নান্দাইলে তথ্য গোপন করে জমি খারিজ, অভিজ্ঞ মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া 

#
news image

ভূমি আইন ও ভূমির নামজারী তথা জমি খারিজ সম্পর্কে গ্রামের সাধারন মানুষ খুবই অজ্ঞ। তাই জমি খারিজ করতে সাধারন মানুষকে পোহাতে হয় নানা সমস্যা। ভূমি খারিজের জন্য সরকারিভাবে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। তথাপিও অতিরিক্ত মোটা অংকে উৎকোচ প্রদান না করলে কেউ মূল্যবান সময় হারাচ্ছে, আবার কেউবা খারিজের জন্য অর্থ হারাতে হচ্ছে। সাধারন মানুষকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। ঠিক তেমনি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা ভূমি অফিসে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহ উপজেলা ভূমি অফিসের দপ্তর প্রধান, কর্মচারীবৃন্দ সহ একটি সিন্ডিকেট দালাল চক্র খারিজের নামে সাধারন জনগণের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিলেই তথ্য গোপন করে বা জালিয়াতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ভূমির খারিজ করা যায়। জানাগেছে, উপজেলার ৬নং রাজগাতী ইউনিয়নের খলাপাড়া মৌজায় ৯৯ নং বিআরএস খতিয়ানে আব্দুল ছোবাহানের নামে ৫ দাগে ১ একর ৮৯ শতাংশ ভূমি রেকর্ড আছে। উক্ত আব্দুল ছোবাহানের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাঁর বংশীয় উত্তারাধিকারী সূত্রে ও মুসলিম ফারায়েজ মতে ভূমির বন্টন করার কথা থাকলেও ফারায়েজ না দেখে ও তথ্য গোপন করে ১ একর ২৬ শতাংশ ভূমি অবৈধভাবে খারিজ করা হয়েছে। এতে করে আব্দুল ছোবহানের অন্যান্য উত্তারাধিকারীগণ সহ অভিজ্ঞ মহল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তাঁর সহ-কর্মচারীদের অবহেলা ও কান্ডজ্ঞানহীন দায়িত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে উত্তারাধিকারী রাজাগাতী ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোমতাজ উদ্দিনের পুত্র মাইনুল ইসলাম, নুর উদ্দিনের পুত্র মাহবুব আলম, আলা উদ্দিনের পুত্র শফিকুল ইসলাম, জালাল উদ্দিনের পুত্র মাইনুল ও আব্দুর রহমানের পুত্র বাবুল মিয়া ব্যক্তিগণের পক্ষে মাইনুল ইসলাম উক্ত ভূমির নামজারী বাতিলের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি/২৩ইং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর আবেদন করেন। তবে এ পর্যন্ত এর কোন যথাবিহীত ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকারীরা জানান, উক্ত ভূমির নামজারীর জন্য ভূমি অফিসের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরজমিন পরিদর্শন করেন নি।

পরে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার নিকট উক্ত ভূমির মুসলিম ফারায়েজ দাখিল করেছি। তারপরেও আমাদেরকে না জানিয়ে তথ্য গোপন করে উত্তারাধীকারী মিজানুর রহমান কামাল ও হুমায়ূন ভূইয়ার নামে ৫ দাগের জমির মধ্যে ২টি দাগের জমি বাদ দিয়ে বেদখলীয় ১ একর ২৬ শতাংশ জমির মামলা নং ১,৯৪১(ওঢ-ও)/২০২২-২৩ নামজারী করে। এছাড়া উক্ত খতিয়ানের দুটি দাগে ৫০ শতাংশ জমির উপর ময়মনিসংহ বিজ্ঞ আদালতে মামলা নং ২৬০/২০২২ চলমান আছে। আরো জানায় যে, রাজগাতী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শরীফ মোল্লা দীর্ঘদিন যাবত রাজগাতী ও মুশুল্লি ইউনিয়নে দায়িত্বপালনে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সেবা গ্রহিতারা জানান, তিনি নিয়মিত ও সঠিক সময়ে অফিস করেন না। তাকে ফোনেও পাওয়া যায় না।

এরপূর্বেও উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূমির নামজারী জন্য রাজগাতী ইউনিয়নের কাশিনগর (কাটখালী) গ্রামে ফজলু মিয়ার স্ত্রী রেখা আক্তার কর্তৃক ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবীর মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া উলুহাটি গ্রামের মৃত আরব আলীর পুত্র দুলাল মিয়া জানান, তাঁর ২২ শতাংশ জমি খারিজ করতে তাকে দুই ধাপে দুই বছর ঘুরে ১৩ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শরীফ মোল্লা ফারায়েজ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সরজমিন দেখে স্যারের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। স্যার তা দেখে খারিজ করেছেন। খারিজ তো দেন স্যারে।

এছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.টি.এম আরিফের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সরজমিন গিয়েছি এবং দেখেই খারিজ করেছি। আপনি অফিসে আসেন, একথা বলেই তিনি ফোন কল কেটে দেন।    । 

