিকালে রাজধানীর বাবু বাজার, কারওয়ান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে অভিযানে নামে তিনটি টিম। 
মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিফতরেরর একটি টিম অভিযান চালালে দোকান ছেড়ে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। এ সময় টিম সদস্যদের বারবার অনুরোধের পরও দোকানে আসেননি দোকানিরা। তবে তার কিছুক্ষণ আগে মূল্য তালিকায় অসঙ্গতি থাকায় ওই বাজারের এসএম রাইস এজেন্সি ও আনোয়ার ট্রেডার্স নামের দুটি দোকানকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার বলেন, আমরা আজ এসেছি চালের দাম কেন বেড়েছে, সেটার খোঁজ নিতে। আমাদের আসার খবরে অনেক চাল ব্যবসায়ী দোকান থেকে পালিয়ে যান। পরে তাদের অনেক অনুরোধ করা হলেও তারা দোকানে ফিরে আসেননি।
তিনি আরও বলেন, চাল যে দামে কেনেন, সেখান থেকে দোকান পর্যন্ত আসতে প্রতি কেজিতে তাদের আরও দুই টাকা খরচ পড়ে। পরে এক টাকা (প্রতি কেজি) লাভে সেই চাল বিক্রি করেন তারা। যদিও মূল্য তালিকায় প্রতি কেজিতে ১০-১২ টাকা বেশি দেখা গেছে।
ফাহমিনা আক্তার বলেন, দোকানিরা অভিযোগ করেন, তারা টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছেন না। মিল মালিকরা তাদের বলছেন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে। তাছাড়া অনেক ব্যবসায়ী অগ্রিম টাকা দিয়েও চাল পাচ্ছেন না। এজন্য পাইকারি বাজারেও চড়া দামে চাল বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
জরিমানা এড়াতে দোকানীরা এমন করেছেন বলে দাবি করেছেন কৃষি মার্কেটের পাইকারি চালবাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মন্টু।
বাবুবাজারে মঙ্গলবার বিকেলে চালের অবৈধ মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযানে নামে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দল। তবে তারা ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পান চার-পাঁচশ দোকানের মধ্যে ৫-৬টি খোলা, বাকি দোকানগুলো বন্ধ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে অভিযানে আসা দলটি বাজারের হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে ফুড গ্রেড লাইসেন্স, মজুত, মজুতের সক্ষমতার বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পান। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এক ব্যবসায়ীর লাইসেন্স জব্দ করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক, এখানে আসার পর বেশিরভাগ দোকান বন্ধ পেয়েছি। খালা থাকা কয়েকটি দোকানে গেলেও সেখানে মালিকদের পাইনি। তাই তাদের লাইসেন্সটাও হাতে পাইনি। তাদের কিছুটা সময় দিয়েছি। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেরকমভাবে আমরা কিছু পাইনি। অভিযান চলবে।’
বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের চালের মার্কেট বন্ধ হয়ে যায় বিকাল ৪টায়। এর পরে আসলে তো পাবে না।