বৃদ্ধাশ্রম নাকি কলুষিত কারাগার?

#
news image

মা বাবার ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও নির্ভরতার ঠিকানা। মা বাবার ভালোবাসা পৃথিবীর কোনো বাটখারায় পরিমাপ করা যায়না। তবুও শেষ বয়সে এসে তাদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধ ও আশ্রম শব্দ দুটি মিলে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। শব্দগতভাবে অর্থ দাঁড়ায় বৃদ্ধনিবাস বা বৃদ্ধের আশ্রয়স্থল।

অন্য অর্থে জীবনের শেষ সময়ের আবাসস্থল, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে বৃদ্ধাবস্থায় পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের আশ্রয় ব্যতীত সরকারী-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লালিত-পালিত হওয়ার স্থানকে বৃদ্ধাশ্রম বলে। যে সব বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখার কেউ নেই তাদের জন্যই তৈরি করা হয় এই আবাসন। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের সাফল্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সমগ্র বিশ্বে জীবনমানে এক বিরাট পরিবর্তন এনেছে। সব দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা দিনেদিনে বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধদের আবাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তীব্র গতিতে।

এতে করে নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো দেশের বিভিন্ন দিকে গড়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম। এ সকল বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন সমাজের বৃদ্ধ মানুষরা। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণ পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন এবং তাদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা প্রভৃতির ভার সন্তানের ওপর বর্তায়। কিন্তু বর্তমান সমাজ-সংসারে দেখা যায়, বৃদ্ধ পিতা মাতাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ছেলে-সন্তানদের ঘর-সংসারে লেগে থাকে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝগড়া-বিবাদ। ছেলের বউ তার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রহণ করতে পারে না নিজের মা-বাবার মতো। অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরাও হাঁপিয়ে ওঠে নিজেদের জীবিকার কর্মব্যস্ততায়। উপরন্তু বৃদ্ধ পিতা-মাতার পরিচর্যা আরেকটি বাড়তি ঝামেলা। মেয়ে-সন্তানেরা বৃদ্ধ পিতা-মাতার দায়-দায়িত্ব বহন করতে পারে না বিভিন্ন কারণে। ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ বৃদ্ধ পিতা-মাতা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

তখন তাদের জোর করে রেখে আসা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এতে প্রবীণরা হারাচ্ছে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার অর্থাৎ আশ্রয় ও বাসস্থান। পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ছিল শান রাজবংশের। খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গা দখল করে নিয়েছে শান রাজবংশ। পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম-আয়েশের সব রকম ব্যবস্থা,ছিল খাদ্য ও বিনোদন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমানের বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এসব আবাসনগুলোতে দেখা যায় বৃদ্ধদের ঠিক মতো খাবার দেওয়া হয়না,তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রও ঠিক মতো সরবরাহ করা হয়না। বাংলাদেশে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাঁচ্ছে।

কিন্তু এর সঙ্গে মানুষের মানসিকতার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে বৃদ্ধাশ্রম কমানোর দরকার হলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশের একটি সরকারি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে, যা গাজীপুরে অবস্থিত। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। বাংলাদেশে পরিবারবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চ-মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। বৃদ্ধ বয়সে এসে অনেককে পরিবারছাড়া হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঠিকানা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কেননা বার্ধক্য হচ্ছে মানুষের অবধারিত সমস্যা। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ।

তাই শ্রদ্ধার সংগে প্রবীণদের দেখভাল করতে হবে। আর এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সুন্দর জীবন গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে অনুরূপভাবে প্রবীণদের জন্য সন্তান, সমাজ ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রবীণদের এই অসহায় দুর্দশা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর সমাধান না করলে প্রত্যেককেই বৃদ্ধ বয়সে এই অবহেলা ও কষ্টের স্বাদ নিতে হবে।

নাগরিক ডেস্ক

০৫ মার্চ, ২০২৩,  10:02 AM

news image

মা বাবার ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও নির্ভরতার ঠিকানা। মা বাবার ভালোবাসা পৃথিবীর কোনো বাটখারায় পরিমাপ করা যায়না। তবুও শেষ বয়সে এসে তাদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধ ও আশ্রম শব্দ দুটি মিলে হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। শব্দগতভাবে অর্থ দাঁড়ায় বৃদ্ধনিবাস বা বৃদ্ধের আশ্রয়স্থল।

অন্য অর্থে জীবনের শেষ সময়ের আবাসস্থল, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে বৃদ্ধাবস্থায় পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের আশ্রয় ব্যতীত সরকারী-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লালিত-পালিত হওয়ার স্থানকে বৃদ্ধাশ্রম বলে। যে সব বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখার কেউ নেই তাদের জন্যই তৈরি করা হয় এই আবাসন। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের সাফল্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সমগ্র বিশ্বে জীবনমানে এক বিরাট পরিবর্তন এনেছে। সব দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা দিনেদিনে বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধদের আবাসনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে তীব্র গতিতে।

এতে করে নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো দেশের বিভিন্ন দিকে গড়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম। এ সকল বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করছেন সমাজের বৃদ্ধ মানুষরা। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণ পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন এবং তাদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা প্রভৃতির ভার সন্তানের ওপর বর্তায়। কিন্তু বর্তমান সমাজ-সংসারে দেখা যায়, বৃদ্ধ পিতা মাতাকে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ছেলে-সন্তানদের ঘর-সংসারে লেগে থাকে ভুল বোঝাবুঝি ও ঝগড়া-বিবাদ। ছেলের বউ তার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রহণ করতে পারে না নিজের মা-বাবার মতো। অনেক ক্ষেত্রে ছেলেরাও হাঁপিয়ে ওঠে নিজেদের জীবিকার কর্মব্যস্ততায়। উপরন্তু বৃদ্ধ পিতা-মাতার পরিচর্যা আরেকটি বাড়তি ঝামেলা। মেয়ে-সন্তানেরা বৃদ্ধ পিতা-মাতার দায়-দায়িত্ব বহন করতে পারে না বিভিন্ন কারণে। ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ বৃদ্ধ পিতা-মাতা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

তখন তাদের জোর করে রেখে আসা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এতে প্রবীণরা হারাচ্ছে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার অর্থাৎ আশ্রয় ও বাসস্থান। পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ছিল শান রাজবংশের। খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গা দখল করে নিয়েছে শান রাজবংশ। পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম-আয়েশের সব রকম ব্যবস্থা,ছিল খাদ্য ও বিনোদন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমানের বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এসব আবাসনগুলোতে দেখা যায় বৃদ্ধদের ঠিক মতো খাবার দেওয়া হয়না,তাদের প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রও ঠিক মতো সরবরাহ করা হয়না। বাংলাদেশে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাঁচ্ছে।

কিন্তু এর সঙ্গে মানুষের মানসিকতার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ফলে বৃদ্ধাশ্রম কমানোর দরকার হলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশের একটি সরকারি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে, যা গাজীপুরে অবস্থিত। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। বাংলাদেশে পরিবারবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চ-মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। বৃদ্ধ বয়সে এসে অনেককে পরিবারছাড়া হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ঠিকানা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কেননা বার্ধক্য হচ্ছে মানুষের অবধারিত সমস্যা। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ।

তাই শ্রদ্ধার সংগে প্রবীণদের দেখভাল করতে হবে। আর এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সুন্দর জীবন গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে অনুরূপভাবে প্রবীণদের জন্য সন্তান, সমাজ ও সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। প্রবীণদের এই অসহায় দুর্দশা এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর সমাধান না করলে প্রত্যেককেই বৃদ্ধ বয়সে এই অবহেলা ও কষ্টের স্বাদ নিতে হবে।