উপজেলা সংবাদদাতা

০৬ মার্চ, ২০২৩,  6:55 PM

news image

ভূমি আইন ও ভূমির নামজারী তথা জমি খারিজ সম্পর্কে গ্রামের সাধারন মানুষ খুবই অজ্ঞ। তাই জমি খারিজ করতে সাধারন মানুষকে পোহাতে হয় নানা সমস্যা। ভূমি খারিজের জন্য সরকারিভাবে এক হাজার পঞ্চাশ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। তথাপিও অতিরিক্ত মোটা অংকে উৎকোচ প্রদান না করলে কেউ মূল্যবান সময় হারাচ্ছে, আবার কেউবা খারিজের জন্য অর্থ হারাতে হচ্ছে। সাধারন মানুষকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। ঠিক তেমনি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা ভূমি অফিসে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহ উপজেলা ভূমি অফিসের দপ্তর প্রধান, কর্মচারীবৃন্দ সহ একটি সিন্ডিকেট দালাল চক্র খারিজের নামে সাধারন জনগণের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিলেই তথ্য গোপন করে বা জালিয়াতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ভূমির খারিজ করা যায়। জানাগেছে, উপজেলার ৬নং রাজগাতী ইউনিয়নের খলাপাড়া মৌজায় ৯৯ নং বিআরএস খতিয়ানে আব্দুল ছোবাহানের নামে ৫ দাগে ১ একর ৮৯ শতাংশ ভূমি রেকর্ড আছে। উক্ত আব্দুল ছোবাহানের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাঁর বংশীয় উত্তারাধিকারী সূত্রে ও মুসলিম ফারায়েজ মতে ভূমির বন্টন করার কথা থাকলেও ফারায়েজ না দেখে ও তথ্য গোপন করে ১ একর ২৬ শতাংশ ভূমি অবৈধভাবে খারিজ করা হয়েছে। এতে করে আব্দুল ছোবহানের অন্যান্য উত্তারাধিকারীগণ সহ অভিজ্ঞ মহল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তাঁর সহ-কর্মচারীদের অবহেলা ও কান্ডজ্ঞানহীন দায়িত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে উত্তারাধিকারী রাজাগাতী ইউনিয়নের উলুহাটি গ্রামের বাসিন্দা মোমতাজ উদ্দিনের পুত্র মাইনুল ইসলাম, নুর উদ্দিনের পুত্র মাহবুব আলম, আলা উদ্দিনের পুত্র শফিকুল ইসলাম, জালাল উদ্দিনের পুত্র মাইনুল ও আব্দুর রহমানের পুত্র বাবুল মিয়া ব্যক্তিগণের পক্ষে মাইনুল ইসলাম উক্ত ভূমির নামজারী বাতিলের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি/২৩ইং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর আবেদন করেন। তবে এ পর্যন্ত এর কোন যথাবিহীত ব্যবস্থা নেননি কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকারীরা জানান, উক্ত ভূমির নামজারীর জন্য ভূমি অফিসের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরজমিন পরিদর্শন করেন নি।

পরে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার নিকট উক্ত ভূমির মুসলিম ফারায়েজ দাখিল করেছি। তারপরেও আমাদেরকে না জানিয়ে তথ্য গোপন করে উত্তারাধীকারী মিজানুর রহমান কামাল ও হুমায়ূন ভূইয়ার নামে ৫ দাগের জমির মধ্যে ২টি দাগের জমি বাদ দিয়ে বেদখলীয় ১ একর ২৬ শতাংশ জমির মামলা নং ১,৯৪১(ওঢ-ও)/২০২২-২৩ নামজারী করে। এছাড়া উক্ত খতিয়ানের দুটি দাগে ৫০ শতাংশ জমির উপর ময়মনিসংহ বিজ্ঞ আদালতে মামলা নং ২৬০/২০২২ চলমান আছে। আরো জানায় যে, রাজগাতী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শরীফ মোল্লা দীর্ঘদিন যাবত রাজগাতী ও মুশুল্লি ইউনিয়নে দায়িত্বপালনে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সেবা গ্রহিতারা জানান, তিনি নিয়মিত ও সঠিক সময়ে অফিস করেন না। তাকে ফোনেও পাওয়া যায় না।

এরপূর্বেও উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূমির নামজারী জন্য রাজগাতী ইউনিয়নের কাশিনগর (কাটখালী) গ্রামে ফজলু মিয়ার স্ত্রী রেখা আক্তার কর্তৃক ৭০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবীর মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া উলুহাটি গ্রামের মৃত আরব আলীর পুত্র দুলাল মিয়া জানান, তাঁর ২২ শতাংশ জমি খারিজ করতে তাকে দুই ধাপে দুই বছর ঘুরে ১৩ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শরীফ মোল্লা ফারায়েজ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সরজমিন দেখে স্যারের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। স্যার তা দেখে খারিজ করেছেন। খারিজ তো দেন স্যারে।

এছাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.টি.এম আরিফের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সরজমিন গিয়েছি এবং দেখেই খারিজ করেছি। আপনি অফিসে আসেন, একথা বলেই তিনি ফোন কল কেটে দেন।    ।