ক্রেতাশূন্য বেইলি রোডের রেস্তোরাঁগুলো

#
news image

প্রতি বছর রমজানে রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পরিচিত নাম ‘ক্যাপিটাল ইফতার বাজার’। রমজানের প্রথম দিন থেকে যেখানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, সেখানে এবার একরকম ক্রেতার খরা যাচ্ছে। শুধু ক্যাপিটালে নয়, বেইলি রোডের প্রায় সব রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান ও জুসবারে একই চিত্র। রোজার প্রথম দিনে রেস্তোরাঁগুলো মুখরোচক নানা প্রকার ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার দেখা মিলছে খুবই কম। অলস সময় পার করতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে এমনটাই দেখা গেছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের সাততলা ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর স্থবিরতা নেমে এসেছে গোটা এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। এখানকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা জানান, মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর থেকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। যেগুলো সচল রয়েছে, সেগুলো ক্রেতাখরায় ভুগছে। এ অবস্থায় এবারের রোজায় বড় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কথা হলে ক্যাপিটালের এক

বিক্রয়কর্মী মো. জাকির মোল্লা বলেন, ‘ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবার ইফতারির বাজারে আমাদের আইটেমের সংখ্যা আগের বছরগুলোর চেয়ে অর্ধেক কমানো হয়েছে। খুব পরিচিত আইটেমগুলোই কেবল রাখা হয়েছে। তারপরও বিক্রি নেই। বিকাল ৩টা থেকে বিক্রি শুরু করে দুই ঘণ্টায় যৎসামান্য বিক্রি করতে পেরেছি।’

আইটেমের সংখ্যা কমিয়ে চার ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে সুইস ক্যাফেও। খাবারের শেলফগুলো প্রায় ফাঁকা। এখানকার কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ইফতারের সময় আমাদের প্রায় ২০০ আইটেম থাকত। এখন ব্যবসা তলানিতে ঠেকায় আইটেমের সংখ্যা ৫০টিতে নামাতে বাধ্য হয়েছি। ক্রেতা নেই বললেই চলে। তার ওপর দিন-রাত অভিযানের আতঙ্ক কাজ করে।’

এদিকে বেইলি রোডের অনেক নামিদামি রেস্তোরাঁয় এখনো তালা ঝুলছে। বিগত বছরগুলোতে রোজার সময় এগুলো ক্রেতা সমাগমে মুখরিত ছিল। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম রমজানে এখানকার অন্যতম পরিচিত প্রতিষ্ঠান নবাবী ভোজ ও সুলতানস ডাইন বন্ধ রয়েছে। একইভাবে আল মদিনা প্যালেসের রোস্টার ক্যাফে ও পিজ্জা মাস্তানের মতো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

কথা হলে নবাবী ভোজের নির্বাহী পরিচালক বিপু চৌধুরী বলেন, ‘এখানকার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হওয়া সত্ত্বেও প্রথম রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের দুটি শাখা বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ী হিসেবে এটা খুব দুঃখজনক ও হতাশার বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসার জন্য আমাদের ১২টি সনদ থাকার পরও অগ্নিঝুঁকির ইস্যুতে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে। বলা হলো ‘ফায়ার এক্সিট’ বানাতে হবে। আমরা কাজ শুরু করলাম। তারপরও সময় না দিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো। কী করলে ব্যবসা দ্রুত চালু হবে সেটাও বলা হচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে আমাদের। বেইলি রোডের দুটি শাখা বন্ধ থাকায় দৈনিক বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধান পাচ্ছি না।’

প্যারাডাইস অ্যান্ড ফ্রুট জুসবারের কর্ণধার মো. আব্দুল লতিফও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা যা বলা হচ্ছে সব মানতেছি। তারপরও সারাদিন প্রশাসনের একেক দল এসে একেকভাবে হয়রানি করছে। অভিযান আতঙ্কে থাকতে হয়। তারা এলে একটা না একটা দোষ ধরে জরিমানা করে। এভাবে হয়রানি চললে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’

একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে- এমন দাবি করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, এ খাতে উদ্যোক্তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের জীবিকাও জড়িত। কিন্তু বর্তমানে বেইলি রোডসহ পুরো ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তাতে সবাই আতঙ্কে রয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করে দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আল মদিনা প্যালেসের নিচতলায় খোলা রয়েছে কেক টাউন ও বেইলি বার বি কিউ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। কথা হলে আক্ষেপ করে কেক টাউনের ম্যানেজার মো. সায়ান্তো বলেন, প্রথম রোজায় সবখানে বাড়তি ইফতার আয়োজন থাকে। প্রতিবার প্রথম রোজায় অনেক ক্রেতা পাওয়া যায়। ভালো ব্যবসা হয়। এবার ব্যবসা একেবারেই নেই।

পাশের বেইলি বার বি কিউয়ের ম্যানেজার সুরঞ্জিৎ জয়ধর বলেন, ‘আগুনের ঘটনার পর এই এলাকায় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসায় ধস নেমেছে। আগের চেয়ে এবার রোজায় বিনিয়োগ কমেছে। আইটেম কমাতে হয়েছে। আমাদেরও একই অবস্থা। রোজায় এবার ব্যবসাই হবে না হয়তো।’

