উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড়ে রাশ টানছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ অক্টোবর, ২০২২, 11:14 PM

উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড়ে রাশ টানছেন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল ঠিক তখন বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রুতি বাড়লেও দাতাদের অর্থ ছাড় কমে গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড়েও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।
গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় কমেছে ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। তবে কমেছে ঋণের অর্থ পরিশোধের পরিমাণ। আর মূল টাকার প্রায় অর্ধেকের সমপরিমাণ দিতে হচ্ছে সুদ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য থেকে এসব জানা গেছে। সঙ্কটকালে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ের ধারা আগের চেয়ে কমেছে। অন্য দিকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের চাপে আছে বলে ইআরডি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ইআরডির হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কমেছে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড়। প্রথম তিন মাসে ১৩৪ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৯৩ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে প্রায় ৫৯ কোটি ডলার। এ দিকে ঋণ পরিশোধেই প্রথম প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা মোট ঋণের প্রায় ৩৯ শতাংশ। সুদ দিতে হয়েছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং মূলধন খাতে ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যদিও প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি।
এ তিন মাসে অর্থছাড় তুলনামূলক কম হলেও ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি আগের সময়ের চেয়ে বেশি এসেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই তিন মাসে ৯ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার ডলারের ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি এলেও চলতি অর্থবছরের এ তিন মাসে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ, নতুন করে এই ঋণের জন্য চুক্তি হয়েছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠার পর দেশের উন্নয়ন প্রকল্পেও গতি ফিরে আসতে থাকে। এর ফলে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো অর্থের প্রবাহও বাড়িয়েছিল। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলো। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় গত বছরের চেয়ে ঋণের পরিমাণ কমেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ঋণ ও অনুদান মিলে মোট ১০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৮৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছিল ৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার সমপরিমাণ। এবার তিন মাসে অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ডলার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আগে নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ৫২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত বছরের একই সময়ে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ অক্টোবর, ২০২২, 11:14 PM

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার ও জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল ঠিক তখন বিদেশী ঋণের প্রতিশ্রুতি বাড়লেও দাতাদের অর্থ ছাড় কমে গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড়েও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।
গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় কমেছে ৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। তবে কমেছে ঋণের অর্থ পরিশোধের পরিমাণ। আর মূল টাকার প্রায় অর্ধেকের সমপরিমাণ দিতে হচ্ছে সুদ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য থেকে এসব জানা গেছে। সঙ্কটকালে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ের ধারা আগের চেয়ে কমেছে। অন্য দিকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের চাপে আছে বলে ইআরডি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ইআরডির হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কমেছে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড়। প্রথম তিন মাসে ১৩৪ কোটি ৯২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৯৩ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে প্রায় ৫৯ কোটি ডলার। এ দিকে ঋণ পরিশোধেই প্রথম প্রান্তিকে ব্যয় হয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা মোট ঋণের প্রায় ৩৯ শতাংশ। সুদ দিতে হয়েছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং মূলধন খাতে ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যদিও প্রথম প্রান্তিকে বেড়েছে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি।
এ তিন মাসে অর্থছাড় তুলনামূলক কম হলেও ঋণের নতুন প্রতিশ্রুতি আগের সময়ের চেয়ে বেশি এসেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই তিন মাসে ৯ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার ডলারের ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি এলেও চলতি অর্থবছরের এ তিন মাসে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪০ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ, নতুন করে এই ঋণের জন্য চুক্তি হয়েছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠার পর দেশের উন্নয়ন প্রকল্পেও গতি ফিরে আসতে থাকে। এর ফলে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো অর্থের প্রবাহও বাড়িয়েছিল। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলো। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় গত বছরের চেয়ে ঋণের পরিমাণ কমেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ঋণ ও অনুদান মিলে মোট ১০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ১৮৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এই তিন মাসে অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছিল ৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার সমপরিমাণ। এবার তিন মাসে অনুদানের অর্থ ছাড় হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ডলার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আগে নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ৫২ কোটি ৫৬ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত বছরের একই সময়ে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার।