লাল লিচুতে রঙিন হয়েছে দিনাজপুরের বাগান

#
news image

এখন লাল টসটসে রঙিন হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো। রসালো ও সুস্বাদু লিচু আকৃষ্ট করছে স্থানীয়সহ সারাদেশের ভোক্তাদের। ক্রবর্ধমান চাহিদার উপর ভিত্তি করেই প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত এই মৌসুমি ফল লিচু এখন ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যদিও বাজার জমে উঠতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে, তবুও লিচু সংগ্রহ, বাছাই, কেনা-বেচা আর পরিবহনের কাজে ইতিমধ্যেই সম্পৃক্ত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। 
লিচু চাষ এখন লাভজনক হওয়ায় ধানের জেলা দিনাজপুরে লিচুর বাগান করছেন অনেকে। এবার এ জেলায় মাদ্রাজী, বেদেনা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, হাড়িয়া ও কাঠালী জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশী। বিগত বছরগুলোতে ফরমালিন আতংকে লিচুর বাজারে ধস নামায় এবার বিষমুক্ত লিচু চাষে নেমেছেন এ জেলার বাগান মালিকরা।
এদিকে লিচুর ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষী ও লিচু বাগান ক্রেতারা। পুলহাট এলাকার লিচু বাগানের ক্রেতা মমিনুল ইসলাম শংকা প্রকাশ করে বলেন, এবার প্রচুর লোকসান হবে তার। বাগান কিনেছেন বেশী দামে। কিন্তু আশানুরূপ ফলন আসেনি বাগানে।
লিচু বেচা-কেনায় থানা মোড়, নিউ মার্কেট, বাহাদুর বাজার ও পুলহাট, দশ মাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় মৌসুমি লিচু বাজার গড়ে উঠলেও অনেকে বাগান থেকে কিনেন লিচু। লিচু কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগানে ছুটে আসেন মানুষ।
জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলায় সিংহভাগ লিচু উৎপাদন হয়।
বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, বাগানে মাদ্রাজি জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে এসব লিচু পরিপক্ব হয়ে উঠবে। তবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটসহ কিছু কিছু এলাকায় অপরিপক্ক লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার মমিনুল ইসলাম, পার্বতীপুর উপজেলার যশাই হাটের মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু চাষীরা জানান, দিনাজপুরের বাগানগুলোর গাছে গাছে মাদ্রাজী, বোম্বাই, কাঁঠালি, চায়না, চায়না থ্রি আর বেদানা লিচুতে ভরে গেছে। মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে লিচু পাকতে শুরু করবে। 
লিচু চাষি ও গবেষক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দিনাজপুরে লিচুগাছে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। লিচু চাষে চৈত্র মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চৈত্রের খরতাপের কারণে চাষিরা লিচুবাগানে পানির সেচ দিতে পারেননি। এছাড়াও দেখা যায়, যে বছর ভালো ফলন হয়, পরের বছর তা কমে যায়। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দিনাজপুর জেলার ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর  জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে  প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লিচুবাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি গাছ রয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ৫ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছিলো।
এদিকে লিচুর উন্নত জাতের উদ্ভাবনের পাশাপাশি জেলার লিচু চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষি অধিদফতর। গত বছরের তুলনায় এবার ২৮০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত লিচু চাষ হচ্ছে জানিয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এই বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে মাদ্রাজি লিচু বাজারে চলে আসবে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনজুরুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রত্যেক বছর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয়।

আফরোজা সরকার 

২২ মে, ২০২২,  8:36 PM

news image

এখন লাল টসটসে রঙিন হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের লিচু বাগানগুলো। রসালো ও সুস্বাদু লিচু আকৃষ্ট করছে স্থানীয়সহ সারাদেশের ভোক্তাদের। ক্রবর্ধমান চাহিদার উপর ভিত্তি করেই প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত এই মৌসুমি ফল লিচু এখন ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যদিও বাজার জমে উঠতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে, তবুও লিচু সংগ্রহ, বাছাই, কেনা-বেচা আর পরিবহনের কাজে ইতিমধ্যেই সম্পৃক্ত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। 
লিচু চাষ এখন লাভজনক হওয়ায় ধানের জেলা দিনাজপুরে লিচুর বাগান করছেন অনেকে। এবার এ জেলায় মাদ্রাজী, বেদেনা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, হাড়িয়া ও কাঠালী জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশী। বিগত বছরগুলোতে ফরমালিন আতংকে লিচুর বাজারে ধস নামায় এবার বিষমুক্ত লিচু চাষে নেমেছেন এ জেলার বাগান মালিকরা।
এদিকে লিচুর ফলন বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষী ও লিচু বাগান ক্রেতারা। পুলহাট এলাকার লিচু বাগানের ক্রেতা মমিনুল ইসলাম শংকা প্রকাশ করে বলেন, এবার প্রচুর লোকসান হবে তার। বাগান কিনেছেন বেশী দামে। কিন্তু আশানুরূপ ফলন আসেনি বাগানে।
লিচু বেচা-কেনায় থানা মোড়, নিউ মার্কেট, বাহাদুর বাজার ও পুলহাট, দশ মাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় মৌসুমি লিচু বাজার গড়ে উঠলেও অনেকে বাগান থেকে কিনেন লিচু। লিচু কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগানে ছুটে আসেন মানুষ।
জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলায় সিংহভাগ লিচু উৎপাদন হয়।
বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের লিচু চাষি মতিউর রহমান বলেন, বাগানে মাদ্রাজি জাতের লিচুতে রঙ আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে এসব লিচু পরিপক্ব হয়ে উঠবে। তবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটসহ কিছু কিছু এলাকায় অপরিপক্ক লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার মমিনুল ইসলাম, পার্বতীপুর উপজেলার যশাই হাটের মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু চাষীরা জানান, দিনাজপুরের বাগানগুলোর গাছে গাছে মাদ্রাজী, বোম্বাই, কাঁঠালি, চায়না, চায়না থ্রি আর বেদানা লিচুতে ভরে গেছে। মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে লিচু পাকতে শুরু করবে। 
লিচু চাষি ও গবেষক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দিনাজপুরে লিচুগাছে ব্যাপক মুকুল এসেছিল। লিচু চাষে চৈত্র মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চৈত্রের খরতাপের কারণে চাষিরা লিচুবাগানে পানির সেচ দিতে পারেননি। এছাড়াও দেখা যায়, যে বছর ভালো ফলন হয়, পরের বছর তা কমে যায়। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দিনাজপুর জেলার ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর  জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে  প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লিচুবাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি গাছ রয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ৫ হাজার ৭০৭ হেক্টর জমিতে লিচুর ফলন হয়েছিলো।
এদিকে লিচুর উন্নত জাতের উদ্ভাবনের পাশাপাশি জেলার লিচু চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষি অধিদফতর। গত বছরের তুলনায় এবার ২৮০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত লিচু চাষ হচ্ছে জানিয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এই বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে মাদ্রাজি লিচু বাজারে চলে আসবে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনজুরুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রত্যেক বছর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয়।