সংশোধিত রাজস্বেও পিছিয়ে এনবিআর

#
news image

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলার সংকট, শেয়ারবাজারে নিম্নগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি আয়ের গতি বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করেও রাজস্ব আয় পূরণ করতে পারছে না এনবিআর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ২১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সংস্কার করতে হবে। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে রাজস্ব আহরণ করে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সরকারে কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা হলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এ ছাড়া বছরের শুরুতেই এনবিআরকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। ফলে বছর শেষে তা অর্জিত হয় না। যদিও শেষ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ জন্য তারা বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ২১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। তবে আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে ৯ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ লাখ ৬৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৭৯ কোটি টাকা।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কারও হাতে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, তিনি এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জনের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে। এখানে বিশাল সংস্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর রাজিৈনতক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এনবিআরকে একটা অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়, যা কখনই এনবিআর অর্জন করতে পারে না। চলতি অর্থবছরও তাই হয়েছে। তিনি মনে করেন, এখন সময় পুরোপুরি অটোমেশন করার। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে এখন রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছেÑ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সিডিপি মনে করে, অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ৩৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ফলে মার্চ মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মার্চ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে আয়কর আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাক। অর্থাৎ মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। মূসক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। মূসক আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। এ মাসে মূসক আহরণে ঘাটতি ৭৩৫ কোটি টাকা। মার্চ মাসে শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। আয় হয়েছে ৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মার্চ মাসে শুল্ক আহরণ কম হয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।

নাগরিক প্রতিবেদন

২৩ এপ্রিল, ২০২৪,  5:10 PM

news image

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির চাপ, ডলার সংকট, শেয়ারবাজারে নিম্নগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খেলাপি ঋণ, রপ্তানি আয়ের গতি বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করেও রাজস্ব আয় পূরণ করতে পারছে না এনবিআর। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ২১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। এ জন্য সংস্কার করতে হবে। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে রাজস্ব আহরণ করে বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সরকারে কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা হলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এ ছাড়া বছরের শুরুতেই এনবিআরকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। ফলে বছর শেষে তা অর্জিত হয় না। যদিও শেষ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ জন্য তারা বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ২১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। তবে আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ২১ শতাংশ।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে ৯ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ লাখ ৬৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৭৯ কোটি টাকা।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কারও হাতে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যে, তিনি এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এবং অর্জনের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে। এখানে বিশাল সংস্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর রাজিৈনতক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এনবিআরকে একটা অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়, যা কখনই এনবিআর অর্জন করতে পারে না। চলতি অর্থবছরও তাই হয়েছে। তিনি মনে করেন, এখন সময় পুরোপুরি অটোমেশন করার। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে এখন রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছেÑ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সিডিপি মনে করে, অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে রাজস্ব আহরিত হয়েছে ৩৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। ফলে মার্চ মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মার্চ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে আয়কর আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাক। অর্থাৎ মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। মূসক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। মূসক আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। এ মাসে মূসক আহরণে ঘাটতি ৭৩৫ কোটি টাকা। মার্চ মাসে শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। আয় হয়েছে ৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মার্চ মাসে শুল্ক আহরণ কম হয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।