নাগরিক প্রতিবেদন

১৩ মার্চ, ২০২৪,  12:20 PM

news image

প্রতি বছর রমজানে রাজধানীর বেইলি রোডের ইফতারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পরিচিত নাম ‘ক্যাপিটাল ইফতার বাজার’। রমজানের প্রথম দিন থেকে যেখানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, সেখানে এবার একরকম ক্রেতার খরা যাচ্ছে। শুধু ক্যাপিটালে নয়, বেইলি রোডের প্রায় সব রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান ও জুসবারে একই চিত্র। রোজার প্রথম দিনে রেস্তোরাঁগুলো মুখরোচক নানা প্রকার ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার দেখা মিলছে খুবই কম। অলস সময় পার করতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে এমনটাই দেখা গেছে।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের সাততলা ভবনে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর স্থবিরতা নেমে এসেছে গোটা এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়। এখানকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা জানান, মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর থেকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যেই অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ সিলগালা করেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। যেগুলো সচল রয়েছে, সেগুলো ক্রেতাখরায় ভুগছে। এ অবস্থায় এবারের রোজায় বড় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কথা হলে ক্যাপিটালের এক

বিক্রয়কর্মী মো. জাকির মোল্লা বলেন, ‘ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবার ইফতারির বাজারে আমাদের আইটেমের সংখ্যা আগের বছরগুলোর চেয়ে অর্ধেক কমানো হয়েছে। খুব পরিচিত আইটেমগুলোই কেবল রাখা হয়েছে। তারপরও বিক্রি নেই। বিকাল ৩টা থেকে বিক্রি শুরু করে দুই ঘণ্টায় যৎসামান্য বিক্রি করতে পেরেছি।’

আইটেমের সংখ্যা কমিয়ে চার ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে সুইস ক্যাফেও। খাবারের শেলফগুলো প্রায় ফাঁকা। এখানকার কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে ইফতারের সময় আমাদের প্রায় ২০০ আইটেম থাকত। এখন ব্যবসা তলানিতে ঠেকায় আইটেমের সংখ্যা ৫০টিতে নামাতে বাধ্য হয়েছি। ক্রেতা নেই বললেই চলে। তার ওপর দিন-রাত অভিযানের আতঙ্ক কাজ করে।’

এদিকে বেইলি রোডের অনেক নামিদামি রেস্তোরাঁয় এখনো তালা ঝুলছে। বিগত বছরগুলোতে রোজার সময় এগুলো ক্রেতা সমাগমে মুখরিত ছিল। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম রমজানে এখানকার অন্যতম পরিচিত প্রতিষ্ঠান নবাবী ভোজ ও সুলতানস ডাইন বন্ধ রয়েছে। একইভাবে আল মদিনা প্যালেসের রোস্টার ক্যাফে ও পিজ্জা মাস্তানের মতো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

কথা হলে নবাবী ভোজের নির্বাহী পরিচালক বিপু চৌধুরী বলেন, ‘এখানকার অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হওয়া সত্ত্বেও প্রথম রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের দুটি শাখা বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ী হিসেবে এটা খুব দুঃখজনক ও হতাশার বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসার জন্য আমাদের ১২টি সনদ থাকার পরও অগ্নিঝুঁকির ইস্যুতে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা হয়েছে। বলা হলো ‘ফায়ার এক্সিট’ বানাতে হবে। আমরা কাজ শুরু করলাম। তারপরও সময় না দিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো। কী করলে ব্যবসা দ্রুত চালু হবে সেটাও বলা হচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে আমাদের। বেইলি রোডের দুটি শাখা বন্ধ থাকায় দৈনিক বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অথচ কোনো সমাধান পাচ্ছি না।’

প্যারাডাইস অ্যান্ড ফ্রুট জুসবারের কর্ণধার মো. আব্দুল লতিফও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা যা বলা হচ্ছে সব মানতেছি। তারপরও সারাদিন প্রশাসনের একেক দল এসে একেকভাবে হয়রানি করছে। অভিযান আতঙ্কে থাকতে হয়। তারা এলে একটা না একটা দোষ ধরে জরিমানা করে। এভাবে হয়রানি চললে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’

একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢালাওভাবে রেস্তোরাঁ বন্ধ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে- এমন দাবি করেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, এ খাতে উদ্যোক্তাদের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের জীবিকাও জড়িত। কিন্তু বর্তমানে বেইলি রোডসহ পুরো ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তাতে সবাই আতঙ্কে রয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করে দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

আল মদিনা প্যালেসের নিচতলায় খোলা রয়েছে কেক টাউন ও বেইলি বার বি কিউ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। কথা হলে আক্ষেপ করে কেক টাউনের ম্যানেজার মো. সায়ান্তো বলেন, প্রথম রোজায় সবখানে বাড়তি ইফতার আয়োজন থাকে। প্রতিবার প্রথম রোজায় অনেক ক্রেতা পাওয়া যায়। ভালো ব্যবসা হয়। এবার ব্যবসা একেবারেই নেই।

পাশের বেইলি বার বি কিউয়ের ম্যানেজার সুরঞ্জিৎ জয়ধর বলেন, ‘আগুনের ঘটনার পর এই এলাকায় রেস্তোরাঁগুলোর ব্যবসায় ধস নেমেছে। আগের চেয়ে এবার রোজায় বিনিয়োগ কমেছে। আইটেম কমাতে হয়েছে। আমাদেরও একই অবস্থা। রোজায় এবার ব্যবসাই হবে না হয়তো।’