অবৈধ মজুদে অস্থিতিশীল চালের বাজার

হরলাল রায় সাগর
৩০ মে, ২০২২, 8:16 PM

অবৈধ মজুদে অস্থিতিশীল চালের বাজার
আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে আসতে পারে কঠোর সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি আনবে না: খাদ্যমন্ত্রী
ভরা মৌসুমেও বাজারে নতুন চাল না থাকা এবং বাড়তি দামের কারনে ঘুরে ফিরে চালের অবৈধ মজুতের কথাই উঠে এসেছে গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায়।
ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কিনে মজুদ করে রাখায় ভরা মৌসুমেও বাজারে নতুন চাল নাই। পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেট হাউসও ধান-চাল কিনে মজুদ করছে এবং প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে বলে জানানো হয় এই সভায় ।
এসব কারণে ভরা মৌসুমেও চালারে বাজার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বিধায় মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধান কিনে মজুত করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছে, ভাবছে ধান কিনলেই লাভ। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি বয়ে আনবে না বলে তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন।
মন্ত্রী গতকাল তার দপ্তর থেকে বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না। যার ফলে বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না।
এখন বাজারে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের পুরাতন চাল। তাহলে নতুন ধান যাচ্ছে কোথায় বলেও মিল মালিকদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে দেওয়া হবে না। কে কত পরিমাণ ধান কিনছেন এবং কে কত পরিমাণ চাল ক্র্যাসিং করে বাজারে ছাড়ছেন তা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের রিপোর্ট আকারে পাঠাতে হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ধান চালের ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বাজার থেকে ধান কিনে মজুত করছেন এবং প্যাকেটজাত করছেন। প্যাকেটজাত চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে।
এসময় ধান চালের ব্যবসায় সম্পৃক্ত কর্পোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বৈঠক করতে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ভারত থেকে গম দেওয়া বন্ধ হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অথচ শুধু ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে গম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছে।
বোরো সংগ্রহ সফল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মজুতদারী ও গুজব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি বাজার মনিটরিং চালিয়ে যেতে হবে। কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কে কোন দল করে সেটি বিবেচ্য নয়, কেউ চালের বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে ঝড় ও বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কোন জেলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব জানা জরুরি। উৎপাদন হিসাব ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা না গেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য তিনি সঠিক তথ্য পাঠানোর জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে যুক্ত হয়ে নওগাঁ ধান ও চাউল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট তৈরি হবে-এমন খবর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। যার কারণে অনেকেই ভাবছেন আমাদের দেশে চালের সংকট দেখা দিবে। সেকারণে অনেকেই অবৈধ মজুত করছেন। এধরনের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী।
সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা প্রশাসকরা, কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকরা, খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
হরলাল রায় সাগর
৩০ মে, ২০২২, 8:16 PM

আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে আসতে পারে কঠোর সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি আনবে না: খাদ্যমন্ত্রী
ভরা মৌসুমেও বাজারে নতুন চাল না থাকা এবং বাড়তি দামের কারনে ঘুরে ফিরে চালের অবৈধ মজুতের কথাই উঠে এসেছে গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সভায়।
ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কিনে মজুদ করে রাখায় ভরা মৌসুমেও বাজারে নতুন চাল নাই। পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেট হাউসও ধান-চাল কিনে মজুদ করছে এবং প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বাজারে ছাড়ছে বলে জানানো হয় এই সভায় ।
এসব কারণে ভরা মৌসুমেও চালারে বাজার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বিধায় মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধান কিনে মজুত করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছে, ভাবছে ধান কিনলেই লাভ। এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো পরিণতি বয়ে আনবে না বলে তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন।
মন্ত্রী গতকাল তার দপ্তর থেকে বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না। যার ফলে বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না।
এখন বাজারে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের পুরাতন চাল। তাহলে নতুন ধান যাচ্ছে কোথায় বলেও মিল মালিকদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এ অবস্থা চলতে দেওয়া হবে না। কে কত পরিমাণ ধান কিনছেন এবং কে কত পরিমাণ চাল ক্র্যাসিং করে বাজারে ছাড়ছেন তা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের রিপোর্ট আকারে পাঠাতে হবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ধান চালের ব্যবসা শুরু করেছে। তারা বাজার থেকে ধান কিনে মজুত করছেন এবং প্যাকেটজাত করছেন। প্যাকেটজাত চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে।
এসময় ধান চালের ব্যবসায় সম্পৃক্ত কর্পোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বৈঠক করতে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ভারত থেকে গম দেওয়া বন্ধ হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। অথচ শুধু ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে গম দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছে।
বোরো সংগ্রহ সফল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মজুতদারী ও গুজব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি বাজার মনিটরিং চালিয়ে যেতে হবে। কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কে কোন দল করে সেটি বিবেচ্য নয়, কেউ চালের বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে ঝড় ও বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে। কোন জেলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব জানা জরুরি। উৎপাদন হিসাব ও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা না গেলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য তিনি সঠিক তথ্য পাঠানোর জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
বৈঠকে যুক্ত হয়ে নওগাঁ ধান ও চাউল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সংকট তৈরি হবে-এমন খবর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। যার কারণে অনেকেই ভাবছেন আমাদের দেশে চালের সংকট দেখা দিবে। সেকারণে অনেকেই অবৈধ মজুত করছেন। এধরনের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী।
সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা প্রশাসকরা, কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকরা, খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।