সারের জোগান নিশ্চিতে সর্তকতায় সরকার

#
news image

টানা দুই বছরের করোনা মহামারি এবং সাম্প্রতকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রক্ষেতিে র্পযাপ্ত মজুত থাকা সত্যওে রাসয়নকি সাররে যোগান ঠকি রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে সরকার। 
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাসয়নকি সার রফতানিকারক কয়কেটি দেশরে রফতানি বন্ধরে সদ্ধিান্তরে কারণে সরকাররে এই অবস্থান । আর তাই মূল্যের কথা ববিচেনা না করে এখন চড়া দামেও বিকল্প উৎস থেকে অতি প্রয়োজনীয় এ কৃষি উপকরন আমদানি করছে সরকার। 
উচ্চমূল্যে সার কেনা হলেও খুচরা র্পযায়ে এর দাম বাড়ানো হবে না নশ্চিতি করে মন্ত্রণালয়রে র্শীষ র্কমর্কতারা বলনে ন্যায্যমুল্যে কৃষকদের সার দওেয়ার জন্য সরকারকে গুণতে হবে প্রায় তিনগুণ ভর্তুকি। 
'যদওি চলতি অর্থবছরের জন্য প্রয়োজনীয় সার মজুদ রয়েছে এবং চাহিদা ও সরবরাহে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই তবুও যোগান ঠকি রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছ,ে' বলনে কৃষি মন্ত্রণালয়রে  এক উচ্চপদস্থ র্কমর্কতা ।
এই সর্তকতার অংশ হসিবেে আগামী অর্থ বছরে দেশে সারের চাহিদাও ১২ লাখ টন কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ লাখ টন। 

