আজ ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস ১৮ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর
২৫ আগস্ট, ২০২৪, 7:44 PM

আজ ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস ১৮ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি
আজ ২৬ আগস্ট। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি না করার দাবিতে ২০০৬ সালের এইদিনে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বহুজাতিক কোম্পানী এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে তৎকালিন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও পুলিশের গুলিতে কলেজ ছাত্র তরিকুল, আমিন ও সালেকিন নামের তিন যুবকের মৃত্যুসহ দুথশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়ের মতো অনেকেই এখনও পঙ্গুত্বের অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ সাহাবাজপুরের প্রদীপ সরকার পঙ্গুত্ব অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছেন।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, ২০০৬ সালের ২৬শে আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্বতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়নের এশিয়া এনার্জি নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানীর ফুলবাড়ীর অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গেলে, ওইদিন তৎকালিন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় সুজাপুর চাঁদপাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম (২০), বারকোনা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আমিন (১৫) ও উত্তর সাহাবাজপুর গ্রামের সালেকিন (১৭)। একই ঘটনায় দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র, রতনপুর গ্রামের শ্রীমান বাস্কে, সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়সহ চিরতরে পঙ্গু হয় প্রায় দুইশতাধিক মানুষ।
ওই সময় ২৬আগস্ট থেকে ৩০আগস্ট পর্যন্ত জনতার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল ছিল ফুলবাড়ী খনি এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে বাস, ট্রেন চলাচলসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলন কারীরা। ২৮আগস্ট এশিয়া এনার্জির সুবিধাভোগী (দালাল) হিসেবে চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তির বাড়িঘর ভাংচুর চালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। গণআন্দোলনের মুখে তৎকালিন সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সমঝোতা বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের সাথে সরকারের ছয়দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।
গণ আন্দোলনের ১৮ বছরে পদার্পন করলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি সেই সময়ের ৬ দফা চুক্তি। এই ছয়দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিস্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলি বর্ষণসহ হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতারসহ শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা। তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জিকে রুখে দিয়েছিল এই এলাাকার মানুষ কিন্তু তাদেরকে বিতাড়িত করতে পারেনি। এতদিন দেশে স্বৈরশাসক ছিল তারা এই বিষয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বা ছয়দফা চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে বর্তমানে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি অন্তরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের এই সরকারের কাছে আমাদের দাবি ফুলবাড়ীর ছয়দফাথর পূর্ণ বাস্তবায়ন।
এদিকে তৎকালিন বিএনপি-জামাত জোট সরকার ছয়দফা চুক্তির আংশিক বাস্তবায়ন করে। ছয়দফা চুক্তি পূর্ণ বাস্তায়নের দাবিতে এখনও ফুলবাড়ী খনি অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। ২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘‘ফুলবাড়ী দিবসথথ এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘‘ফুলবাড়ী শোক দিবসথথ হিসেবে ঘোষণা করে পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পালন করে আসছে। ফুলবাড়ী দিবসে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আসাত স্মৃতি স্তম্ভে সর্যদয়ের সাথে সাথে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, গণ জমায়েত, শহীদ বেদীতে পুষ্প মাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা।
মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর
২৫ আগস্ট, ২০২৪, 7:44 PM

আজ ২৬ আগস্ট। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি না করার দাবিতে ২০০৬ সালের এইদিনে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বহুজাতিক কোম্পানী এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে তৎকালিন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও পুলিশের গুলিতে কলেজ ছাত্র তরিকুল, আমিন ও সালেকিন নামের তিন যুবকের মৃত্যুসহ দুথশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়ের মতো অনেকেই এখনও পঙ্গুত্বের অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ সাহাবাজপুরের প্রদীপ সরকার পঙ্গুত্ব অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছেন।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, ২০০৬ সালের ২৬শে আগস্ট দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্বতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি বাস্তবায়নের এশিয়া এনার্জি নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানীর ফুলবাড়ীর অফিস ঘেরাও কর্মসুচি পালন করতে গেলে, ওইদিন তৎকালিন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় সুজাপুর চাঁদপাড়া গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম (২০), বারকোনা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে আমিন (১৫) ও উত্তর সাহাবাজপুর গ্রামের সালেকিন (১৭)। একই ঘটনায় দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র, রতনপুর গ্রামের শ্রীমান বাস্কে, সুজাপুর গ্রামের বাবলু রায়সহ চিরতরে পঙ্গু হয় প্রায় দুইশতাধিক মানুষ।
ওই সময় ২৬আগস্ট থেকে ৩০আগস্ট পর্যন্ত জনতার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল ছিল ফুলবাড়ী খনি এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে বাস, ট্রেন চলাচলসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলন কারীরা। ২৮আগস্ট এশিয়া এনার্জির সুবিধাভোগী (দালাল) হিসেবে চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তির বাড়িঘর ভাংচুর চালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। গণআন্দোলনের মুখে তৎকালিন সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সমঝোতা বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের সাথে সরকারের ছয়দফা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহম্মদ।
গণ আন্দোলনের ১৮ বছরে পদার্পন করলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি সেই সময়ের ৬ দফা চুক্তি। এই ছয়দফা চুক্তির মধ্যে রয়েছে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী ও দেশ থেকে বহিস্কার, উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি ফুলবাড়ীসহ দেশের কোথাও না করা, পুলিশ-বিডিআরের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা, গুলি বর্ষণসহ হতাহতের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন, শহীদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এশিয়া এনার্জির দালালদের গ্রেফতারসহ শাস্তি প্রদান, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার এবং নতুন করে মামলা না করা। তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জিকে রুখে দিয়েছিল এই এলাাকার মানুষ কিন্তু তাদেরকে বিতাড়িত করতে পারেনি। এতদিন দেশে স্বৈরশাসক ছিল তারা এই বিষয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বা ছয়দফা চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে বর্তমানে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি অন্তরবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের এই সরকারের কাছে আমাদের দাবি ফুলবাড়ীর ছয়দফাথর পূর্ণ বাস্তবায়ন।
এদিকে তৎকালিন বিএনপি-জামাত জোট সরকার ছয়দফা চুক্তির আংশিক বাস্তবায়ন করে। ছয়দফা চুক্তি পূর্ণ বাস্তায়নের দাবিতে এখনও ফুলবাড়ী খনি অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। ২৬ আগস্ট দিনটিকে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘‘ফুলবাড়ী দিবসথথ এবং স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ‘‘ফুলবাড়ী শোক দিবসথথ হিসেবে ঘোষণা করে পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পালন করে আসছে। ফুলবাড়ী দিবসে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আসাত স্মৃতি স্তম্ভে সর্যদয়ের সাথে সাথে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, গণ জমায়েত, শহীদ বেদীতে পুষ্প মাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা।