আদালতের পর্যবেক্ষণ: উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন ফয়জুল

প্রভাতী খবর ডেস্ক:
২৬ এপ্রিল, ২০২২, 10:15 PM

আদালতের পর্যবেক্ষণ: উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন ফয়জুল
”স্বাধীন মত প্রকাশ ও পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা তথা সভ্যতার অগ্রগতির প্রধান নির্ণায়ক। এসবের চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবে পেছনের দিকে হাঁটবে। স্বাধীন ও গঠনমূলক ভিন্নমত চর্চার মাধ্যমেই সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব।”
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এসব কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি ফয়জুল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফয়জুল হাসানের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কালিয়ারকাপন গ্রামে। মামলায় ফয়জুলের বন্ধু সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উমেদনগর গ্রামের মো. সোহাগ মিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বাকি চার আসামি ফয়জুলের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফয়জুল হক ও ভাই এনামুল হাসানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়ে যেসব লেখক মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার পক্ষে থাকেন, তাদের ভয় দেখানোই ছিল ফয়জুলের মূল উদ্দেশ্য। মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। শিক্ষকতার বাইরে তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক ও জনপ্রিয় লেখক। বিজ্ঞান বিষয়ে ও শিশু-কিশোর উপযোগী বই লিখে জাতির মননশীলতা গঠনে ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার পক্ষে তার সরব অবস্থান সর্বজনবিদিত।
জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ উল্লেখ করে আদালত বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা পুণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছেন।
আসামি সম্পর্কে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ফয়জুল হাসান দেশি বা কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য—এমনটা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু তিনি বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট থেকে জিহাদি প্রবন্ধ ও বই ডাউনলোড করে পড়ে, উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কৌশলে ভার্চ্যুয়াল জগতে উগ্রবাদী মতবাদ ছড়িয়ে সহজে বেহেশতে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ প্রাণে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করছে। উচ্চশিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণেরা সহজেই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। আদালত উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়, এমন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের প্রচারিত তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে বসা অধ্যাপক জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে মো. ফয়জুল হাসান।
প্র.খ/বিপ্লব
প্রভাতী খবর ডেস্ক:
২৬ এপ্রিল, ২০২২, 10:15 PM

”স্বাধীন মত প্রকাশ ও পরমতসহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র, প্রগতিশীলতা তথা সভ্যতার অগ্রগতির প্রধান নির্ণায়ক। এসবের চর্চা নিশ্চিত করা না গেলে দেশ নিশ্চিতভাবে পেছনের দিকে হাঁটবে। স্বাধীন ও গঠনমূলক ভিন্নমত চর্চার মাধ্যমেই সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব।”
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এসব কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ নূরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি ফয়জুল হাসানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফয়জুল হাসানের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কালিয়ারকাপন গ্রামে। মামলায় ফয়জুলের বন্ধু সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উমেদনগর গ্রামের মো. সোহাগ মিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া বাকি চার আসামি ফয়জুলের বাবা আতিকুর রহমান, মা মিনারা বেগম, মামা ফয়জুল হক ও ভাই এনামুল হাসানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়ে যেসব লেখক মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার পক্ষে থাকেন, তাদের ভয় দেখানোই ছিল ফয়জুলের মূল উদ্দেশ্য। মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন প্রথিতযশা শিক্ষক। শিক্ষকতার বাইরে তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক ও জনপ্রিয় লেখক। বিজ্ঞান বিষয়ে ও শিশু-কিশোর উপযোগী বই লিখে জাতির মননশীলতা গঠনে ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীলতার পক্ষে তার সরব অবস্থান সর্বজনবিদিত।
জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনাটিকে ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ উল্লেখ করে আদালত বলেন, ইসলাম ধর্মের প্রকৃত মর্মবাণীকে না বুঝে নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা পুণ্যের কাজ মনে করে আসামি এই বর্বর হামলা চালিয়েছেন।
আসামি সম্পর্কে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ফয়জুল হাসান দেশি বা কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য—এমনটা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু তিনি বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইট থেকে জিহাদি প্রবন্ধ ও বই ডাউনলোড করে পড়ে, উগ্রবাদী বক্তাদের বক্তব্য শুনে সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ হন। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কৌশলে ভার্চ্যুয়াল জগতে উগ্রবাদী মতবাদ ছড়িয়ে সহজে বেহেশতে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ প্রাণে সন্ত্রাসবাদের বীজ বপন করছে। উচ্চশিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণেরা সহজেই তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। আদালত উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়, এমন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের প্রচারিত তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে বসা অধ্যাপক জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে মো. ফয়জুল হাসান।
প্র.খ/বিপ্লব