বগেরবাড়ী আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত বাসিন্দারা কাজুবাদাম চাষে উজ্জল স্বপ্ন বুনছেন

#
news image

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত হওয়ার পর ২০টি পরিবার এখন পার্শ্ববর্তী খাস জমিতে উচ্চমূল্যের অপ্রচলিত কাজুবাদাম চাষ করে ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের উজ্জল এখন স্বপ্ন বুনছেন। সেখানে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত ২০টি পরিবারের বসতবাড়ীতে ১২ জাতের দু’শ টি বিভিন্ন ফলের গাছের পাশাপাশি ৫.০৭ একর খাস জমিতে চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা ছয়শ’টি কাজুবাদাম গাছ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত বাসিন্দাদের জন্য উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, ২০২১ সালে ভিডিও কনফারেন্সিং অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নতুন আধা-পাকা বাড়ী পাওয়ার পর তারা পুনরায় এক নতুন জীবন পেয়েছেন। এর আগে এই ২০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বছরের পর বছর অন্যের জমিতে বসবাস করতে হতো। উক্ত আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বিন্যাস নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা কখনই ভাবিনি শয়ননকক্ষ, রান্নাঘর, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ইউটিলিটি স্পেস, বারান্দা এবং বিদ্যুতের সুবিধাসহ নতুন করে তাদের জীবনে আবার ভাগ্য অন্বেষণ এবং হাসার সুযোগ ফিওে আসতে পারে।”

পুনর্বাসিত আনোয়ার হোসেন জানান, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রংপুর সার্কেলের কর্মকর্তারা শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণের সম্ভাবনা যাচাই করতে গত বছর হঠাৎ করে বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে আসেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিএমডিএ একটি বিশেষ উদ্যোগের আওতায় সেখানকার খাস জমিতে ছয়শ’টি কাজুবাদাম এবং বসতবাড়ীতে আম, কাঁঠাল, লটকন, মাল্টা, লেবু, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, জাম, জলপাই, সফেদা, চালতা, আমলকি ও জামরুল ফলের দু’শটি চারা রোপণ করে। আনোয়ার বলেন, বিএমডিএ-এর ”ভূ-পরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর)” শীর্ষক প্রকল্পের বর্ধিত অংশ হিসেবে গৃহীত উক্ত বিশেষ উদ্যোগের অধীনে এসব ফলের চারা রোপণ করা হয়।”

সেখানকার বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন জানান, দিনমজুরি, রিকশা-ভ্যান চালনাসহ অন্যান্য কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিদিনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি পুনর্বাসিত নারী-পুরুষেরা নিজেদের সন্তানের মতো স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়ে কাজু বাদাম ও অন্যান্য ফলের গাছের যতœ নিচ্ছেন। "চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফলের গাছগুলি বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পের চারপাশে এক মনোরম, নয়নাভিরাম ও নৈসর্গিক দৃশ্য তৈরি করেছে যা এলাকাটিকে নজরকাড়া একরূপে সজ্জিত করার পাশাপাশি সুন্দর সবুজায়ন অঞ্চলে পরিণত করেছে," মঞ্জুর বলেন। পুনর্বাসিত আফরোজা বেগম বলেন, আগামী মৌসুমে তার চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা ৩২টি কাজুবাদাম গাছ থেকে তিনি ফল পাবেন বলে আশা করছেন। এসব কাজুবাদাম উচ্চমূল্যে বিক্রি করে তিনি অর্থ উপার্জন করার স্বপ্ন বুনছেন।

তিনি বলেন, “এছাড়া আমি বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাকী ১৯টি পরিবারের মতো আমার বসতবাড়ীতে লাগানো আম, কাঁঠাল, লটকন, কালজাম, পেঁপে, মাল্টা, জলপাই, সফেদা ও চালতা গাছের সর্ব্বোচ্চ যতœ নিচ্ছি।” পুনর্বাসিত তহুরা বেগম জানান, আসন্ন মৌসুম থেকে তিনি তার ২১টি কাজুবাদাম গাছ এবং আম, জাম, লিচু, লেবু এবং জলপাইয়ের মতো অন্যান্য ফলের গাছ থেকে ফল পাওয়ার এবং ভাল উপার্জন করার আশা করছেন। “আমি কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফল বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ আমার মেয়ে পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তানিয়া খাতুন (১৬) এবং দুই ছেলে নয় বছর বয়সী তামিম (তৃতীয় শ্রেনী) এবং সাত বছর বয়সী তাসকিন (৭) এর পড়াশোনার জন্য ব্যয় করব, " বলেন তহুরা।

ইআইআর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বিএমডিএ রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান খান বাসস’কে জানান, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক গত বছর ঢ়াকায় অনুষ্ঠিত বার্সিক উন্নয়ন কমসূচী (এডিপি)’র এক সভায় কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।তিনি বলেন, “পরবর্তীতে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশিদ এর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ইআইআর প্রকল্পের আওতায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গত বছর রংপুর ও গাইবান্ধার চারটি উপজেলায় তিন হাজার কাজুবাদামের চারা রোপণ করেছি।

এরই অংশ হিসেবে শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উপলক্ষে পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় খাস জমিতে ছয়শ’টি কাজুবাদামের চারা রোপণ করা হয়। রোপিত গাছগুলো ২০ ভাগে ভাগ করে পুনর্বাসিত ২০টি পরিবারকে নিজ নিজ ভাগের চারাগুলোর পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া হয়। "আমরা কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফলের গাছের চারা রোপণ করেছি যাতে আশ্রায়ণের বাসিন্দাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো, বনায়ন ও সবুজায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি তাদের অর্থ উপার্জনের একটি সুযোগ সৃষ্টি করা যায়," খান উল্লেখ করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ অক্টোবর, ২০২২,  10:36 PM

news image

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত হওয়ার পর ২০টি পরিবার এখন পার্শ্ববর্তী খাস জমিতে উচ্চমূল্যের অপ্রচলিত কাজুবাদাম চাষ করে ভবিষ্যতে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের উজ্জল এখন স্বপ্ন বুনছেন। সেখানে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত ২০টি পরিবারের বসতবাড়ীতে ১২ জাতের দু’শ টি বিভিন্ন ফলের গাছের পাশাপাশি ৫.০৭ একর খাস জমিতে চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা ছয়শ’টি কাজুবাদাম গাছ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত বাসিন্দাদের জন্য উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, ২০২১ সালে ভিডিও কনফারেন্সিং অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নতুন আধা-পাকা বাড়ী পাওয়ার পর তারা পুনরায় এক নতুন জীবন পেয়েছেন। এর আগে এই ২০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বছরের পর বছর অন্যের জমিতে বসবাস করতে হতো। উক্ত আশ্রায়ণ প্রকল্পে পুনর্বিন্যাস নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা কখনই ভাবিনি শয়ননকক্ষ, রান্নাঘর, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ইউটিলিটি স্পেস, বারান্দা এবং বিদ্যুতের সুবিধাসহ নতুন করে তাদের জীবনে আবার ভাগ্য অন্বেষণ এবং হাসার সুযোগ ফিওে আসতে পারে।”

পুনর্বাসিত আনোয়ার হোসেন জানান, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রংপুর সার্কেলের কর্মকর্তারা শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উপলক্ষে বৃক্ষরোপণের সম্ভাবনা যাচাই করতে গত বছর হঠাৎ করে বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে আসেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিএমডিএ একটি বিশেষ উদ্যোগের আওতায় সেখানকার খাস জমিতে ছয়শ’টি কাজুবাদাম এবং বসতবাড়ীতে আম, কাঁঠাল, লটকন, মাল্টা, লেবু, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে, জাম, জলপাই, সফেদা, চালতা, আমলকি ও জামরুল ফলের দু’শটি চারা রোপণ করে। আনোয়ার বলেন, বিএমডিএ-এর ”ভূ-পরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ (ইআইআর)” শীর্ষক প্রকল্পের বর্ধিত অংশ হিসেবে গৃহীত উক্ত বিশেষ উদ্যোগের অধীনে এসব ফলের চারা রোপণ করা হয়।”

