ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা: কয়েকদিনে অনন্ত ১৫ জন ঢুকেছ বাংলাদেশে

এসএম শামসুজ্জোহা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:54 PM

ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা: কয়েকদিনে অনন্ত ১৫ জন ঢুকেছ বাংলাদেশে
সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের বাহানায় মিয়ানমার কৌশলে রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়িত করার ফের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে করে আবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের বিষয়ে নজর রাখা বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আবার প্রত্যাবাসন ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি জায়গায়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আবার মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারে নতুন করে এই সংঘর্ষে দেশটিতে থাকা বাকি রোহিঙ্গা ও অন্য জাতিগোষ্ঠীও দেশটি ছাড়ার চেষ্টা করছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সংঘর্ষের কারণে গত কয়েকদিনে ১০-১৫ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার এশারা বেগম (২৭), সাদেক হোসেন (৪০), মো. তাহের (১৩), হাওয়া বিবি (২৪), রুপালী খাতুন (৮), আলী মোবারক শিশির (২৬), মো. শরীফ (৯), নমিরুল হাসান (৩৮), আয়েশা খাতুন (৭) ও বিবি জান্নাত (৩৯) পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
মিয়ানমার অংশে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এক রোহিঙ্গা বলেন, তাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। তবে চাপ বেশি রাখাইনদের ওপর যারা আরাকান আর্মির সমর্থক। তারা পালাতে চাই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক মাঝি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়নমারে জিম্মি দশায় আছে। তারা বাংলাদেশে চলে আসতে চায়; নতুনভাবে প্রায় ৪-৫ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষায় রয়েছে ।
বাংলাদেশ সীমান্ত ৪০ নম্বর পিলারের রাবার বাগান শ্রমিক গোলাম মাওলা (৪৫) বলেন, গত মাসে বাগানে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। সীমান্তে গা ঘেঁষে টহল দেয় সেদেশের সেনাবাহিনী। প্রায় সময় আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে নিচে অবিরাম গুলি বর্ষণ করে চলছে। শত শত গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করার বিকট শব্দে (বাংলাদেশ অংশে) ওই এলাকায় অবস্থান না করে তুমব্রু বাজারের দিকে পালিয়ে এসেছে স্থানীয় শ্রমিকরা এবং সেখানে বসবাসরত কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। শুনছি মায়ানমার সীমান্তের পাশে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন করে একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ইতোমধ্যে দুদফা তলব করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের ওপরে নজর রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। বাংলাদেশের অধিকতর সতর্ক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি সীমান্তে নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারে আসলে প্রকৃত ঘটনা কী সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মেহেদী হোসাইন কবির সোমবার বলেন, তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে। নতুন করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তুমব্রু এলাকায় নতুন করে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনের মংডুতে মিয়ানমারের ৯ হাজার সেনা সদস্য অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্য এলাকাগুলোতেও বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। তারা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরইমধ্যে ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে মংডুতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বুচিডংয়ে রোহিঙ্গারা রাস্তায় বের হলে সেনা ও বিজিপি সদস্যদের মারধরের শিকার হচ্ছে। জোর করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন- মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা আসলে উখিয়াবাসীর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা স্থানীয়রা বিপদে আছি, আমরা কোথায় যাব। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আরও রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক হাসান সারোয়ার প্রভাতী খবরকে বলেন, রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। মিয়ানমারে গোলাগুলি দেশটিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না। মিয়ানমার তার পশ্চিমের বিভিন্ন অংশে যেভাবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা সেখানে থাকা মানুষগুলোকে রোহিঙ্গাদের মতো আশপাশের দেশগুলোতে পালাতে আবারও বাধ্য করছে। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদেরও উৎসাহিত করেছে মিয়ানমার ছেড়ে বের হয়ে আসতে। দেখা যাবে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও এ সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে’।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, সার্বভৌম বাংলাদেশের সীমানায় মিয়ানমারের গোলাবারুদ পাওয়ার ঘটনা ‘ভীষণ বেদনাদায়ক।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ বিষয়ে আরও কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানো। আর যা যা করা প্রয়োজন তা সবই দ্রুত করা উচিত।
এসএম শামসুজ্জোহা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:54 PM

সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের বাহানায় মিয়ানমার কৌশলে রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়িত করার ফের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে করে আবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের বিষয়ে নজর রাখা বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আবার প্রত্যাবাসন ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। প্রতিদিনই দেশটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি জায়গায়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে আবার মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারে নতুন করে এই সংঘর্ষে দেশটিতে থাকা বাকি রোহিঙ্গা ও অন্য জাতিগোষ্ঠীও দেশটি ছাড়ার চেষ্টা করছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের সংঘর্ষের কারণে গত কয়েকদিনে ১০-১৫ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার এশারা বেগম (২৭), সাদেক হোসেন (৪০), মো. তাহের (১৩), হাওয়া বিবি (২৪), রুপালী খাতুন (৮), আলী মোবারক শিশির (২৬), মো. শরীফ (৯), নমিরুল হাসান (৩৮), আয়েশা খাতুন (৭) ও বিবি জান্নাত (৩৯) পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
মিয়ানমার অংশে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এক রোহিঙ্গা বলেন, তাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না সেনাবাহিনী। তবে চাপ বেশি রাখাইনদের ওপর যারা আরাকান আর্মির সমর্থক। তারা পালাতে চাই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক মাঝি বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়নমারে জিম্মি দশায় আছে। তারা বাংলাদেশে চলে আসতে চায়; নতুনভাবে প্রায় ৪-৫ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষায় রয়েছে ।
বাংলাদেশ সীমান্ত ৪০ নম্বর পিলারের রাবার বাগান শ্রমিক গোলাম মাওলা (৪৫) বলেন, গত মাসে বাগানে দুটি মর্টারশেল এসে পড়ে। সীমান্তে গা ঘেঁষে টহল দেয় সেদেশের সেনাবাহিনী। প্রায় সময় আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে নিচে অবিরাম গুলি বর্ষণ করে চলছে। শত শত গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ করার বিকট শব্দে (বাংলাদেশ অংশে) ওই এলাকায় অবস্থান না করে তুমব্রু বাজারের দিকে পালিয়ে এসেছে স্থানীয় শ্রমিকরা এবং সেখানে বসবাসরত কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। শুনছি মায়ানমার সীমান্তের পাশে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন করে একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ইতোমধ্যে দুদফা তলব করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের ওপরে নজর রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। বাংলাদেশের অধিকতর সতর্ক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি সীমান্তে নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারে আসলে প্রকৃত ঘটনা কী সেটা আমরা জানার চেষ্টা করছি।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মেহেদী হোসাইন কবির সোমবার বলেন, তুমব্রু সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সব সময় সতর্ক অবস্থানে আছে। নতুন করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তুমব্রু এলাকায় নতুন করে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবি কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনের মংডুতে মিয়ানমারের ৯ হাজার সেনা সদস্য অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্য এলাকাগুলোতেও বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। তারা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরইমধ্যে ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে মংডুতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বুচিডংয়ে রোহিঙ্গারা রাস্তায় বের হলে সেনা ও বিজিপি সদস্যদের মারধরের শিকার হচ্ছে। জোর করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেন- মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা আসলে উখিয়াবাসীর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা স্থানীয়রা বিপদে আছি, আমরা কোথায় যাব। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আরও রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক হাসান সারোয়ার প্রভাতী খবরকে বলেন, রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। মিয়ানমারে গোলাগুলি দেশটিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না। মিয়ানমার তার পশ্চিমের বিভিন্ন অংশে যেভাবে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তা সেখানে থাকা মানুষগুলোকে রোহিঙ্গাদের মতো আশপাশের দেশগুলোতে পালাতে আবারও বাধ্য করছে। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদেরও উৎসাহিত করেছে মিয়ানমার ছেড়ে বের হয়ে আসতে। দেখা যাবে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও এ সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে’।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, সার্বভৌম বাংলাদেশের সীমানায় মিয়ানমারের গোলাবারুদ পাওয়ার ঘটনা ‘ভীষণ বেদনাদায়ক।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ বিষয়ে আরও কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানো। আর যা যা করা প্রয়োজন তা সবই দ্রুত করা উচিত।