অভিযান আতঙ্ক, ধস নেমেছে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়

#
news image

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।  রবিবারের মত সোম ও আজ মঙ্গলবারও পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বা যথাযথ অনুমোদন না থাকার অভিযোগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে কিছু রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেয়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে আটকও করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান আতঙ্কে অনেক মালিক স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের রেস্টুরেন্ট। পুলিশ বলছে, ঝকঝকে তকতকে এসব রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা কতটা ভঙ্গুর তা আবারো সামনে এসেছে, বেইলি রোড ট্রাজেডির পর। এই ঘটনার পরই সাড়াশিঁ অভিযানে নামে প্রশাসন। যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

অভিযানে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে থাকা রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, কোনো রেস্টুরেন্টের সিঁড়িতে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনোটিতে রান্নার সামগ্রী। আবার কোনোটির নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। কোনোটির নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি। পুলিশ বলছে, ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকি নিয়ে চলছে এসব খাবারের রেস্টুরেন্ট। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ও জরুরি বহির্গমনের পথ। এখানে এমনও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে রান্নাঘর থেকে অন্তত তিনটি দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে আসতে হয়। সেখানে আগুন লাগলে কেউ বের হয়ে আসতে পারবেন না। রেস্তোরাঁর অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপনসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিশেষ গুরুত্বের কথা বলেছেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। তিনি বলেন, বিপজ্জনক ক্যাটগরিতে ভাগ করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান করতে হবে। যেমন-ক্যামিকেল, গোডাউন আলাদা আলাদা করতে হবে। এতে ঝুঁকি কমবে।

এদিকে রাজউক জানিয়েছে, ‘রেস্তোরাঁ পাড়া’ হিসেবে পরিচিত বেইলি রোডের ভবনগুলোতে নেই রেস্টুরেন্ট দেওয়ার অনুমোদন। রেস্টুরেন্ট করার ক্ষেত্রে ভবনগুলোতে যতোটুকু সেফটি-সিকিউরিটি থাকা প্রয়োজন, এগুলোতে তার কোনোটিই নেই।  সেখানে প্রায় সব ভবনেই চলছে অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ ব্যবসা। একটি ভবনে অনুমোদনহীন নকশায় বেজমেন্টে খোলা হয়েছে নবাবী ভোজ নামের রেস্তোরাঁ। রাজধানীতে নকশা অমান্য করা এমন ভবন রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সব বিষয়ে অতীতে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও ভবন মালিকরা কর্ণপাত করেননি। রাজধানীতে নকশার অমান্য করা এমন প্রায় ৪ লাখ ভবনে চলছে হোটেল রেস্ট্রুরেন্ট আর দোকান পাটের মত নানা ধরনের ব্যবসা। এতো বিপুল ভবনে তদারকি করাটা কঠিন হলেও এবার আর কোনো অবৈধ ভবন রাখা হবেনা।

নবাবী ভোজে রাজউকের নকশায় অনুমতি না থাকলেও সিটি করপোরেশন, ফয়ার সার্ভিস, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কল কারখানা অধিদপ্তরসহ সবকটি প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনহীন বেজমেন্টে রেস্ট্রুরেন্টের অনুমতি দিয়েছে। আর এখানেই উঠেছে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, সারাদেশে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অধীনে নিবন্ধিত রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট আছে সাড়ে চার হাজারের মতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর অবৈধভাবে পরিচালিত বাণিজ্যিক ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কিনা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি রয়েছে কিনা, নিরাপদ স্থানে রেখে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, এ ছাড়াও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এবং ঝুঁকির বিষয়টি নজরদারি করা হয়। পুলিশের অভিযান চলাকালে আটক করা হয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁর বেশ কয়েকজনকে। তাদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রয়েছেন।

নাগরিক প্রতিবেদন

০৫ মার্চ, ২০২৪,  7:08 PM

news image

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।  রবিবারের মত সোম ও আজ মঙ্গলবারও পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বা যথাযথ অনুমোদন না থাকার অভিযোগে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে কিছু রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেয়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে আটকও করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান আতঙ্কে অনেক মালিক স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের রেস্টুরেন্ট। পুলিশ বলছে, ঝকঝকে তকতকে এসব রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা কতটা ভঙ্গুর তা আবারো সামনে এসেছে, বেইলি রোড ট্রাজেডির পর। এই ঘটনার পরই সাড়াশিঁ অভিযানে নামে প্রশাসন। যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

অভিযানে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে থাকা রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, কোনো রেস্টুরেন্টের সিঁড়িতে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, কোনোটিতে রান্নার সামগ্রী। আবার কোনোটির নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। কোনোটির নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি। পুলিশ বলছে, ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকি নিয়ে চলছে এসব খাবারের রেস্টুরেন্ট। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ও জরুরি বহির্গমনের পথ। এখানে এমনও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে রান্নাঘর থেকে অন্তত তিনটি দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে আসতে হয়। সেখানে আগুন লাগলে কেউ বের হয়ে আসতে পারবেন না। রেস্তোরাঁর অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপনসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিশেষ গুরুত্বের কথা বলেছেন স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। তিনি বলেন, বিপজ্জনক ক্যাটগরিতে ভাগ করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান করতে হবে। যেমন-ক্যামিকেল, গোডাউন আলাদা আলাদা করতে হবে। এতে ঝুঁকি কমবে।

এদিকে রাজউক জানিয়েছে, ‘রেস্তোরাঁ পাড়া’ হিসেবে পরিচিত বেইলি রোডের ভবনগুলোতে নেই রেস্টুরেন্ট দেওয়ার অনুমোদন। রেস্টুরেন্ট করার ক্ষেত্রে ভবনগুলোতে যতোটুকু সেফটি-সিকিউরিটি থাকা প্রয়োজন, এগুলোতে তার কোনোটিই নেই।  সেখানে প্রায় সব ভবনেই চলছে অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ ব্যবসা। একটি ভবনে অনুমোদনহীন নকশায় বেজমেন্টে খোলা হয়েছে নবাবী ভোজ নামের রেস্তোরাঁ। রাজধানীতে নকশা অমান্য করা এমন ভবন রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ সব বিষয়ে অতীতে একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও ভবন মালিকরা কর্ণপাত করেননি। রাজধানীতে নকশার অমান্য করা এমন প্রায় ৪ লাখ ভবনে চলছে হোটেল রেস্ট্রুরেন্ট আর দোকান পাটের মত নানা ধরনের ব্যবসা। এতো বিপুল ভবনে তদারকি করাটা কঠিন হলেও এবার আর কোনো অবৈধ ভবন রাখা হবেনা।

নবাবী ভোজে রাজউকের নকশায় অনুমতি না থাকলেও সিটি করপোরেশন, ফয়ার সার্ভিস, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, কল কারখানা অধিদপ্তরসহ সবকটি প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনহীন বেজমেন্টে রেস্ট্রুরেন্টের অনুমতি দিয়েছে। আর এখানেই উঠেছে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার প্রশ্ন। প্রসঙ্গত, সারাদেশে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির অধীনে নিবন্ধিত রেস্তোরাঁ, রেস্টুরেন্ট আছে সাড়ে চার হাজারের মতো। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর অবৈধভাবে পরিচালিত বাণিজ্যিক ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কিনা, জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি রয়েছে কিনা, নিরাপদ স্থানে রেখে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, এ ছাড়াও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এবং ঝুঁকির বিষয়টি নজরদারি করা হয়। পুলিশের অভিযান চলাকালে আটক করা হয় বিভিন্ন রেস্তোরাঁর বেশ কয়েকজনকে। তাদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রয়েছেন।