রাজধানীতে জলজট এখনো কাটেনি

#
news image

রাজধানীতে টানা ভারী বৃষ্টি হয়ে সৃষ্ট জলজট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালের শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায়ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জমে থাকতে দেখা গেছে। এতে চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। কখন নামবে এই পানি তা নিয়ে উদ্বেগে বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে ছুটির দিনেও পানি সরাতে কাজ করতে দেখা গেছে ঢাকার দুই সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এদিকে, রাজধানীতে শুক্রবার প্রবল বর্ষণে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর পল্লবীতে দুজন, ভাসানটেক ও পুরান ঢাকায় একজন করে মারা গেছেন।

ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন বলছে, কম সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরতে সময় নিয়েছে। এছাড়াও নগরবাসীর অসচেতনতায় যত্রতত্র বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের কারণে নর্দমার ক্যাচপিটগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না বলেও বৃষ্টির পানি সরতে সময় লেগেছে। শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতেও ছিল থই থই পানি। সড়কে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে তৈরি হয় যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়ে রাজধানীবাসী।

সরেজমিনে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা গেছে, বুয়েট শহীদ স্মৃতি হলের ক্যান্টিন, প্রতিটি হলের নিজ তলা, বুয়েট সড়ক, চক বাজার সড়ক, তেজকুনি পাড়া, বংশাল, লালবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ, মুগদা হাসপাতালের সড়কের সামনে, কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনের সড়ক, জুরাইন মিস্টির গলি, জুরাইন নতুন রাস্তা, গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন সড়ক, আলম বাগ, মাতুয়াইল মেডিকেল রোড, রাজার বাগসহ অলিগলিতে পানি জমে রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় লোকজন। মুগদা হাসপাতাল ও কমলাপুরের সামনে পানি জমে থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ট্রেনের যাত্রী ও হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারি, রোগী ও তাদের স্বজনদের।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক থেকে একটু এগোলেই মুগদা, মানিকনগর ও গোপীবাগের একই অবস্থা। শনিবার সকালেও জলজটের দুর্ভোগে অফিসে আসতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন কর্মজীবীরা। গত বছরের জুলাইয়েও বৃষ্টিতে ডুবেছিল ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ। এবারও সেই একই অবস্থা। শুক্রবারের বৃষ্টিতে লেকের পানি বেড়ে তলিয়ে আছে মঞ্চ ও পায়ে হাঁটার পথ। গভীর রাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে সকালে পানি কমেছে। শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পানিতে থই থই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের সামনে রাস্তা, কার্জন হল এলাকা, এছাড়া পানিতে ডুবে আছে লালবাগের বক্সিবাজার ও খাজে দেওয়ান এলাকা।একদিন পরও সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নামেনি

এদিকে শনিবার দুপুরে দেখা যায়, বৃষ্টি থামার পর ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এলাকা পানির নিচে। এর মধ্যেও জরুরি কাজ সারতে বাসা থেকে বের হচ্ছেন নগরবাসী। চলাচল করতে হচ্ছে নর্দমা থেকে উঠে আসা পানি ভেঙে। জলাবদ্ধতায় নিউ মার্কেটের অধিকাংশ দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। সকালে ভেজা কাপড়, ম্যাট্রেস, পর্দাসহ অন্যান্য সামগ্রী রোদে শুকাতে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাম উদ্দীন চিশতী বলেন, ‘মূল ঝামেলাটা আসলে আমাদের অবকাঠামো ও নগরায়ণটা এই প্রকৃতি বিবেচনা করে হয়নি। আমাদের এখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনা করে এই অবকাঠামো ও নগরায়ণটা হয়নি। আমাদের ব্যবস্থাটা হয়ে গেছে পুরোপুরি কংক্রিটের ড্রেন নির্ভর। কিন্তু আমাদের জন্য এই পানি সরানোর কাজটা খুব সহজেই করার মতো। নগরায়ণটা এমনভাবে হয়েছে, যাতে এই কাজ বেশ জটিল হয়ে গেছে।’

এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এখানে যেসব খাল ছিল সবগুলোই কিন্তু আমরা অবাধে ভরাট করছি। নিচু জায়গাগুলো অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। বাকি খালে কী থাকে? এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রদর্শনী করেছিল। তাতে দেখা যায়, খালে জুতা থেকে শুরু করে বিছানা-বালিশ-তোষক, সবই পাওয়া গেছে। আসলে আমাদেরকে এই দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টাতে হবে। শুধু আরও ড্রেন বানিয়ে, নতুন প্রকল্প করে এই সমস্যা আসলে সমাধান করা যাবে না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (প্রনিক) মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, কম সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরতে সময় নিয়েছে।

শনিবার বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার পর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাদসিক গৃহিত সামষ্টিক কার্যক্রম এবং সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি নিয়ে গণমাধ্যমকে মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে সময়ে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপরেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এটি স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অনেক বেশি। একইসাথে আমরা দেখেছি, নর্দমাগুলোর ৫০ ফুট অন্তর অন্তর যে ক্যাচপিট রয়েছে সেগুলো ঠিক মতো পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। নগরবাসী অভ্যাসগত কারণে যত্রতত্র পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ফেলছে। বৃষ্টি হলে সেগুলো ক্যাচপিটে গিয়ে জমা হয়। আমরা লোকবল দিয়ে একদিকে পরিষ্কার করছি আবার অন্যদিকে সেগুলো আটকে যাচ্ছে। ফলে, পানি সরতে দেরি হয়েছে। আর পানি সরতে বিলম্ব হলেই স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল পেতে আমি নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানাই।

নদ-নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্লুইস গেটগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় পানি সরতে বিলম্ব হয়েছে উল্লেখ করে ঢাদসিক প্রনিক বলেন, পানি সরে যাওয়ার জন্য স্লুইস গেটগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ২০২১ সালে ৫৫টি স্লইস গেইট ও রেগুলেটর পেয়েছি। এরমধ্যে ৩৭টি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এবং বাকী ১৮টি কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত। আমরা সব স্লুইস গেট সচল করেছি। কিন্তু সারাদেশে অতি বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা শহর ঘিরে চারপাশের যে নদ-নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্লুইস গেট দিয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিও পানি সরতে বিলম্ব হওয়ার আরেকটি প্রাকৃতিক কারণ।

ধোলাইখাল ও কমলাপুর পানির পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের হিসেব তুলে ধরে ঢাদসিক প্রনিক বলেন, আমাদের কমলাপুরের টিটি পাড়া ও ধোলাইখাল পাম্প স্টেশনের ছোট-বড় ৭টি পাম্প মেশিন পানি নিষ্কাশন করছে। শুধু ধোলাইখাল ও টিটি পাড়া পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা হতে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ে ১৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ লিটার পানি অপসারণ করা হয়েছে।

এ সময় তিনি নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকা এবং কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও গ্রীন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে জানিয়ে বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় পানি নিষ্কাশনের আউটলেট নিরাপত্তাজনিত কারণে বিজিবি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার পর আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে নতুন করে নর্দমা লাইন স্থাপনে অনাপত্তি পেয়েছি। সেটির দরপত্র শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। সেটি সম্পন্ন হলে নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তাছাড়া গ্রীন রোড, কলাবাগানসহ সংলগ্ন এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এভাবে সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সুরাহা দেওয়া সম্ভব হবে না।

নাগরিক প্রতিবেদক

১৫ জুলাই, ২০২৪,  12:36 PM

news image

রাজধানীতে টানা ভারী বৃষ্টি হয়ে সৃষ্ট জলজট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালের শুরু হওয়া বৃষ্টির পানি শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায়ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জমে থাকতে দেখা গেছে। এতে চলাচলে বেড়েছে ভোগান্তি। কখন নামবে এই পানি তা নিয়ে উদ্বেগে বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে ছুটির দিনেও পানি সরাতে কাজ করতে দেখা গেছে ঢাকার দুই সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এদিকে, রাজধানীতে শুক্রবার প্রবল বর্ষণে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পৃথক ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর পল্লবীতে দুজন, ভাসানটেক ও পুরান ঢাকায় একজন করে মারা গেছেন।

ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন বলছে, কম সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরতে সময় নিয়েছে। এছাড়াও নগরবাসীর অসচেতনতায় যত্রতত্র বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের কারণে নর্দমার ক্যাচপিটগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না বলেও বৃষ্টির পানি সরতে সময় লেগেছে। শুক্রবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। সড়কের পাশাপাশি ফুটপাতেও ছিল থই থই পানি। সড়কে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে তৈরি হয় যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়ে রাজধানীবাসী।

সরেজমিনে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা গেছে, বুয়েট শহীদ স্মৃতি হলের ক্যান্টিন, প্রতিটি হলের নিজ তলা, বুয়েট সড়ক, চক বাজার সড়ক, তেজকুনি পাড়া, বংশাল, লালবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠ, মুগদা হাসপাতালের সড়কের সামনে, কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনের সড়ক, জুরাইন মিস্টির গলি, জুরাইন নতুন রাস্তা, গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন সড়ক, আলম বাগ, মাতুয়াইল মেডিকেল রোড, রাজার বাগসহ অলিগলিতে পানি জমে রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় লোকজন। মুগদা হাসপাতাল ও কমলাপুরের সামনে পানি জমে থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ট্রেনের যাত্রী ও হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারি, রোগী ও তাদের স্বজনদের।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক থেকে একটু এগোলেই মুগদা, মানিকনগর ও গোপীবাগের একই অবস্থা। শনিবার সকালেও জলজটের দুর্ভোগে অফিসে আসতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন কর্মজীবীরা। গত বছরের জুলাইয়েও বৃষ্টিতে ডুবেছিল ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ। এবারও সেই একই অবস্থা। শুক্রবারের বৃষ্টিতে লেকের পানি বেড়ে তলিয়ে আছে মঞ্চ ও পায়ে হাঁটার পথ। গভীর রাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে সকালে পানি কমেছে। শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পানিতে থই থই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের সামনে রাস্তা, কার্জন হল এলাকা, এছাড়া পানিতে ডুবে আছে লালবাগের বক্সিবাজার ও খাজে দেওয়ান এলাকা।একদিন পরও সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানি নামেনি

এদিকে শনিবার দুপুরে দেখা যায়, বৃষ্টি থামার পর ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এলাকা পানির নিচে। এর মধ্যেও জরুরি কাজ সারতে বাসা থেকে বের হচ্ছেন নগরবাসী। চলাচল করতে হচ্ছে নর্দমা থেকে উঠে আসা পানি ভেঙে। জলাবদ্ধতায় নিউ মার্কেটের অধিকাংশ দোকানের জিনিসপত্র ভিজে গেছে। সকালে ভেজা কাপড়, ম্যাট্রেস, পর্দাসহ অন্যান্য সামগ্রী রোদে শুকাতে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাম উদ্দীন চিশতী বলেন, ‘মূল ঝামেলাটা আসলে আমাদের অবকাঠামো ও নগরায়ণটা এই প্রকৃতি বিবেচনা করে হয়নি। আমাদের এখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনা করে এই অবকাঠামো ও নগরায়ণটা হয়নি। আমাদের ব্যবস্থাটা হয়ে গেছে পুরোপুরি কংক্রিটের ড্রেন নির্ভর। কিন্তু আমাদের জন্য এই পানি সরানোর কাজটা খুব সহজেই করার মতো। নগরায়ণটা এমনভাবে হয়েছে, যাতে এই কাজ বেশ জটিল হয়ে গেছে।’

এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘এখানে যেসব খাল ছিল সবগুলোই কিন্তু আমরা অবাধে ভরাট করছি। নিচু জায়গাগুলো অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। বাকি খালে কী থাকে? এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রদর্শনী করেছিল। তাতে দেখা যায়, খালে জুতা থেকে শুরু করে বিছানা-বালিশ-তোষক, সবই পাওয়া গেছে। আসলে আমাদেরকে এই দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টাতে হবে। শুধু আরও ড্রেন বানিয়ে, নতুন প্রকল্প করে এই সমস্যা আসলে সমাধান করা যাবে না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (প্রনিক) মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, কম সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পানি সরতে সময় নিয়েছে।

শনিবার বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার পর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাদসিক গৃহিত সামষ্টিক কার্যক্রম এবং সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গা ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি নিয়ে গণমাধ্যমকে মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে সময়ে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরপরেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। এটি স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অনেক বেশি। একইসাথে আমরা দেখেছি, নর্দমাগুলোর ৫০ ফুট অন্তর অন্তর যে ক্যাচপিট রয়েছে সেগুলো ঠিক মতো পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। নগরবাসী অভ্যাসগত কারণে যত্রতত্র পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ফেলছে। বৃষ্টি হলে সেগুলো ক্যাচপিটে গিয়ে জমা হয়। আমরা লোকবল দিয়ে একদিকে পরিষ্কার করছি আবার অন্যদিকে সেগুলো আটকে যাচ্ছে। ফলে, পানি সরতে দেরি হয়েছে। আর পানি সরতে বিলম্ব হলেই স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল পেতে আমি নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানাই।

নদ-নদীর পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় স্লুইস গেটগুলোও সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় পানি সরতে বিলম্ব হয়েছে উল্লেখ করে ঢাদসিক প্রনিক বলেন, পানি সরে যাওয়ার জন্য স্লুইস গেটগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ২০২১ সালে ৫৫টি স্লইস গেইট ও রেগুলেটর পেয়েছি। এরমধ্যে ৩৭টি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এবং বাকী ১৮টি কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত। আমরা সব স্লুইস গেট সচল করেছি। কিন্তু সারাদেশে অতি বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকা শহর ঘিরে চারপাশের যে নদ-নদীগুলো রয়েছে সেগুলোর পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্লুইস গেট দিয়ে সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিও পানি সরতে বিলম্ব হওয়ার আরেকটি প্রাকৃতিক কারণ।

ধোলাইখাল ও কমলাপুর পানির পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের হিসেব তুলে ধরে ঢাদসিক প্রনিক বলেন, আমাদের কমলাপুরের টিটি পাড়া ও ধোলাইখাল পাম্প স্টেশনের ছোট-বড় ৭টি পাম্প মেশিন পানি নিষ্কাশন করছে। শুধু ধোলাইখাল ও টিটি পাড়া পাম্প স্টেশনের মাধ্যমে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা হতে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত সময়ে ১৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ লিটার পানি অপসারণ করা হয়েছে।

এ সময় তিনি নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকা এবং কলাবাগান, কাঁঠালবাগান ও গ্রীন রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে জানিয়ে বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় পানি নিষ্কাশনের আউটলেট নিরাপত্তাজনিত কারণে বিজিবি বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার পর আমরা পিলখানার ভেতর দিয়ে নতুন করে নর্দমা লাইন স্থাপনে অনাপত্তি পেয়েছি। সেটির দরপত্র শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। সেটি সম্পন্ন হলে নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না। তাছাড়া গ্রীন রোড, কলাবাগানসহ সংলগ্ন এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এভাবে সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সুরাহা দেওয়া সম্ভব হবে না।