প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা-দিল্লি

অনলাইন ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:39 PM

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর: যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা-দিল্লি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এই ঐতিহাসিক সফরে দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এই সফরে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের রেল সংযোগ উন্নয়ন
টঙ্গী-আখাউড়া লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ। বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ; ভারতীয় রেলওয়ের স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ; বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান করবে ভারত।
এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ; হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন; বেনাপোল-যশোর রেল পথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন; বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন; সিরাজগঞ্জে একটি কন্টেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।
নিত্যপণ্য আমদানি
ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদামাফিক সরবরাহ নিশ্চিতে উভয় দেশের সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন
একটি শান্তিপূর্ণ এবং অপরাধমুক্ত সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, ত্রিপুরা সেক্টর থেকে শুরু করে সমগ্র সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন অংশগুলোতে কাঁটাতার নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।
সীমান্ত রক্ষাবাহিনী কর্তৃক পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার চোরাচালান এবং পাচার রোধে বিশেষত নারী ও শিশুপাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতাও চলমান থাকবে।
উভয় নেতাই সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ ও অভিব্যক্তি নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই অঞ্চল ও এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার প্রতিরোধ এবং সে সম্পর্কিত পদক্ষেপে সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য যানবাহন সংগ্রহের পরিকল্পনাসহ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক চূড়ান্তকরণে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বর্ধিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সমঝোতা স্মারকের প্রাথমিক কার্যকারিতাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পানিবণ্টন
এক দশকেরও বেশি সময় পর যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা আহ্বান করা, যেখানে সব অভিন্ন নদীর ব্যাপারে সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়, যা প্রশংসিত হয়েছে। আসাম রাজ্য সরকারসহ ভারতের সকল অংশীদারদের সহযোগিতায় কুশিয়ারা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কৃষকদের সাহায্য করবে এবং একইভাবে, দক্ষিণ আসামও এর দ্বারা উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অনুরোধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রিপুরার জনগণের জন্য খাবার পানি প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন শিগগিরই ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন এবং ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ২০১৯ এ স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কার্যকর হবে৷
তথ্য বিনিময় এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য এখন আরও অন্যান্য নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গঙ্গার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনে উভয় পক্ষই সম্মত হয়।
২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশ পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে। নদী দূষণ মোকাবিলা, নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষই একসঙ্গে কাজ করবে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা
সিঙ্ক্রোনাস গ্রিড কানেক্টিভিটির মাধ্যমে কাটিহার (বিহার) থেকে পার্বতীপুর (বাংলাদেশ) হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৭৬৫ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন “স্পেশ্যাল পারপাজ ভেহিকল” স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংযোগের মাধ্যমে মৌসুমী চাহিদামাফিক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই সহজ করবে।
নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশকে সংযুক্তপূর্বক উপ-আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড বাস্তবায়ন বেগবান হয়েছে। এই জাতীয় নেটওয়ার্ক স্থাপনে অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা গ্রহণ করেছে ভারত।
জ্বালানি খাতে সহযোগিতা
বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে উভয় পক্ষই আন্তঃসীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত উভয় দেশের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা নিশ্চিতে সম্মত হয়েছে।
এই বছরের আসাম ও মেঘালয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত আসাম থেকে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম, তেল এবং লুব্রিক্যান্ট পরিবহনের সুবিধার্থে বর্ধিত সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি ধন্যবাদ জানায়।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) জিটুজি ভিত্তিতে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগিতা
বাংলাদেশ ভারত সরকারের সাথে যুক্ত লাইন অফ ক্রেডিট এর অধীনে, বিশেষত গত বছরের তহবিল বিতরণের কার্যকারিতা এবং গতির জন্য ভারতের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশকে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেয়াতি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী। অন্যান্য দেশকে দেওয়া সকল উন্নয়ন অর্থায়নের প্রায় ২৫% বাংলাদেশকে প্রদান করে ভারত।
দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য
উভয় নেতা বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল মোটরযান চুক্তি কার্যকর করার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন। একবার সম্মত হলে, চারটি দেশের সীমান্তে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক যানবাহন নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা সম্ভব হবে।
উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মহেন্দ্রগঞ্জ (মেঘালয়) থেকে হিলিকে (পশ্চিমবঙ্গ) সংযুক্তকারী একটি নতুন হাইওয়ে নির্মাণকল্পে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে ভারত। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কেও তাদের অংশগ্রহণে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
নির্দিষ্ট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন/ বিমানবন্দর/ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে ভারতের দেওয়া বিনামূল্যের ট্রানজিট ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে ভারত।
লাভজনক দ্বিমুখী বাণিজ্য
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির অধীনে সফল পরীক্ষামূলক চালান সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগকারী মৈত্রী সেতুটিও চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এবং ভারত বাংলাদেশকে রামগড়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো, অভিবাসন এবং শুল্ক সুবিধা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছে।
দ্বিমুখী ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য, ভারতীয় পণ্যের ওপর বাংলাদেশ কর্তৃক আরোপিত বন্দর নিষেধাজ্ঞা অপসারণে আবারও জোর দেওয়া হয়েছে।
উভয় পক্ষের বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে এবং ২০২৬ সালের আগে এটি সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি অবস্থা থেকে উন্নীত হবে এবং বর্তমানে ভোগ করা শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধাগুলো ধরে রাখতে উদ্যোগ নেবে।
বেনাপোল-পেট্রাপোল আইসিপিতে দ্বিতীয় মালবাহী গেট নির্মাণের জন্য ভারতের দেওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বঙ্গবন্ধুর ওপর যৌথভাবে নির্মিত বায়োপিক “মুজিব: একটি জাতির রূপকার” খুব শিগগিরই শেষ হবে এবং আগামী বছর মুক্তি পেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের যৌথ প্রযোজনা এবং দুর্লভ ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলনে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।
২০১৮ সাল থেকে বিনামূল্যে ভারতের নামকরা হাসপাতালে ১০০ জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে ভারতের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
আঞ্চলিক সমস্যা
ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এইসব লোকদের নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপরে জোর দিয়েছে।
ভারত বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজনে এবং এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় পক্ষ তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
অনলাইন ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:39 PM

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফর শেষে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এই ঐতিহাসিক সফরে দুই দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে দুই দেশের উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এই সফরে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের রেল সংযোগ উন্নয়ন
টঙ্গী-আখাউড়া লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ। বাংলাদেশ রেলওয়েতে রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ; ভারতীয় রেলওয়ের স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ; বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার উন্নতি নিশ্চিতে আইটি-সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রদান করবে ভারত।
এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নিউ গীতালদহ রেল সংযোগ; হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন; বেনাপোল-যশোর রেল পথ ও সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং রেল স্টেশনের মানোন্নয়ন; বুড়িমারী ও চ্যাংড়াবান্ধার মধ্যে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন; সিরাজগঞ্জে একটি কন্টেইনার ডিপো নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে অনুদানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০টি ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত।
নিত্যপণ্য আমদানি
ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের চাহিদামাফিক সরবরাহ নিশ্চিতে উভয় দেশের সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানির ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন
একটি শান্তিপূর্ণ এবং অপরাধমুক্ত সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, ত্রিপুরা সেক্টর থেকে শুরু করে সমগ্র সীমান্তের কাঁটাতারবিহীন অংশগুলোতে কাঁটাতার নির্মাণের কাজ শেষ করার বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।
সীমান্ত রক্ষাবাহিনী কর্তৃক পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকার চোরাচালান এবং পাচার রোধে বিশেষত নারী ও শিশুপাচার রোধে পারস্পরিক সহযোগিতাও চলমান থাকবে।
উভয় নেতাই সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ ও অভিব্যক্তি নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই অঞ্চল ও এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার প্রতিরোধ এবং সে সম্পর্কিত পদক্ষেপে সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য যানবাহন সংগ্রহের পরিকল্পনাসহ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা লাইন অফ ক্রেডিটের অধীনে প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক চূড়ান্তকরণে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বর্ধিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত উপকূলীয় রাডার সিস্টেম সমঝোতা স্মারকের প্রাথমিক কার্যকারিতাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পানিবণ্টন
