অপরাধ-অবক্ষয়ের মূলেই মাদক

#
news image

মাদক অনেক অপরাধের জননী। নেশায় মাতাল হয়ে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে মাদকাসক্ত। করতে পারে ব্যভিচারসহ নানারকম জঘন্য অপরাধ। এমনকি মারা যেতে পারে সে নিজেও। মাদক এমন এক অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, বরং মাদকসেবী নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
সমাজে অবক্ষয়ের মূলে মাদককেই দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, সমাজে যত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- তার মূল কারণ মাদকাসক্তি। ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা, কিশোর গ্যাং. ইভটিজিং, চুরি ও ছিনতাই সবকিছুর পেছনে মাদকাসক্তরাই থাকে। 
একজন মাদকাসক্ত তার নেশার জন্য হিংস্র হয়ে ওঠে। তখন এমন কোন কাজ নাই, যা সে করে না। প্রথমত নিজ বাসা থেকে মা-বোনের অলংকার চুরি করে, এরপর বাপের টাকা চুরি করে। এসব করতে করতে পরিবারের লোকজন যখন অতিষ্ঠ হয়ে যায়, তখন সে বাইরে নেশার টাকা জোগাতে ছিনতাই করে, লোকের পকেট কাটে। এভাবেই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে বড় সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংবাদপত্র ও প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা, খুনসহ সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মাদকাসক্ত। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয় মাদক সেবন করার পর অনেকের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়।
গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল্লাহপুর পুলিশ বক্সের পাশ থেকে মো. সেলিম ও মো. মামুন মিয়া নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। তারা মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বিভিন্ন যানবাহন ও দোকানে ভিক্ষা করছিল। ভিক্ষার ওই টাকা দিয়ে তারা মাদক সেবনসহ মাদক কেনাবেচা করে বলে জানায় পুলিশ। এর আগে জুলাই মাসের ২৫ তারিখ সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। বুলবুলের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করতেই ছুরি মারে যুবকরা। তাদের দুই জনের মধ্যে একজনের বয়স ১৯ বছর এবং অপরজনের বয়স ২৯ বছর। একই সময় অর্থাৎ ২১ জুলাই রাজধানীর কাওরান বাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত গ্রেফতারকৃত দুই তরুণ পুলিশকে জানিয়েছে, তারা মোবাইলটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে, সেই টাকায় তারা মদ কিনে খেয়েছিল। 
গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে সরকারিভাবে মাদকাসক্তের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি নানা তথ্যমতে দেশে ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তদের ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। 
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী রয়েছে। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইতিমধ্যেই দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে বছরে শুধু ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটির মতো, যার বাজার মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি ১৫০ টাকা)। নেশার পেছনে একেকজন প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বা তার বেশী খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে ধর্ষণ, খুনসহ অধিকাংশ অপরাধের পেছনেই রয়েছে মাদক। তারা বলেন, ফেসবুক লাইভে এসে একটি ছেলে বা মেয়ে যখন আত্মহত্যা করছে, তখন কি তাকে স্বাভাবিক মনে হয়! সে সুস্থ-স্বাভাবিক নয়, সে বুঝতে পারছে না যে, সে মারা যাবে এবং তার বাবা-মা বা আপনজনেরা কষ্ট পাবে। এই বুুদ্ধি তার কাজ করে না। এজন্য সমাজের অবক্ষয় দূর করতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় সার্টিফিকেট দেখার আগে ‘ডোপ টেস্ট’ দেখতে হবে।
তারা আরো বলেন, সার্টিফিকেট সবাই পায় কিন্তু মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী কয়জন এলো, সেটা দেখার সময় এসেছে। আমাদের এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমরা জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি দেখব, সে সম্পূর্ণ সুস্থ্য মানুষ কি না, মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ কি না। এ জিনিসগুলো যখন আমরা দেখা শুরু করব তখন মাদকাসক্ত কমবে এবং অবক্ষয় বন্ধ হবে। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ছিনতাই বন্ধ হবে, কারণ কোন সুস্থ মানবিক বিবেকসম্পন্ন মানুষ এ ধরনের অনৈতিক কাজ করতে পারে না। তবে আমরা সমস্যাটা তলিয়ে দেখছি না।
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও মাদকদ্রব্য নেসা নিরোধ সংস্থা ‘মানস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী প্রভাতী খবরকে বলেন, মাদক দমনে আমাদের টার্গেট কেবল মাফিয়া চক্রকে ধরা। কিন্তু আমাদের লক্ষ হওয়া উচিত এই যে, আমরা প্রতিটা চালকের ডোপ টেস্ট করাব, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামুলক করা হবে, তাহলে চালক বা শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই ভীত থাকত এবং মাদক ব্যাবহার অনেকাংশে কমে যেত। 
তিনি বলেন, আমরা যদি গ্রাসরুটে কাজ না করি, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের বাস্তবায়ন থাকতে হবে। 
তিনি উদাহরণ দিয়ে আরো বলেন, যখন ভেজালবিরোধী অভিযান চলে তখন খাদ্যে ভেজাল কমে যায়। অন্য সময় বেশি হয়। আমাদের নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান এবং ডোপ টেস্ট অব্যাহত করতে হবে। ডোপ টেস্ট আইনের মধ্যে আনা গেলে মাদক প্রতিরোধ করা যাবে।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি খুশী কবীর বলেন, ‘সমাজে সব অপরাধের মূলেই যে মাদক সবক্ষেত্রে এমন হয় না। অনেক সময় দেখা যায় অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও অপরাধ করে থাকে। তারা মাদকাসক্ত নয়, অথচ অন্যায় বা নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে সমাজে অধিকাংশ অপরাধের পিছনে মাদক একটা কারণ তো হতেই পারে।'
পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মাদক সেবন যারা করে তারা অনেক ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি থাকে না। মাদকের প্রতি সে নির্ভরশীল হয় এবং মাদকই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন তার মাদকের প্রয়োজন পড়ে, তখন সে টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সবকিছু করতে পারে। 
'এর জন্য শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলেই হবে না। গোটা সমাজকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবার থেকে বাচ্চাদের মনে এটা ঢুকিয়ে দিতে হবে যে, মাদক একটা ভীতিকর জিনিস, মাদকে আসক্ত হলে জীবন ধ্বংস হয়ে যায় এবং মাদক সেবনকারী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।'