সেখানকার বাসিন্দা মঞ্জুর হোসেন জানান, দিনমজুরি, রিকশা-ভ্যান চালনাসহ অন্যান্য কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিদিনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি পুনর্বাসিত নারী-পুরুষেরা নিজেদের সন্তানের মতো স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়ে কাজু বাদাম ও অন্যান্য ফলের গাছের যতœ নিচ্ছেন। "চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফলের গাছগুলি বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পের চারপাশে এক মনোরম, নয়নাভিরাম ও নৈসর্গিক দৃশ্য তৈরি করেছে যা এলাকাটিকে নজরকাড়া একরূপে সজ্জিত করার পাশাপাশি সুন্দর সবুজায়ন অঞ্চলে পরিণত করেছে," মঞ্জুর বলেন। পুনর্বাসিত আফরোজা বেগম বলেন, আগামী মৌসুমে তার চমৎকারভাবে বেড়ে ওঠা ৩২টি কাজুবাদাম গাছ থেকে তিনি ফল পাবেন বলে আশা করছেন। এসব কাজুবাদাম উচ্চমূল্যে বিক্রি করে তিনি অর্থ উপার্জন করার স্বপ্ন বুনছেন।

তিনি বলেন, “এছাড়া আমি বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাকী ১৯টি পরিবারের মতো আমার বসতবাড়ীতে লাগানো আম, কাঁঠাল, লটকন, কালজাম, পেঁপে, মাল্টা, জলপাই, সফেদা ও চালতা গাছের সর্ব্বোচ্চ যতœ নিচ্ছি।” পুনর্বাসিত তহুরা বেগম জানান, আসন্ন মৌসুম থেকে তিনি তার ২১টি কাজুবাদাম গাছ এবং আম, জাম, লিচু, লেবু এবং জলপাইয়ের মতো অন্যান্য ফলের গাছ থেকে ফল পাওয়ার এবং ভাল উপার্জন করার আশা করছেন। “আমি কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফল বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ আমার মেয়ে পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তানিয়া খাতুন (১৬) এবং দুই ছেলে নয় বছর বয়সী তামিম (তৃতীয় শ্রেনী) এবং সাত বছর বয়সী তাসকিন (৭) এর পড়াশোনার জন্য ব্যয় করব, " বলেন তহুরা।

ইআইআর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বিএমডিএ রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান খান বাসস’কে জানান, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক গত বছর ঢ়াকায় অনুষ্ঠিত বার্সিক উন্নয়ন কমসূচী (এডিপি)’র এক সভায় কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।তিনি বলেন, “পরবর্তীতে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশিদ এর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ইআইআর প্রকল্পের আওতায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে গত বছর রংপুর ও গাইবান্ধার চারটি উপজেলায় তিন হাজার কাজুবাদামের চারা রোপণ করেছি।

এরই অংশ হিসেবে শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উপলক্ষে পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ী-২ আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় খাস জমিতে ছয়শ’টি কাজুবাদামের চারা রোপণ করা হয়। রোপিত গাছগুলো ২০ ভাগে ভাগ করে পুনর্বাসিত ২০টি পরিবারকে নিজ নিজ ভাগের চারাগুলোর পরিচর্যার দায়িত্ব দেয়া হয়। "আমরা কাজুবাদাম এবং অন্যান্য ফলের গাছের চারা রোপণ করেছি যাতে আশ্রায়ণের বাসিন্দাদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো, বনায়ন ও সবুজায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাশাপাশি তাদের অর্থ উপার্জনের একটি সুযোগ সৃষ্টি করা যায়," খান উল্লেখ করেন।