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে ৫৭ লাখ টন রাসায়নিক সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) এবং সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার। এর আগের বছর অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরে রাসায়নিক সারের মোট চাহিদা ধরা ছিল প্রায় ৬৯ লাখ মেট্রিক টন।
বার্ষিক এ চাহিদার মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসির ছয়টি সার কারখানা থেকে ১০ লাখ টন ইউরিয়া সারের যোগান আসবে। ইউরিয়াসহ চাহিদার বাকি সার রাশিয়া, সৌদি আরব, চীন, মরক্কো, কানাডা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
সার বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ১৯ মে এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদাম ও সরবরাহের জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় ২ দুই ৩৬ হাজার ৫৫৭ টন টিএসপি, ২ লাখ ৬২ হাজার ৯২৭ টন এমওপি এবং ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৩ টন ডিএপি সারের মজুদ রয়েছে। এতে করে মোট ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৮ হাজার টন নন ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে।
আর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গুদামগুলোতে মজুদ আছে ছয় লাখ টন ইউরিয়া সার। 
বিএডিসি চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৬২ হাজার টন নন-ইউরিয়া সার বিতরণ করেছে। এর মধ্যে শুধু মে মাসে বিতরণ করা হবে ২৪ হাজার টন সার। এপ্রিলে বিতরণ বা বিক্রি করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৭৯৭ টন সার। আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) এপ্রিলে ৫৫ হাজার ২৬১ টন নন ইউরিয়া এবং মে মাসে ৪৯ হাজার ৯৮৭ টন সার বিতরণ করা হয় বলে বিএডিসি জানিয়েছে।
রাশিয়া বাংলাদেশের সারের অন্যতম যোগানদাতা। এমওপি, টিএসপি ও ডিএপি সারের বেশিরভাগই দেশটি থেকে আমদানি করা হয়। দেশে প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ টনের মত এমওপি সারের প্রয়োজনের বিপরীতে তিন লাখ টনই আসে দেশটি থেকে। এছাড়া টিএসপি ও ডিএপি সারও আমদানি করা হয় সেখান থেকে। আর দেড় লাখ টন এমওপি কানাডা থেকে আমদানি করা হত।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। ইতিমধ্যে বিকল্প উৎস কানাডা থেকে আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। 
টিএসপির জন্যও বিকল্প হিসেবে কানাডার কথাই বেশি ভাবা হচ্ছে। সার রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশ থেকেও টিএসপিসহ অন্য সব সার আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই মনে করছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 
তারা জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
আর চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে উৎপাদিত হওয়ায় চাষাবাদে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইউরিয়া নিয়ে আশঙ্কার তেমন কিছু নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বাজার বন্ধ হওয়ায় সার নিয়ে একটা অনিশ্চিয়তা তৈরি হলেও বিকল্প বাজার হিসাবে কানাডা থেকে সেই সার আমদানি করে আগামী বছরের চাহিদা পূরণ করা হবে। অন্যান্য উৎস থেকেও সার এনে সরবরাহ লাইন ঠিক রাখতে কাজ করছেন তারা। এক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাদের।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বেড়ে যাওয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বাড়লেও আপাতত সারের দাম বাড়ানোর কোনো চিন্তা সরকারের নেই বলে তারা জানিয়েছেন। আগামী অর্থ বছরেও দাম না বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সার সংকট দেখা দিলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আশংকার কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে সারের দাম ওঠানামা করলেও দেশে সারের দাম বাড়াচ্ছে না সরকার। বর্তমানে সরকার ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২, এমওপি ১৫ ও ডিএপি সার ১৬ টাকায় কৃষকের মাঝে বিতরণ করে। অথচ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিকেজি ইউরিয়া ৯৬ টাকা, টিএসপি ৭০ টাকা, এমওপি ৫৪ টাকা ও ডিএমপির দাম ৯৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কৃষককে আগের দামে দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০, এমওপিতে ৪১ ও ডিএপিতে ৭৯ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ফলে ভর্তুকি বাবদ বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানেও এমন কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকার গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সারে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। 
সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকা চারটি প্রধান রাসায়নিক সার ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েক প্রকার সার দেশে আমদানি ও বিপণন হয়ে থাকে। ভালো ফলনের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের পরমার্শে এসব ‘পুষ্টি সার’ প্রয়োগ করা হয় ফসলে।
বেসরকারিভাবে আনা এসব সারের মধ্যে রয়েছে এসওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট মনো-হাইড্রেট, জিংক সালফেট হেপ্টা হাইড্রেট, বরিক অ্যাসিড, সলুবোর, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট। তবে এসব সারে কোনো ভর্তুকি দেয় না সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, সারের বার্ষিক চাহিদার ৪০ শতাংশ প্রয়োজন হয় রবি মৌসুমের জন্য (কার্তিক থেকে ফাল্গুন)। আর খরিপ ১ (চৈত্র থেকে আষাঢ়) ও খরিপ ২ (শ্রাবণ থেকে আশ্বিন) মৌসুমের জন্য প্রয়োজন হয় অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ সার।
দেশে সাধারণত টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির মত নন-ইউরিয়া সারগুলো শুকনো মৌসুমে ফসলের মাঠ প্রস্তুতের সময় ব্যবহৃত হয়। আর ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয় ফসলের বাড়ন্ত সময়ে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, সারের বার্ষিক চাহিদা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বরাদ্দ ঠিক করা হয়। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই চার মাসে সবচেয়ে বেশি-প্রায় ২৩ লাখ টন সার সার বিতরণ করা হয়। বাকি সময়গুলোতে প্রতিমাসে গড়ে ৪ লাখ ২৭ হাজার টন সার বিতরণ করা হয়।