এসএম শামসুজ্জোহা

২৯ আগস্ট, ২০২২,  9:31 PM

news image

মাদক অনেক অপরাধের জননী। নেশায় মাতাল হয়ে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে মাদকাসক্ত। করতে পারে ব্যভিচারসহ নানারকম জঘন্য অপরাধ। এমনকি মারা যেতে পারে সে নিজেও। মাদক এমন এক অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, বরং মাদকসেবী নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
সমাজে অবক্ষয়ের মূলে মাদককেই দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, সমাজে যত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে- তার মূল কারণ মাদকাসক্তি। ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা, কিশোর গ্যাং. ইভটিজিং, চুরি ও ছিনতাই সবকিছুর পেছনে মাদকাসক্তরাই থাকে। 
একজন মাদকাসক্ত তার নেশার জন্য হিংস্র হয়ে ওঠে। তখন এমন কোন কাজ নাই, যা সে করে না। প্রথমত নিজ বাসা থেকে মা-বোনের অলংকার চুরি করে, এরপর বাপের টাকা চুরি করে। এসব করতে করতে পরিবারের লোকজন যখন অতিষ্ঠ হয়ে যায়, তখন সে বাইরে নেশার টাকা জোগাতে ছিনতাই করে, লোকের পকেট কাটে। এভাবেই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে বড় সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংবাদপত্র ও প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা, খুনসহ সব ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মাদকাসক্ত। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয় মাদক সেবন করার পর অনেকের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়।
গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল্লাহপুর পুলিশ বক্সের পাশ থেকে মো. সেলিম ও মো. মামুন মিয়া নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। তারা মায়ের অসুস্থতার কথা বলে বিভিন্ন যানবাহন ও দোকানে ভিক্ষা করছিল। ভিক্ষার ওই টাকা দিয়ে তারা মাদক সেবনসহ মাদক কেনাবেচা করে বলে জানায় পুলিশ। এর আগে জুলাই মাসের ২৫ তারিখ সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। বুলবুলের কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করতেই ছুরি মারে যুবকরা। তাদের দুই জনের মধ্যে একজনের বয়স ১৯ বছর এবং অপরজনের বয়স ২৯ বছর। একই সময় অর্থাৎ ২১ জুলাই রাজধানীর কাওরান বাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত গ্রেফতারকৃত দুই তরুণ পুলিশকে জানিয়েছে, তারা মোবাইলটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে, সেই টাকায় তারা মদ কিনে খেয়েছিল। 
গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে সরকারিভাবে মাদকাসক্তের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি নানা তথ্যমতে দেশে ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, মাদকাসক্তদের ৯৮ ভাগই ধূমপায়ী। 
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী রয়েছে। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইতিমধ্যেই দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে বছরে শুধু ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটির মতো, যার বাজার মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি ১৫০ টাকা)। নেশার পেছনে একেকজন প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বা তার বেশী খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে ধর্ষণ, খুনসহ অধিকাংশ অপরাধের পেছনেই রয়েছে মাদক। তারা বলেন, ফেসবুক লাইভে এসে একটি ছেলে বা মেয়ে যখন আত্মহত্যা করছে, তখন কি তাকে স্বাভাবিক মনে হয়! সে সুস্থ-স্বাভাবিক নয়, সে বুঝতে পারছে না যে, সে মারা যাবে এবং তার বাবা-মা বা আপনজনেরা কষ্ট পাবে। এই বুুদ্ধি তার কাজ করে না। এজন্য সমাজের অবক্ষয় দূর করতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় সার্টিফিকেট দেখার আগে ‘ডোপ টেস্ট’ দেখতে হবে।
