সয়াবিন নিয়ে 'তামাসা' চলছেই

#
news image

"অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের তামাসার চরম শিকার দেশের সাধারন মানুষ"

ভোক্তার স্বার্থে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করে সরকার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। ব্যবসায়ীরা এর সুফল কড়ায়-গণ্ডায় ভোগ করছেন। কিন্তু দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। সেই নিগৃহিতের মধ্যেই রয়ে গেলেন ভোক্তা সাধারণ। 
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ৯ জুন সয়াবিনের লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারন করা হয়। এর আগে (৫ মে) সয়াবিনের লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯৮ টাকা নির্ধারন করার পর তেলের দাম কমার আভাস দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। 
কিন্তু তার এ আশ্বাসের এক সপ্তাহ পরেই উলটো প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়। অবশ্য দুই সপ্তাহ পরে ২৪ জুন প্রতি লিটারে দাম কমানো হয় ৬ টাকা। ফলাফল (মে-জুন দুই মাসে) দাম তো কমলই না বরং আগের থেকে আরও এক টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ভোক্তাদের। 
বাজার সংস্লিষ্টরা বলেন, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের তামাসার চরম শিকার দেশের সাধারন মানুষ। ভোক্তাদের পকেট অতি মুনাফার প্রবণতায় বরাবরের মত চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে ভোক্তা সাধারণের মাঝে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের টনপ্রতি গড় মূল্য ছিল ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে এ দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে ১,৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এক পর্যায়ে তা আরো বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়ায় ১,৯৫৬ ডলারে। এপ্রিলে কিছুটা কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১,৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে এটি টনপ্রতি ১,৭৮১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য ধরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব বলছে, গত ২২ জুন আর্জেন্টিনায় অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের টনপ্রতি দাম ছিল ১ হাজার ৪৬৪ ডলার, যা এক মাস আগে ১ হাজার ৯৭০ ডলার ছিল। তার মানে, অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২ জুন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এখন দেশের বাজারেও তা কমবে। মে মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। সুখবর হচ্ছে, পাম তেলের দাম কমেছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে-সয়াবিনের দামও কমার দিকে। আমার ধারণা, দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের এক সপ্তাহের মধ্যে (৯ জুন) প্রতি লিটার ভোজ্যতেল সর্বো”চ ৭ টাকা বাড়িয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন দাম কার্যকর করে। 
সেই সময়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এখন থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হবে ২০৫ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম পড়বে খুচরা পর্যায়ে ৯৯৭ টাকা, যেটি ৯৮৫ টাকায় বিক্রি হ”িছল। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকায় বিক্রি হবে। এই তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হ”িছল। আর খোলা পাম তেল এখন থেকে প্রতি লিটার ১৫৮ টাকায় বিক্রি হবে।
এর আগে গত ৫ মে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা এবং খোলা তেলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গত ২০ মার্চের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৪৪ টাকা এবং ৩৮ টাকা বেশি। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই দাম বাড়ানোর কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ১৪ দিন পর গত ২৪ জুন প্রতি লিটারে ৬ টাকা কামানোর কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। 
সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (২৭ জুন) থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬ টাকা কমে বিক্রি হবে ১৯৯ টাকায় এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে । এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৮০ টাকা করা হয়। 
শুধু সয়াবিনের দাম কমালেও পাম তেল বা সুপার পাম তেল নিয়ে কিছু বলেনি ভোজ্যতেল পরিশোধন সমিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দামও একই হারে কমেছে।
এদিকে ২৬ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আভাস দিয়েছিলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের বাজারেও দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে দাম খুব একটা কমেনি। যদিও সামান্য কিছু কমেছে আমদানিতে তার প্রভাব এখনই পড়বে না। কারণ দেশে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া এই দামের সঙ্গে জাহাজ ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়। তবে ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে এলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের বাজারে দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান সূত্রটি।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম পাঁচবার উঠানামা করে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বেড়েছে, কমেছে একবার। 
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। ফলে অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিš‘ ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময়ও বেঁধে দেওয়া দামে তেল পাওয়া যায়নি।
পরে দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ¯ি’তিশীল রাখতে সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। এর আগে এলসি কমিশন ও মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর সরকার ২০ মার্চ তেলের দাম প্রতি লিটার ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। কিš‘ ওই দরে বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। বিক্রি হয় ১৮০ টাকার উপরে। গোপনে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ নানা কারসাজি করে তেলের বাজার অ¯ি’র করা হয় দেশ জুড়ে। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সরকারের বিভিন্ন সং¯’া বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পায় এবং বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করে।

হরলাল রায় সাগর

৩০ জুন, ২০২২,  1:19 AM

news image

"অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের তামাসার চরম শিকার দেশের সাধারন মানুষ"

ভোক্তার স্বার্থে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করে সরকার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। ব্যবসায়ীরা এর সুফল কড়ায়-গণ্ডায় ভোগ করছেন। কিন্তু দেশে তেলের দাম কমানো হয়নি। সেই নিগৃহিতের মধ্যেই রয়ে গেলেন ভোক্তা সাধারণ। 
বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ৯ জুন সয়াবিনের লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারন করা হয়। এর আগে (৫ মে) সয়াবিনের লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯৮ টাকা নির্ধারন করার পর তেলের দাম কমার আভাস দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। 
কিন্তু তার এ আশ্বাসের এক সপ্তাহ পরেই উলটো প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়। অবশ্য দুই সপ্তাহ পরে ২৪ জুন প্রতি লিটারে দাম কমানো হয় ৬ টাকা। ফলাফল (মে-জুন দুই মাসে) দাম তো কমলই না বরং আগের থেকে আরও এক টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ভোক্তাদের। 
বাজার সংস্লিষ্টরা বলেন, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের তামাসার চরম শিকার দেশের সাধারন মানুষ। ভোক্তাদের পকেট অতি মুনাফার প্রবণতায় বরাবরের মত চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে ভোক্তা সাধারণের মাঝে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের টনপ্রতি গড় মূল্য ছিল ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে এ দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে ১,৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এক পর্যায়ে তা আরো বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়ায় ১,৯৫৬ ডলারে। এপ্রিলে কিছুটা কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১,৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে এটি টনপ্রতি ১,৭৮১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য ধরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব বলছে, গত ২২ জুন আর্জেন্টিনায় অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের টনপ্রতি দাম ছিল ১ হাজার ৪৬৪ ডলার, যা এক মাস আগে ১ হাজার ৯৭০ ডলার ছিল। তার মানে, অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২ জুন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এখন দেশের বাজারেও তা কমবে। মে মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। সুখবর হচ্ছে, পাম তেলের দাম কমেছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে-সয়াবিনের দামও কমার দিকে। আমার ধারণা, দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের এক সপ্তাহের মধ্যে (৯ জুন) প্রতি লিটার ভোজ্যতেল সর্বো”চ ৭ টাকা বাড়িয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন দাম কার্যকর করে। 
সেই সময়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এখন থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হবে ২০৫ টাকায়। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম পড়বে খুচরা পর্যায়ে ৯৯৭ টাকা, যেটি ৯৮৫ টাকায় বিক্রি হ”িছল। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকায় বিক্রি হবে। এই তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হ”িছল। আর খোলা পাম তেল এখন থেকে প্রতি লিটার ১৫৮ টাকায় বিক্রি হবে।
এর আগে গত ৫ মে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা এবং খোলা তেলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গত ২০ মার্চের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি লিটারে যথাক্রমে ৪৪ টাকা এবং ৩৮ টাকা বেশি। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই দাম বাড়ানোর কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ১৪ দিন পর গত ২৪ জুন প্রতি লিটারে ৬ টাকা কামানোর কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। 
সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (২৭ জুন) থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬ টাকা কমে বিক্রি হবে ১৯৯ টাকায় এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে । এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৮০ টাকা করা হয়। 
শুধু সয়াবিনের দাম কমালেও পাম তেল বা সুপার পাম তেল নিয়ে কিছু বলেনি ভোজ্যতেল পরিশোধন সমিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দামও একই হারে কমেছে।
এদিকে ২৬ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আভাস দিয়েছিলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম কমতে পারে। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের বাজারেও দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে দাম খুব একটা কমেনি। যদিও সামান্য কিছু কমেছে আমদানিতে তার প্রভাব এখনই পড়বে না। কারণ দেশে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া এই দামের সঙ্গে জাহাজ ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়। তবে ভোজ্যতেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে এলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের বাজারে দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানান সূত্রটি।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম পাঁচবার উঠানামা করে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বেড়েছে, কমেছে একবার। 
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। ফলে অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিš‘ ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে সময়ও বেঁধে দেওয়া দামে তেল পাওয়া যায়নি।
পরে দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ¯ি’তিশীল রাখতে সরকার সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ, উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। এর আগে এলসি কমিশন ও মার্জিন প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর সরকার ২০ মার্চ তেলের দাম প্রতি লিটার ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। কিš‘ ওই দরে বাজারে তেল পাওয়া যায়নি। বিক্রি হয় ১৮০ টাকার উপরে। গোপনে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিসহ নানা কারসাজি করে তেলের বাজার অ¯ি’র করা হয় দেশ জুড়ে। 
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সরকারের বিভিন্ন সং¯’া বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পায় এবং বিপুল পরিমাণ তেল জব্দ করে।