হরলাল রায় সাগর

২৮ মে, ২০২২,  9:23 PM

news image

টানা দুই বছরের করোনা মহামারি এবং সাম্প্রতকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রক্ষেতিে র্পযাপ্ত মজুত থাকা সত্যওে রাসয়নকি সাররে যোগান ঠকি রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে সরকার। 
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাসয়নকি সার রফতানিকারক কয়কেটি দেশরে রফতানি বন্ধরে সদ্ধিান্তরে কারণে সরকাররে এই অবস্থান । আর তাই মূল্যের কথা ববিচেনা না করে এখন চড়া দামেও বিকল্প উৎস থেকে অতি প্রয়োজনীয় এ কৃষি উপকরন আমদানি করছে সরকার। 
উচ্চমূল্যে সার কেনা হলেও খুচরা র্পযায়ে এর দাম বাড়ানো হবে না নশ্চিতি করে মন্ত্রণালয়রে র্শীষ র্কমর্কতারা বলনে ন্যায্যমুল্যে কৃষকদের সার দওেয়ার জন্য সরকারকে গুণতে হবে প্রায় তিনগুণ ভর্তুকি। 
'যদওি চলতি অর্থবছরের জন্য প্রয়োজনীয় সার মজুদ রয়েছে এবং চাহিদা ও সরবরাহে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই তবুও যোগান ঠকি রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছ,ে' বলনে কৃষি মন্ত্রণালয়রে  এক উচ্চপদস্থ র্কমর্কতা ।
এই সর্তকতার অংশ হসিবেে আগামী অর্থ বছরে দেশে সারের চাহিদাও ১২ লাখ টন কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ লাখ টন। 

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশে ৫৭ লাখ টন রাসায়নিক সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) এবং সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি সার। এর আগের বছর অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরে রাসায়নিক সারের মোট চাহিদা ধরা ছিল প্রায় ৬৯ লাখ মেট্রিক টন।
বার্ষিক এ চাহিদার মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসির ছয়টি সার কারখানা থেকে ১০ লাখ টন ইউরিয়া সারের যোগান আসবে। ইউরিয়াসহ চাহিদার বাকি সার রাশিয়া, সৌদি আরব, চীন, মরক্কো, কানাডা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
সার বিতরণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ১৯ মে এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদাম ও সরবরাহের জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় ২ দুই ৩৬ হাজার ৫৫৭ টন টিএসপি, ২ লাখ ৬২ হাজার ৯২৭ টন এমওপি এবং ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৩ টন ডিএপি সারের মজুদ রয়েছে। এতে করে মোট ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৮ হাজার টন নন ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে।
আর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) গুদামগুলোতে মজুদ আছে ছয় লাখ টন ইউরিয়া সার। 
বিএডিসি চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ৬২ হাজার টন নন-ইউরিয়া সার বিতরণ করেছে। এর মধ্যে শুধু মে মাসে বিতরণ করা হবে ২৪ হাজার টন সার। এপ্রিলে বিতরণ বা বিক্রি করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৭৯৭ টন সার। আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) এপ্রিলে ৫৫ হাজার ২৬১ টন নন ইউরিয়া এবং মে মাসে ৪৯ হাজার ৯৮৭ টন সার বিতরণ করা হয় বলে বিএডিসি জানিয়েছে।
রাশিয়া বাংলাদেশের সারের অন্যতম যোগানদাতা। এমওপি, টিএসপি ও ডিএপি সারের বেশিরভাগই দেশটি থেকে আমদানি করা হয়। দেশে প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ টনের মত এমওপি সারের প্রয়োজনের বিপরীতে তিন লাখ টনই আসে দেশটি থেকে। এছাড়া টিএসপি ও ডিএপি সারও আমদানি করা হয় সেখান থেকে। আর দেড় লাখ টন এমওপি কানাডা থেকে আমদানি করা হত।
ধান, আলু ও সবজি চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমওপি সারের ৬০ শতাংশ আনা হতো রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। ওই দুই দেশ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ায় এখন বাংলাদেশকে এমওপি কিনতে হচ্ছে কানাডা থেকে। ইতিমধ্যে বিকল্প উৎস কানাডা থেকে আট লাখ টন এমওপি সার আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। 
টিএসপির জন্যও বিকল্প হিসেবে কানাডার কথাই বেশি ভাবা হচ্ছে। সার রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশ থেকেও টিএসপিসহ অন্য সব সার আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
ফলে এই সার নিয়ে সরকারের কোনো দুশ্চিন্তা নেই মনে করছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 
তারা জানিয়েছেন, দেশে চলতি বোরো মৌসুমে নতুন করে আর সারের দরকার হবে না। সামনে আলুর মৌসুমে ইউরিয়া, এমওপিসহ অন্যান্য সারের চাহিদা বাড়বে। ওই সময়ের জন্য সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যের সার সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
আর চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে উৎপাদিত হওয়ায় চাষাবাদে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইউরিয়া নিয়ে আশঙ্কার তেমন কিছু নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বাজার বন্ধ হওয়ায় সার নিয়ে একটা অনিশ্চিয়তা তৈরি হলেও বিকল্প বাজার হিসাবে কানাডা থেকে সেই সার আমদানি করে আগামী বছরের চাহিদা পূরণ করা হবে। অন্যান্য উৎস থেকেও সার এনে সরবরাহ লাইন ঠিক রাখতে কাজ করছেন তারা। এক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাদের।
আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বেড়ে যাওয়ার এই পরিস্থিতিতে দেশে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বাড়লেও আপাতত সারের দাম বাড়ানোর কোনো চিন্তা সরকারের নেই বলে তারা জানিয়েছেন। আগামী অর্থ বছরেও দাম না বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সার সংকট দেখা দিলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আশংকার কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে সার সরবরাহ ও ব্যবহারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এমওপি সারের ২০ শতাংশ সরবরাহ কমানো হলে সামনের বোরো মৌসুমে ধান, গম ও রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে সারের দাম ওঠানামা করলেও দেশে সারের দাম বাড়াচ্ছে না সরকার। বর্তমানে সরকার ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২, এমওপি ১৫ ও ডিএপি সার ১৬ টাকায় কৃষকের মাঝে বিতরণ করে। অথচ চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিকেজি ইউরিয়া ৯৬ টাকা, টিএসপি ৭০ টাকা, এমওপি ৫৪ টাকা ও ডিএমপির দাম ৯৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
কৃষককে আগের দামে দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি ইউরিয়ায় ৮২ টাকা, টিএসপিতে ৫০, এমওপিতে ৪১ ও ডিএপিতে ৭৯ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। ফলে ভর্তুকি বাবদ বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানেও এমন কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকার গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সারে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। 
সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকা চারটি প্রধান রাসায়নিক সার ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েক প্রকার সার দেশে আমদানি ও বিপণন হয়ে থাকে। ভালো ফলনের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের পরমার্শে এসব ‘পুষ্টি সার’ প্রয়োগ করা হয় ফসলে।
বেসরকারিভাবে আনা এসব সারের মধ্যে রয়েছে এসওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট মনো-হাইড্রেট, জিংক সালফেট হেপ্টা হাইড্রেট, বরিক অ্যাসিড, সলুবোর, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ও অ্যামোনিয়াম সালফেট। তবে এসব সারে কোনো ভর্তুকি দেয় না সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, সারের বার্ষিক চাহিদার ৪০ শতাংশ প্রয়োজন হয় রবি মৌসুমের জন্য (কার্তিক থেকে ফাল্গুন)। আর খরিপ ১ (চৈত্র থেকে আষাঢ়) ও খরিপ ২ (শ্রাবণ থেকে আশ্বিন) মৌসুমের জন্য প্রয়োজন হয় অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ সার।
দেশে সাধারণত টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির মত নন-ইউরিয়া সারগুলো শুকনো মৌসুমে ফসলের মাঠ প্রস্তুতের সময় ব্যবহৃত হয়। আর ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয় ফসলের বাড়ন্ত সময়ে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, সারের বার্ষিক চাহিদা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বরাদ্দ ঠিক করা হয়। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই চার মাসে সবচেয়ে বেশি-প্রায় ২৩ লাখ টন সার সার বিতরণ করা হয়। বাকি সময়গুলোতে প্রতিমাসে গড়ে ৪ লাখ ২৭ হাজার টন সার বিতরণ করা হয়।