সুনামগঞ্জের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নিয়ে তুঘলকি কান্ড: সাইনবোর্ডে ভুয়া মোবাইল নাম্বার

অরুন চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, 8:49 PM

সুনামগঞ্জের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নিয়ে তুঘলকি কান্ড: সাইনবোর্ডে ভুয়া মোবাইল নাম্বার
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসন কর্তৃক ৭ সদস্যের তালিকায় যে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি রাখা হয়েছে তার বাস্তবিক বয়স মাত্র ৩৫ বছর। যে কখনো হাইস্কুলের বারান্দায় যায়নি তার নাম রাখা হয়েছে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে।
এছাড়াও কমিটিতে ইউপি সদস্য হিসেবে যার নাম রাখা হয়েছে তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি। এছাড়া প্রকল্প এলাকার সাইনবোর্ডে সভাপতি-সাধারণ স¤পাদকের ভুয়া মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। পাউবো ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে একাধিক পিআইসি’র এমন তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বোরো ফসলের সুরক্ষায় দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের দেখার হাওর উপ প্রকল্পের ৪২নং পিআইসিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কমিটিতে সভাপতি পলিচর গ্রামের কৃষক জমির আলী, সদস্য সচিব একই গ্রামের আব্দুল কাহার ও আশফর আলীকে রাখা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে পলিচর গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে রমজান আলীকে। যিনি মুক্তিযোদ্ধা দূরে থাক, তার বাস্তবিক বয়স ৩৫ বছর। ৩৫ বছর বয়সে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি হয় কি করে এমন প্রশ্ন করছেন এলাকাবাসী।অপরদিকে, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন পলিচর গ্রামের তৌফিক মিয়া। প্রধান শিক্ষক হওয়া দূরে থাক তিনি কখনো হাইস্কুলেই যাননি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এছাড়া ইউপি সদস্য হিসেবে পলিচর গ্রামের মছলম আলীর ছেলে সাহেব আলীকে রাখা হয়েছে। যিনি জীবনে কখনও কোনো প্রকারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ পিআইসিতে প্রতিনিধির কোটা পূর্ণ করতে মনগড়াভাবে যাকে তাকে সদস্য করা হয়েছে। এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।এদিকে ৪২নং পিআসিতে সভাপতি ও সদস্য সচিবের নামের সাথে যোগাযোগের যে নাম্বার দেয়া হয়েছে তাতেও গলদ পরিলক্ষিত হয়েছে। সভাপতি জমির আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সদস্য সচিবের নাম্বারে ফোন করা হলেও অপাশ থেকে যে ব্যক্তি কল রিসিভ করে তিনি তার নাম আব্দুল কাহার নয় বলে জানান এবং তার বাড়ি ফেনী জেলায় বলে জানান।
এভাবে পিআইসি’র অনেক সাইনবোর্ডে সদস্যদের নাম ও মোবাইল নাম্বার ভুয়া ও তথ্য গোপনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার সাইনবোর্ড প্রকল্প এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন হৃদয় বলেন, বাঁধের কাজে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। দুর্নীতি করার একটা সীমারেখা থাকে। কিন্তু এই দুর্নীতির সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছে। ৪২ নং পিআইসি একটি বিতর্কিত কমিটি। পলিচর গ্রামের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। এসব বিষয়ে জানতে দোয়ারাবাজার উপজেলা কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।উপজেলা কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আবু সায়েম শফিউল ইসলামও মোবাইল কল রিসিভ করেননি।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি।
আমাদের লোকদের গাফিলতি হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জেলা প্রশাসক দিরারে আলম মোহম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগটি দুইদিন আগের। এখানে তথ্যগত ভুল হয়েছে। কমিটিতে সংযোজন করা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
অরুন চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, 8:49 PM

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) নিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসন কর্তৃক ৭ সদস্যের তালিকায় যে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি রাখা হয়েছে তার বাস্তবিক বয়স মাত্র ৩৫ বছর। যে কখনো হাইস্কুলের বারান্দায় যায়নি তার নাম রাখা হয়েছে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে।
এছাড়াও কমিটিতে ইউপি সদস্য হিসেবে যার নাম রাখা হয়েছে তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি। এছাড়া প্রকল্প এলাকার সাইনবোর্ডে সভাপতি-সাধারণ স¤পাদকের ভুয়া মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। পাউবো ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে একাধিক পিআইসি’র এমন তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের বোরো ফসলের সুরক্ষায় দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের দেখার হাওর উপ প্রকল্পের ৪২নং পিআইসিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কমিটিতে সভাপতি পলিচর গ্রামের কৃষক জমির আলী, সদস্য সচিব একই গ্রামের আব্দুল কাহার ও আশফর আলীকে রাখা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি হিসেবে রাখা হয়েছে পলিচর গ্রামের মৃত তালেব আলীর ছেলে রমজান আলীকে। যিনি মুক্তিযোদ্ধা দূরে থাক, তার বাস্তবিক বয়স ৩৫ বছর। ৩৫ বছর বয়সে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি হয় কি করে এমন প্রশ্ন করছেন এলাকাবাসী।অপরদিকে, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন পলিচর গ্রামের তৌফিক মিয়া। প্রধান শিক্ষক হওয়া দূরে থাক তিনি কখনো হাইস্কুলেই যাননি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এছাড়া ইউপি সদস্য হিসেবে পলিচর গ্রামের মছলম আলীর ছেলে সাহেব আলীকে রাখা হয়েছে। যিনি জীবনে কখনও কোনো প্রকারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ পিআইসিতে প্রতিনিধির কোটা পূর্ণ করতে মনগড়াভাবে যাকে তাকে সদস্য করা হয়েছে। এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।এদিকে ৪২নং পিআসিতে সভাপতি ও সদস্য সচিবের নামের সাথে যোগাযোগের যে নাম্বার দেয়া হয়েছে তাতেও গলদ পরিলক্ষিত হয়েছে। সভাপতি জমির আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সদস্য সচিবের নাম্বারে ফোন করা হলেও অপাশ থেকে যে ব্যক্তি কল রিসিভ করে তিনি তার নাম আব্দুল কাহার নয় বলে জানান এবং তার বাড়ি ফেনী জেলায় বলে জানান।
এভাবে পিআইসি’র অনেক সাইনবোর্ডে সদস্যদের নাম ও মোবাইল নাম্বার ভুয়া ও তথ্য গোপনের একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার সাইনবোর্ড প্রকল্প এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন হৃদয় বলেন, বাঁধের কাজে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। দুর্নীতি করার একটা সীমারেখা থাকে। কিন্তু এই দুর্নীতির সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছে। ৪২ নং পিআইসি একটি বিতর্কিত কমিটি। পলিচর গ্রামের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। এসব বিষয়ে জানতে দোয়ারাবাজার উপজেলা কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াংকা’র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।উপজেলা কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব আবু সায়েম শফিউল ইসলামও মোবাইল কল রিসিভ করেননি।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা বিষয়টি দেখছি।
আমাদের লোকদের গাফিলতি হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জেলা প্রশাসক দিরারে আলম মোহম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগটি দুইদিন আগের। এখানে তথ্যগত ভুল হয়েছে। কমিটিতে সংযোজন করা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।