তারা আরো বলেন, সার্টিফিকেট সবাই পায় কিন্তু মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার্থী কয়জন এলো, সেটা দেখার সময় এসেছে। আমাদের এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমরা জিপিএ-৫ এর পাশাপাশি দেখব, সে সম্পূর্ণ সুস্থ্য মানুষ কি না, মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ কি না। এ জিনিসগুলো যখন আমরা দেখা শুরু করব তখন মাদকাসক্ত কমবে এবং অবক্ষয় বন্ধ হবে। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ছিনতাই বন্ধ হবে, কারণ কোন সুস্থ মানবিক বিবেকসম্পন্ন মানুষ এ ধরনের অনৈতিক কাজ করতে পারে না। তবে আমরা সমস্যাটা তলিয়ে দেখছি না।
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও মাদকদ্রব্য নেসা নিরোধ সংস্থা ‘মানস’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী প্রভাতী খবরকে বলেন, মাদক দমনে আমাদের টার্গেট কেবল মাফিয়া চক্রকে ধরা। কিন্তু আমাদের লক্ষ হওয়া উচিত এই যে, আমরা প্রতিটা চালকের ডোপ টেস্ট করাব, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ডোপ টেস্ট বাধ্যতামুলক করা হবে, তাহলে চালক বা শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই ভীত থাকত এবং মাদক ব্যাবহার অনেকাংশে কমে যেত। 
তিনি বলেন, আমরা যদি গ্রাসরুটে কাজ না করি, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের বাস্তবায়ন থাকতে হবে। 
তিনি উদাহরণ দিয়ে আরো বলেন, যখন ভেজালবিরোধী অভিযান চলে তখন খাদ্যে ভেজাল কমে যায়। অন্য সময় বেশি হয়। আমাদের নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী অভিযান এবং ডোপ টেস্ট অব্যাহত করতে হবে। ডোপ টেস্ট আইনের মধ্যে আনা গেলে মাদক প্রতিরোধ করা যাবে।
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বোর্ড অব ট্রাস্টি খুশী কবীর বলেন, ‘সমাজে সব অপরাধের মূলেই যে মাদক সবক্ষেত্রে এমন হয় না। অনেক সময় দেখা যায় অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও অপরাধ করে থাকে। তারা মাদকাসক্ত নয়, অথচ অন্যায় বা নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে সমাজে অধিকাংশ অপরাধের পিছনে মাদক একটা কারণ তো হতেই পারে।'
পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মাদক সেবন যারা করে তারা অনেক ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি থাকে না। মাদকের প্রতি সে নির্ভরশীল হয় এবং মাদকই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন তার মাদকের প্রয়োজন পড়ে, তখন সে টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সবকিছু করতে পারে। 
'এর জন্য শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করলেই হবে না। গোটা সমাজকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবার থেকে বাচ্চাদের মনে এটা ঢুকিয়ে দিতে হবে যে, মাদক একটা ভীতিকর জিনিস, মাদকে আসক্ত হলে জীবন ধ্বংস হয়ে যায় এবং মাদক সেবনকারী ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।'