আইএমএফের ঋণ আলোচনা আসন্ন, ঢাকায় আসছে প্রতিনিধি দল

অনলাইন ডেস্ক
১৯ অক্টোবর, ২০২২, 2:14 AM

আইএমএফের ঋণ আলোচনা আসন্ন, ঢাকায় আসছে প্রতিনিধি দল
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ যে ঋণ চেয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য আগামী সপ্তাহে প্রতনিধি দল পাঠাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে নিতে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ তার নিয়মিত কোটার আওতায় পুরো অর্থ এবং রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ট্রাস্ট প্রোগ্রাম থেকে ঋণ চেয়েছে।
আইএমফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান-মারি গুলদে-উলফ বৃহস্পতিবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী সপ্তাহেই এই আলোচনা শুরু হচ্ছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গত অগাস্টে আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ চায় বাংলাদেশ। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছিলেন, কী পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাবে, তা দাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা এবং এরপরই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতির মধ্যে বাইরের উৎস থেকে তহবিল খুঁজছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টানাপোড়েনে মার্কিন ডলারের দর চড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশর রিজার্ভের ওপরও চাপ পড়েছে এবং রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে আইএমএপের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাংশ, যা আগের প্রাক্কলনে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
গুলদে-উলফ মনে করেন, বাংলাদেশ এ বছর এখনও অর্থনৈতিকভাবে ‘শক্তিশালী হচ্ছে’, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কক্ষচ্যুত হওয়ার শঙ্কাও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।
আইএমএফের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছি (বাংলাদেশের); কিন্তু বিশ্বব্যাপী কিছু সমস্যা রয়েছে, যা তাৎপর্যপূর্ণ।
“বাংলাদেশ একটি রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ এবং এর প্রধান আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে ঝক্কি-ঝামেলার কারণে আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশ।”
বাংলাদেশের টাকার প্রায় ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “রিজার্ভ কমে গেছে। বাংলাদেশ এখনও স্বস্তির পর্যায়ে আছে, কিন্তু সূচক নিম্নগামী হচ্ছে।”
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, তার প্রশংসা করেন গুলদে-উলফ। তার ভাষায়, বাংলাদেশের এই তৎপরতা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং আরও বাজে পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে।
আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সংস্থাটির সঙ্গে চূড়ান্ত দর-কষাকষির পর তিন কিস্তিতে ছাড় হবে এ অর্থ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, এর বাইরেও বিশ্বব্যাংক থেকে আলাদা দুটি প্রকল্পে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পেতে বাংলাদেশকে নানামুখী শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
রোববার (১৬ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এসব কথা জানান।
রাজস্ব বাড়াতে আইএমএফ ভ্যাট অবকাঠামোর সরলীকরণ, রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও বড় করদাতাদের কাছ থেকে ঠিক মতো কর আদায় করতে না পারার ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনার মতো লক্ষ্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি।
আইএমএফ আরও উল্লেখ করেছে, ব্যাংক খাতে উচ্চ মাত্রার নন-পারফর্মিং ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা অনেকটাই প্রকট। আইএমএফ এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগের সুপারিশ করেছে।
আইএমএফ যেসব সংস্কার কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো- করপোরেট সুশাসন আরও বলিষ্ঠ করা, বর্তমান অবকাঠামোর ওপর তদারকি আরও কঠোর করা ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, ঋণদাতাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আরও বলিষ্ঠ সহযোগিতা ও ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রণোদনা নিশ্চিতের জন্য আইনি ব্যবস্থার যথোপযুক্ত সংস্কার।
সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তার জন্য দেড় বিলিয়ন করে ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। বাকি দেড় বিলিয়ন চাওয়া হয়েছে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (ট্রাস্ট) থেকে।
অনলাইন ডেস্ক
১৯ অক্টোবর, ২০২২, 2:14 AM

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বাংলাদেশ যে ঋণ চেয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য আগামী সপ্তাহে প্রতনিধি দল পাঠাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে নিতে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ তার নিয়মিত কোটার আওতায় পুরো অর্থ এবং রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ট্রাস্ট প্রোগ্রাম থেকে ঋণ চেয়েছে।
আইএমফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান-মারি গুলদে-উলফ বৃহস্পতিবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী সপ্তাহেই এই আলোচনা শুরু হচ্ছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গত অগাস্টে আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলারের ঋণ চায় বাংলাদেশ। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছিলেন, কী পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাবে, তা দাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা এবং এরপরই রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতির মধ্যে বাইরের উৎস থেকে তহবিল খুঁজছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টানাপোড়েনে মার্কিন ডলারের দর চড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশর রিজার্ভের ওপরও চাপ পড়েছে এবং রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে আইএমএপের পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাংশ, যা আগের প্রাক্কলনে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
গুলদে-উলফ মনে করেন, বাংলাদেশ এ বছর এখনও অর্থনৈতিকভাবে ‘শক্তিশালী হচ্ছে’, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কক্ষচ্যুত হওয়ার শঙ্কাও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।
আইএমএফের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছি (বাংলাদেশের); কিন্তু বিশ্বব্যাপী কিছু সমস্যা রয়েছে, যা তাৎপর্যপূর্ণ।
“বাংলাদেশ একটি রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ এবং এর প্রধান আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে ঝক্কি-ঝামেলার কারণে আগামী বছর আমাদের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশ।”
বাংলাদেশের টাকার প্রায় ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “রিজার্ভ কমে গেছে। বাংলাদেশ এখনও স্বস্তির পর্যায়ে আছে, কিন্তু সূচক নিম্নগামী হচ্ছে।”
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, তার প্রশংসা করেন গুলদে-উলফ। তার ভাষায়, বাংলাদেশের এই তৎপরতা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং আরও বাজে পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে।
আইএমএফ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস পেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সংস্থাটির সঙ্গে চূড়ান্ত দর-কষাকষির পর তিন কিস্তিতে ছাড় হবে এ অর্থ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, এর বাইরেও বিশ্বব্যাংক থেকে আলাদা দুটি প্রকল্পে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা পেতে বাংলাদেশকে নানামুখী শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
রোববার (১৬ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এসব কথা জানান।
রাজস্ব বাড়াতে আইএমএফ ভ্যাট অবকাঠামোর সরলীকরণ, রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও বড় করদাতাদের কাছ থেকে ঠিক মতো কর আদায় করতে না পারার ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনার মতো লক্ষ্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি।
আইএমএফ আরও উল্লেখ করেছে, ব্যাংক খাতে উচ্চ মাত্রার নন-পারফর্মিং ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা অনেকটাই প্রকট। আইএমএফ এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগের সুপারিশ করেছে।
আইএমএফ যেসব সংস্কার কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো- করপোরেট সুশাসন আরও বলিষ্ঠ করা, বর্তমান অবকাঠামোর ওপর তদারকি আরও কঠোর করা ও এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, ঋণদাতাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আরও বলিষ্ঠ সহযোগিতা ও ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের জন্য প্রণোদনা নিশ্চিতের জন্য আইনি ব্যবস্থার যথোপযুক্ত সংস্কার।
সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তার জন্য দেড় বিলিয়ন করে ৩ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে। বাকি দেড় বিলিয়ন চাওয়া হয়েছে আইএমএফের নতুন উদ্যোগ, সহনশীলতা ও টেকসই সহায়তা তহবিল (ট্রাস্ট) থেকে।