মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব বিমান বন্দরে সতর্কতা জারি

#
news image

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।  এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন কোনো রোগের তথ্য পাওয়া গেলে আমাদের বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা একটা রুটিন ওয়ার্ক। সে হিসেবে আমরা সবগুলো বন্দরকে সতর্কতা নেওয়ার জন্য বলেছি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
সতর্কতা জারির বিষয়ে ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এটা সংক্রামক রোগ। এ কারণে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। প্রাথমিকভাবে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রোগী পাওয়া গেলে সেখানে আইসোলেশনে রাখা হবে।
কারও মধ্যে উপসর্গ থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে- জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে কোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকাও নেই। তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলামের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে এ সতকর্তা জারি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর শরীরে মাঙ্কিপক্সের মতো সন্দেহজনক ও লক্ষণ দেখা গেলে তাকে কাছের হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের ড. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ  বলেন, বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর দেহে মাঙ্কিপক্স উপসর্গ সনাক্ত হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম  বলেন, মাঙ্কিপক্সের বিস্তার রোধে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগ। বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ সনাক্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য কার্ড পূরণ করেন যাত্রীরা। মাঙ্কিপক্স সনাক্তের ক্ষেত্রেও যাত্রীদের স্বাস্থ্য কার্ড (হেলথ কার্ড) পূরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান  বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শনিবার বিশ্বের ১২টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানিয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন,  যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মে, ২০২২,  8:36 PM

news image

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।  এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন কোনো রোগের তথ্য পাওয়া গেলে আমাদের বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা একটা রুটিন ওয়ার্ক। সে হিসেবে আমরা সবগুলো বন্দরকে সতর্কতা নেওয়ার জন্য বলেছি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
সতর্কতা জারির বিষয়ে ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এটা সংক্রামক রোগ। এ কারণে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। প্রাথমিকভাবে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রোগী পাওয়া গেলে সেখানে আইসোলেশনে রাখা হবে।
কারও মধ্যে উপসর্গ থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে- জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে কোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকাও নেই। তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলামের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে এ সতকর্তা জারি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর শরীরে মাঙ্কিপক্সের মতো সন্দেহজনক ও লক্ষণ দেখা গেলে তাকে কাছের হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের ড. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ  বলেন, বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীর দেহে মাঙ্কিপক্স উপসর্গ সনাক্ত হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম  বলেন, মাঙ্কিপক্সের বিস্তার রোধে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগ। বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ সনাক্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য কার্ড পূরণ করেন যাত্রীরা। মাঙ্কিপক্স সনাক্তের ক্ষেত্রেও যাত্রীদের স্বাস্থ্য কার্ড (হেলথ কার্ড) পূরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান  বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শনিবার বিশ্বের ১২টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানিয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন,  যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে।