‘বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছিল’: প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালে তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকা বর্ণনা করলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:21 PM

‘বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছিল’: প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালে তাঁর পরিবারের হত্যাকাণ্ডের বিভীষিকা বর্ণনা করলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চার দিনের ভারত সফরের প্রাক্কালে বলেন, তাঁর বাবা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা যাতে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে না পারে- সেজন্য পরিচয় গোপন করে দিল্লীর পান্দারা রোডে তাঁকে তাঁর শিশু সন্তানদের নিয়ে থাকতে হয়েছিল।
ওই ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পর, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া সংবাদ সংস্থা এএনআই’কে দেয়া এক আবেগময় সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই হত্যাকা-ের পর কয়েক বছর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ওই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করেন। হত্যাকান্ডের আগে তিনি তাঁর পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামীর সাথে জার্মানীতে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই তাঁর পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে দেখা করতে বিমানবন্দরে আসেন। এটা ছিল একটি খুবই আনন্দঘন বিদায় এবং ওই সময় শেখ হাসিনা ভাবতেই পারেননি যে, এটাই তাঁর বাবা-মায়ের সাথে তাঁর শেষ দেখা। পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানানোর প্রায় পক্ষকাল পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেক হাসিনা তাঁর বাবা বাঙ্গালী জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এবং কিংবদন্তী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার খবরটি পান।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর দুঃখ ও আতঙ্কের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
অশ্রুসিক্ত চোখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি একদম অবিশ্বাস্য ছিল। এতই অবিশ্বাস্য যে- কোন বাঙালি এমনটা করতে পারে, এমনটা কল্পনাও করা যায় না। তখনও আমরা জানতে পারিনি যে, আসলে কি ঘটেছে। তখন আমরা শুধু শুনেছিলাম যে, সেনা অভ্যুত্থানে আমার বাবা নিহত হয়েছেন। কিন্তু তখনও জানতে পারিনি যে, আমার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।’ ওই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও আত্মীয় নিহত হন, যার মধ্যে তাঁর ১০ বছরের ভাই শেখ রাসেলও ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ওই ঘটনার পর প্রথম দেশ হিসেবে ভারত তাঁর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাৎক্ষণিকভাবে খবর পাঠান যে, তিনি আমাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। তাই আমরা দিল্লী ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই, কারণ আমরা শুনেছিলাম যে, আমরা দিল্লী গেলে, সেখান থেকে আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব এবং তখন আমাদের পরিবারের কতজন সদস্য বেঁচে আছেন- তা জানতে পারব।’ ওই হত্যাকা-ের ৫০ বছর পরও ঘটনা বর্ণনা করার সময় অত্যন্ত দুঃখ ও আবেগআব্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল।’
জার্মানীতে নিযুক্ত তৎকালীন অ্যাম্বাসেডর হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁকে প্রথম তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি জানতেই পারিনি আমি কোথায় ছিলাম। কিন্তু আমি তখন আমার বোনের ব্যাপারে চিন্তা করছিলাম, সে আমার ১০ বছরের ছোট। তাই, আমি ভাবলাম এই ঘটনাটি শুনার পর তার কি প্রতিক্রিয়া হবে। তারপর আমরা যখন দিল্লীতে ফিরে যাই, তারা প্রথমে আমাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি বাড়িতে রাখলেন। কারণ তারাও আমাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন।’
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে কঠোর নিরাপত্তায় পান্দারা রোডের একটি গোপন বাড়িতে রাখা হয় এবং তাঁদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁর স্বামীকে একটি চাকরীও দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একদিকে আমরা সবাইকে হারাই এবং অন্যদিকে আমি বিচারও চাইতে পারিনি। বিচারকে তখন প্রত্যাখ্যান করা হয়।’
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 11:21 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চার দিনের ভারত সফরের প্রাক্কালে বলেন, তাঁর বাবা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা যাতে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে না পারে- সেজন্য পরিচয় গোপন করে দিল্লীর পান্দারা রোডে তাঁকে তাঁর শিশু সন্তানদের নিয়ে থাকতে হয়েছিল।
ওই ঘটনার প্রায় পাঁচ দশক পর, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া সংবাদ সংস্থা এএনআই’কে দেয়া এক আবেগময় সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই হত্যাকা-ের পর কয়েক বছর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ওই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করেন। হত্যাকান্ডের আগে তিনি তাঁর পরমাণু বিজ্ঞানী স্বামীর সাথে জার্মানীতে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই তাঁর পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার সাথে দেখা করতে বিমানবন্দরে আসেন। এটা ছিল একটি খুবই আনন্দঘন বিদায় এবং ওই সময় শেখ হাসিনা ভাবতেই পারেননি যে, এটাই তাঁর বাবা-মায়ের সাথে তাঁর শেষ দেখা। পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানানোর প্রায় পক্ষকাল পর, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেক হাসিনা তাঁর বাবা বাঙ্গালী জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এবং কিংবদন্তী মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার খবরটি পান।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর দুঃখ ও আতঙ্কের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
অশ্রুসিক্ত চোখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি একদম অবিশ্বাস্য ছিল। এতই অবিশ্বাস্য যে- কোন বাঙালি এমনটা করতে পারে, এমনটা কল্পনাও করা যায় না। তখনও আমরা জানতে পারিনি যে, আসলে কি ঘটেছে। তখন আমরা শুধু শুনেছিলাম যে, সেনা অভ্যুত্থানে আমার বাবা নিহত হয়েছেন। কিন্তু তখনও জানতে পারিনি যে, আমার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।’ ওই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও আত্মীয় নিহত হন, যার মধ্যে তাঁর ১০ বছরের ভাই শেখ রাসেলও ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ওই ঘটনার পর প্রথম দেশ হিসেবে ভারত তাঁর দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাৎক্ষণিকভাবে খবর পাঠান যে, তিনি আমাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে চান। তাই আমরা দিল্লী ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই, কারণ আমরা শুনেছিলাম যে, আমরা দিল্লী গেলে, সেখান থেকে আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব এবং তখন আমাদের পরিবারের কতজন সদস্য বেঁচে আছেন- তা জানতে পারব।’ ওই হত্যাকা-ের ৫০ বছর পরও ঘটনা বর্ণনা করার সময় অত্যন্ত দুঃখ ও আবেগআব্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল।’
জার্মানীতে নিযুক্ত তৎকালীন অ্যাম্বাসেডর হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁকে প্রথম তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি জানতেই পারিনি আমি কোথায় ছিলাম। কিন্তু আমি তখন আমার বোনের ব্যাপারে চিন্তা করছিলাম, সে আমার ১০ বছরের ছোট। তাই, আমি ভাবলাম এই ঘটনাটি শুনার পর তার কি প্রতিক্রিয়া হবে। তারপর আমরা যখন দিল্লীতে ফিরে যাই, তারা প্রথমে আমাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি বাড়িতে রাখলেন। কারণ তারাও আমাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন।’
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে কঠোর নিরাপত্তায় পান্দারা রোডের একটি গোপন বাড়িতে রাখা হয় এবং তাঁদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁর স্বামীকে একটি চাকরীও দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘একদিকে আমরা সবাইকে হারাই এবং অন্যদিকে আমি বিচারও চাইতে পারিনি। বিচারকে তখন প্রত্যাখ্যান করা হয়।’