এক দশকেরও বেশি সময় পর যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা আহ্বান করা, যেখানে সব অভিন্ন নদীর ব্যাপারে সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়, যা প্রশংসিত হয়েছে। আসাম রাজ্য সরকারসহ ভারতের সকল অংশীদারদের সহযোগিতায় কুশিয়ারা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটি শুষ্ক মৌসুমে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জমিতে সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কৃষকদের সাহায্য করবে এবং একইভাবে, দক্ষিণ আসামও এর দ্বারা উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অনুরোধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রিপুরার জনগণের জন্য খাবার পানি প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন শিগগিরই ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন এবং ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ২০১৯ এ স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কার্যকর হবে৷
তথ্য বিনিময় এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির কাঠামো প্রণয়নের জন্য এখন আরও অন্যান্য নদীগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গঙ্গার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করতে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনে উভয় পক্ষই সম্মত হয়।
২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশ পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে। নদী দূষণ মোকাবিলা, নদীর পরিবেশ ও নাব্যতা উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে উভয় পক্ষই একসঙ্গে কাজ করবে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা
সিঙ্ক্রোনাস গ্রিড কানেক্টিভিটির মাধ্যমে কাটিহার (বিহার) থেকে পার্বতীপুর (বাংলাদেশ) হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৭৬৫ কিলোভোল্ট ট্রান্সমিশন লাইন “স্পেশ্যাল পারপাজ ভেহিকল” স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সংযোগের মাধ্যমে মৌসুমী চাহিদামাফিক বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানি উভয়ই সহজ করবে।
নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশকে সংযুক্তপূর্বক উপ-আঞ্চলিক পাওয়ার গ্রিড বাস্তবায়ন বেগবান হয়েছে। এই জাতীয় নেটওয়ার্ক স্থাপনে অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা গ্রহণ করেছে ভারত।
জ্বালানি খাতে সহযোগিতা
বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে উভয় পক্ষই আন্তঃসীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত উভয় দেশের অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা নিশ্চিতে সম্মত হয়েছে।
এই বছরের আসাম ও মেঘালয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভারত আসাম থেকে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম, তেল এবং লুব্রিক্যান্ট পরিবহনের সুবিধার্থে বর্ধিত সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি ধন্যবাদ জানায়।
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) জিটুজি ভিত্তিতে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগিতা
বাংলাদেশ ভারত সরকারের সাথে যুক্ত লাইন অফ ক্রেডিট এর অধীনে, বিশেষত গত বছরের তহবিল বিতরণের কার্যকারিতা এবং গতির জন্য ভারতের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশকে প্রায় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেয়াতি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী। অন্যান্য দেশকে দেওয়া সকল উন্নয়ন অর্থায়নের প্রায় ২৫% বাংলাদেশকে প্রদান করে ভারত।
দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য
উভয় নেতা বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল মোটরযান চুক্তি কার্যকর করার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন। একবার সম্মত হলে, চারটি দেশের সীমান্তে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক যানবাহন নিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা সম্ভব হবে।
উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মহেন্দ্রগঞ্জ (মেঘালয়) থেকে হিলিকে (পশ্চিমবঙ্গ) সংযুক্তকারী একটি নতুন হাইওয়ে নির্মাণকল্পে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে ভারত। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়কেও তাদের অংশগ্রহণে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
নির্দিষ্ট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন/ বিমানবন্দর/ সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে ভারতের দেওয়া বিনামূল্যের ট্রানজিট ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে ভারত।
লাভজনক দ্বিমুখী বাণিজ্য
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তির অধীনে সফল পরীক্ষামূলক চালান সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগকারী মৈত্রী সেতুটিও চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এবং ভারত বাংলাদেশকে রামগড়ে অবশিষ্ট অবকাঠামো, অভিবাসন এবং শুল্ক সুবিধা দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছে।
দ্বিমুখী ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য, ভারতীয় পণ্যের ওপর বাংলাদেশ কর্তৃক আরোপিত বন্দর নিষেধাজ্ঞা অপসারণে আবারও জোর দেওয়া হয়েছে।
উভয় পক্ষের বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে এবং ২০২৬ সালের আগে এটি সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি অবস্থা থেকে উন্নীত হবে এবং বর্তমানে ভোগ করা শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধাগুলো ধরে রাখতে উদ্যোগ নেবে।
বেনাপোল-পেট্রাপোল আইসিপিতে দ্বিতীয় মালবাহী গেট নির্মাণের জন্য ভারতের দেওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বঙ্গবন্ধুর ওপর যৌথভাবে নির্মিত বায়োপিক “মুজিব: একটি জাতির রূপকার” খুব শিগগিরই শেষ হবে এবং আগামী বছর মুক্তি পেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রের যৌথ প্রযোজনা এবং দুর্লভ ভিডিও ফুটেজের যৌথ সংকলনে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।
২০১৮ সাল থেকে বিনামূল্যে ভারতের নামকরা হাসপাতালে ১০০ জনেরও বেশি মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে ভারতের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
আঞ্চলিক সমস্যা
ভারত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এইসব লোকদের নিরাপদ, টেকসই এবং দ্রুত স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে তার অব্যাহত প্রতিশ্রুতির ওপরে জোর দিয়েছে।
ভারত বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজনে এবং এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় পক্ষ তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।