কমিয়েও অর্জিত হচ্ছে না রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা

#
news image

প্রতিবছর বাজেটের আকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ানো হয় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। তবে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে কমানো হয় লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু তারপরও সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও থাকে অধরা। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতিতে থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই ঘাটতি ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থবছর শেষে ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ জন্য তাদের পরামর্শ বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এই সময়ে আহরিত হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এই সময়ে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে এনবিআর পিছিয়ে রয়েছে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে ৮ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এমন বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করেছে অর্থ বিভাগ। এরপরও এই লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাসী বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চলতি অর্থবছর শেষে বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, চাপাচাপি করে খুব একটা লাভ হবে না। অর্থবছর শেষে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতে পারে। ফলে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব নয়। এমনিতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি। এ ছাড়া এনবিআর গত এক-দুই বছরে এমন কোনো সংস্কার করেনি, যা রাজস্ব আদায় বাড়াতে সহায়তা করবে।

কম রাজস্ব আয়ে কোনো দেশ চলতে পারে না মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। খরচের সক্ষমতা কমছে। তিনি বলেন, এখন সময় রাজস্ব আয় পুরোপুরি অটোমেশন করার। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে এখন রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অটোমেশন করতে হবে। জনবল কমাতে হবে। সেবার মান বাড়াতে হবে।

এদিকে গত ৬ মাসের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সিডিপি মনে করে, অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।

নাগরিক প্রতিবেদন

২৫ মার্চ, ২০২৪,  1:10 PM

news image

প্রতিবছর বাজেটের আকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ানো হয় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। তবে অর্থবছর শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে কমানো হয় লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু তারপরও সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও থাকে অধরা। চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতিতে থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই ঘাটতি ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থবছর শেষে ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ জন্য তাদের পরামর্শ বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এই সময়ে আহরিত হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এই সময়ে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে এনবিআর পিছিয়ে রয়েছে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুসারে ৮ মাসে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৭২ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৮৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা। শুল্ক আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নিম্ন ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স নিচের দিকে। এমন বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করেছে অর্থ বিভাগ। এরপরও এই লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাসী বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চলতি অর্থবছর শেষে বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, চাপাচাপি করে খুব একটা লাভ হবে না। অর্থবছর শেষে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতে পারে। ফলে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব নয়। এমনিতে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতি। এ ছাড়া এনবিআর গত এক-দুই বছরে এমন কোনো সংস্কার করেনি, যা রাজস্ব আদায় বাড়াতে সহায়তা করবে।

কম রাজস্ব আয়ে কোনো দেশ চলতে পারে না মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এতে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। খরচের সক্ষমতা কমছে। তিনি বলেন, এখন সময় রাজস্ব আয় পুরোপুরি অটোমেশন করার। ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি দিয়ে এখন রাজস্ব আহরণ সম্ভব নয়। তথ্যের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অটোমেশন করতে হবে। জনবল কমাতে হবে। সেবার মান বাড়াতে হবে।

এদিকে গত ৬ মাসের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পর্যবেক্ষণ বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। সিডিপি মনে করে, অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে।